গত ২১ জুন থেকে যাবতীয় টিকা দেওয়ার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের। সে দিন টিকার দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘রেকর্ড’ করা হয়েছে বলেও সরকারের একাংশ দাবি করেছিলেন। কিন্তু রাজ্যে টিকার জোগান এবং টিকাকরণের চিত্র দিনকে দিন বেহাল হয়েছে বলেই দাবি স্বাস্থ্য দফতর ও ভুক্তভোগীদের। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, পরিস্থিতি এতটাই সঙ্গীন যে জুলাইয়ে যাঁদের দ্বিতীয় ডোজ় পাওয়ার কথা, তাঁদের অনেকেই সময়মতো তা পাবেন না বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এর ফলে গোটা রাজ্যের মতো উত্তরবঙ্গেও গোলমাল হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রশাসনের একাংশের। সঙ্ঘ নিজেরাও মনে করছে, কেন্দ্রের নেতাদের বুঝিয়ে রাজ্যে টিকা আনার ক্ষেত্রে রাজ্যস্তরের বিজেপি নেতারা ততটা পারদর্শী নন। সে জন্য তারা টিকাকরণ কর্মসূচির উপরে নজর রাখছে।
টিকার জোগানে এই ঘাটতি নিয়ে এর মধ্যেই রাজ্য ও কেন্দ্রের শাসকদলের মধ্যে চাপানউতোর শুরু হয়ে গিয়েছে। বুধবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, কেন্দ্র রাজ্যকে ঠিকমতো টিকা দিচ্ছে না। তার মধ্যেও রাজ্যে ২ কোটি ১৭ লক্ষ মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। বস্তুত, সরকারি পরিসংখ্যানে পশ্চিমবঙ্গ টিকাকরণে এতদিন একেবারে সামনের সারিতেই ছিল। কিন্তু এখন টিকার আকাল প্রথম তো বটেই, দ্বিতীয় ডোজ়ের উপরেও ছাপ ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা।
বিজেপির মুখপাত্র তথা দার্জিলিঙের সাংসদ রাজু বিস্তা অবশ্য তৃণমূলকে আক্রমণ করেই বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনের সময় বলেছিলেন, মানুষকে টিকা দেবেন। এখন জেতার পর বলছেন, কেন্দ্র দিক (আদতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কেন্দ্রীয় সরকার নতুন টিকা নীতি ঘোষণা করেছে)। কেন্দ্র দিচ্ছে। এখন মুখ্যমন্ত্রী নতুন গল্প বলছেন, টিকা পর্যাপ্ত নেই।’’ তাঁর বক্তব্য, রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। তিনি গুরুত্ব দিয়ে মানুষের জন্য কাজ করবেন, এটাই কাম্য। কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক নিখিলরঞ্জন দে-ও একই অভিযোগ করেছেন। মালদহ উত্তরের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু আবার বলেন, ‘‘ঠিক সময়ে জেলায় টিকা পৌঁছবে। এই নিয়ে জলঘোলা করে লাভ নেই।’’
উল্টো দিকে তৃণমূল নেতা গৌতম দেব বরাবরই কেন্দ্রের তরফে পর্যাপ্ত টিকা না পাঠানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সমস্ত ব্যবস্থাই করছে। কেন্দ্র কেন পর্যাপ্ত টিকা পাঠাতে পারছেন না, সেটা আগে দেখুন।’’ মালদহের তৃণমূল জেলা সভাপতি মৌসম নুর বলেন, ‘‘কেন্দ্রের কথা আর কাজের মধ্যে অনেক ফারাক।’’ এ দিন কেন্দ্রের তরফে পর্যাপ্ত টিকা সরবরাহ করার দাবির পাশাপাশি রাজ্যে শাসক দলের লোকজন টিকা নিয়ে অনিয়ম করছেন বলেও সরব হন শিলিগুড়ি প্রাক্তন বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য।
স্বাস্থ্য দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, টিকার জোগান পর্যাপ্ত নয়। সমস্ত জেলাশাসক, জেলাগুলোর মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী মঙ্গলবার চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, দ্বিতীয় ডোজ় যাতে সময়মতো বাসিন্দারা পান, তা দেখতে হবে। তিনি বলেন, ‘‘সব জেলাকেই এখন থেকে রোজ ৫০ শতাংশ টিকা দ্বিতীয় ডোজ়ের জন্য ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ় যাঁরা পাবেন, তাঁদের সময় মতো টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’’ নির্দিষ্ট পোর্টালের মাধ্যমে তাঁদের কাছে মেসেজ পাঠিয়ে প্রতিষেধকের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।