বর্ধমান রোডে বাইক আরোহীকে পিষে দেওয়া স্কুলবাস চালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃত চালককে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তবু আশ্বস্ত হতে পারছেন না মৃত বাইক আরোহীর পরিবার এবং পড়শিরা। এরপরেও বিধি ভেঙে স্কুলবাসের যাতায়াতে রাশা টানা সম্ভব হবে, এই প্রশ্নই ঘিরে রেখেছে শিলিগুড়ির অশোকনগরের বাসিন্দাদের।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে স্কুলবাসের ধাক্কায় অশোকনগরের বাসিন্দা দীপঙ্কর বণিকের মৃত্যু হয়েছে। তরতাজা যুবককে হারিয়ে শোকের সঙ্গে ক্ষোভ ছড়িয়েছে এলাকায়। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, এ দিনও বেশ কয়েকটি স্কুলবাসকে বর্ধমান রোডে তিরবেগে যেতে দেখা গিয়েছে। এ দিন বিকেলে বর্ধমান রোডেই লেন ভেঙে উল্টো পথে ঢুকে যানজট পাকাতে দেখা গিয়েছে একটি স্কুলবাসকে। দুর্ঘটনার পরে পরিবহণ দফতরের তরফে অভিযানে কড়াকড়ি না করাতেই সংশয়ে ভুগছেন শহরের বাসিন্দারা।
মৃত দীপঙ্করের মা রমাদেবী এখনও শোকার্ত। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, ছেলের মৃত্যুর আঘাতে কথাও প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছে তাঁর। প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ না করলে এমন প্রাণহানি ঠেকানো যাবে না বলেই তাঁরা দাবি করলেন। দীপঙ্করের মা রমাদেবীর প্রশ্ন, ‘‘আমার তো যা ক্ষতি হওয়ার হয়েছে। এখনও কী প্রশাসন চোখ বুজে থাকবে?’’ দীপঙ্করের এক আত্মীয় আত্মীয়ের অভিযোগ, প্রশাসনের নজরদারিতে শিথিলতার সুযোগেই বিধিভঙ্গের প্রবণতা বেড়েছে। সম্প্রতি এক স্কুলবাস চালককে মদ্যপ অবস্থায় হাতেনাতে ধরে অভিভাবকরা পুলিশের হেফাজতে তুলে দিলেও কড়া পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ। অভিভাবকদের তরফে নির্দিষ্ট ভাবে লিখিত অভিযোগ করলেও তা নিয়ে তদন্তে দীর্ঘসূত্রতা চলছে বলে দাবি। এমনকী সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা উড়িয়েই শহরের রাস্তায় স্কুলবাস চলতে থাকলেও, দু’-একদিন অভিযান চালিয়ে থমকে যায়। এই শিথিলতার কারণেই কিছু স্কুলবাসের চলাচল নিয়ে অভিযোগের বহর বেড়েই চলছে দাবি দীপঙ্করের বাবা দুলালবাবুরও। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘প্রশাসন যদি কড়া হতো তবে কী প্রতিদিন শহরে প্রকাশ্যে এমন বিধিভঙ্গ চলতে পারত? প্রশিক্ষিত এবং দক্ষ চালকেরাই যদি সব স্কুলবাস চালাতেন, বাসগুলিও যদি যান্ত্রিক ভাবে যথাযথ থাকত, সহজে নিয়ন্ত্রণ হারানোর আশঙ্কাও থাকত না।’’
পরিবহণ দফতরের তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে কোনও শিথিলতা করা হয়নি। শিলিগুড়ির সব স্কুলবাসকে নিয়মের আওতায় আনতে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে তাদের দাবি। ইতিমধ্যে এক দফা বৈঠকও করেছেন জেলা পরিবহণ দফতরের আধিকারিকরা। ভোট গণনার পরে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা সহ অভিভাবক এবং বাস মালিকদের ডেকে বৈঠক হবে বলে জানিয়েছেন দার্জিলিং জেলার সহ পরিবহণ আধিকারিক (এআরটিও) নবীন অধিকারী। সূত্রের খবর, বৈঠকে দার্জিলিঙের জেলাশাসকও থাকতে পারেন। জেলা পরিবহণ বোর্ডের সদস্য মদন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘স্কুলবাসগুলিকে সমস্ত আইন মেনে ও ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা বজায় রেখেই চালাতে হবে। এ বিষয়ে বৈঠক হবে বলে সরকারি স্তরে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভোট গণনার পরেই বৈঠকের দিনক্ষণ জানিয়ে দেওয়া হবে।’’
স্কুলবাস মালিকদের সংগঠনের তরফে দাবি করা হয়েছে, বেশিরভাগ স্কুলবাসই নতুন। সেই বাসগুলিতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকায় থাকা যাবতীয় পরিকাঠামো রয়েছে। পুরোনো স্কুলবাসগুলিও বদলে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এ দিনও এক স্কুলবাস মালিক দাবি করে বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ খুব বেশিদিন আগের নয়। আমরা সেই নির্দেশ মানার প্রক্রিয়ায় রয়েছি। প্রশাসনকে আমাদের বক্তব্য জানিয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy