পুরসভার ট্যাঙ্ক থেকে জল নেওয়ার লাইনে হুড়োহুড়ি বাসিন্দাদের। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
চার দিন ধরে পানীয় জল সরবরাহ বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন শিলিগুড়ি শহরের বাসিন্দারা। ফুলবাড়িতে পুরসভার ‘ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’ থেকে শহরে জল সরবরাহ হয়। ফুলবাড়ি এলাকায় রাস্তা চওড়া করে এশিয়ান হাইওয়ের কাজের জন্য জল সরবরাহের লাইন সরানো হচ্ছে। তাতেই বিপত্তি দেখা দিয়েছে।
ওই কাজের জন্য দুই দিন জল বন্ধ রাখার কথা প্রথমে জানানো হলেও চার দিন ধরে জল মিলছে না। সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জারে জল বিক্রিতে কালো বাজারি হচ্ছে শহর জুড়েই। ২০/২৫ টাকা দিলে ২০ লিটারের জলের জার মেলে। এখন তা ৬০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত চড়া দামে ব্যবসায়ীদের একাংশ বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ। অনেক ক্ষেত্রে জারে যে জল দেওয়া হচ্ছে তা পরিস্রুত কি না প্রশ্ন রয়েছে অনেকেরই। অভিযোগ, কালো বাজারি ঠেকাতেও পুর কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী নয় বলে সমস্যা আরও বেড়েছে।
রবিবার সন্ধ্যা নাগাদ মেয়র অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ পাইপ লাইন মেরামতির কাজ শেষ হয়েছে। রাতের মধ্যেই জল বিভিন্ন ওয়ার্ডের জলাধারগুলিতে সরবরাহ করা হবে। সোমবার সকাল থেকেই জল সরবরাহ স্বাভাবিক হবে বলে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের তরফে জানানো হয়েছে।’’
পানীয় জলের পরিষেবা বন্ধ হয়ে পড়াকে হাতিয়ার করে পুরসভার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে তৃণমূল। রবিবার শহরের বাসিন্দা পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘মেয়র পরিষেবা দিতে ব্যর্থ। এ রকম সমস্যা আসতেই পারে। বিকল্প ব্যবস্থা পুরসভাকেই আগাম করতে হবে। উনি যদি মনে করেন সমস্যা নিয়ে কথা বলতে চান আমিও রাজি আছি।’’
এ দিন ২৭ নম্বর, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সিধু কানহু সরণিতে জলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে তৃণমূল। আগের দিনও পুরসভায় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তাঁদের কাউন্সিলররা।
পরিস্থিতি সামালাতে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে ফোন করে তাঁর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন মেয়র অশোক ভট্টাচার্য।
মেয়রের দাবি, ‘‘জল সরবরাহ বন্ধ রাখার পিছনে পুরসভার কোনও ভূমিকা নেই। ফুলবাড়ি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে জলাধারে জল সরবরাহের ব্যবস্থা করে জন স্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। তারা দুদিন সময় চেয়েছিল।’’ তিনি বলেন, ‘‘আমরা ৮-৯ সেপ্টেম্বর কাজ করতে বলেছিলাম। শনিবার তারা জানায় জল সরবরাহ চালু করতে গেলে পাইপের একটি সংযোগ ফেটে গিয়ে জল বার হতে শুরু করে। ফলে জল সরবরাহ চালু হয়নি। দফতরের মন্ত্রী সুব্রতবাবুকেও ফোন করেছিলাম। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ হচ্ছে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।’’
শিলিগুড়িতে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার ইন্দ্রজিৎ সেন বলেন, ‘‘শনিবার পাইপ ফাটার পর সারা রাত ধরেই কাজ হয়েছে। দ্রুত জল সরবরাহ চালু করার চেষ্টা চলছে।’’ এ দিন বিকেলেও কাজ শেষ না হওয়ায় জল সরবরাহ হয়নি। জল সরবরাহ বিভাগের মেয়র পারিষদ জয় চক্রবর্তী জানান, এ দিন পুরসভার ট্যাঙ্কিতে করে ফুলবাড়ি থেকে পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ করা হয় ১,৪,৫, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে একাংশে। পরিস্থির সুযোগে জল বিক্রিতে কালোবাজারি চললেও পুরসভা কেন চুপ হয়ে বসে রয়েছে?
মেয়রের যুক্তি, ‘‘কোনও ভাবেই যাতে কালোবাজারি না হয়, পুলিশকে জানানো হচ্ছে। পানীয় জলের দাম কোথাও বেশি নেওয়া হচ্ছে অভিযোগ মিললে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া হবে। কোনও ভাবেই কালোবাজারি বরদাস্ত করা হবে না।’’ বাস্তবে অবশ্য সে ব্যাপারে পুরসভার কোনও ভূমিকা দেখা যায়নি বলে বিরোধীদের অভিযোগ। বিরোধী দলনেতা নান্টু পাল, তৃণমূল কাউন্সিলর কৃষ্ণ পালরা জানান, ২০ লিটারের জার ২০০ টাকা দিয়েও লোকে এ দিন বাধ্য হয়ে কিনেছে।
বিরোধী দলনেতা নান্টু পাল বলেন, ‘‘সোমবার সকালে ৯ টার মধ্যে জল না এলে বাসিন্দাদের নিয়ে পুরসভায় মেয়রকে ঘেরাও করা হবে। যত ক্ষণ না জল সরবরাহ স্বাভাবিক হয় ঘেরাও চলবে।’’ শিলিগুড়ি পুরসভার কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা তথা ৩ নম্বর বরো কমিটির চেয়ারম্যান সুজয় ঘটক বলেন, ‘‘পুরসভার তরফে পরিস্থিতি বাসিন্দাদের জানানো দরকার ছিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy