অবসরপ্রাপ্ত রেল আধিকারিকের চিঠি পেয়ে কোচবিহারের বিভিন্ন সরকারি দফতরে বিদ্যুৎ অপচয় বন্ধে উদ্যোগী হল প্রশাসন। শহরের বিভিন্ন সরকারি দফতর চত্বরে দিনের বেলাতেও বিদ্যুতের আলোগুলি জ্বলে থাকে। এমনই অভিযোগ জানিয়ে সম্প্রতি সদর মহকুমা শাসক বিকাশ সাহাকে চিঠি দেন গোলবাগান এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত রেল আধিকারিক শেখর চক্রবর্তী। ওই চিঠি পাওয়ার পরে টনক নড়ে প্রশাসনের কর্তাদের। খোদ মহকুমা শাসক, শহরের ‘অফিস পাড়া’ হিসেবে পরিচিত সাগরদিঘি চত্বরে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির কর্তাদের চিঠি পাঠান।
প্রশাসন সূত্রের খবর, মোট ২১টি দফতরে ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে। কোচবিহারের সদর মহকুমা শাসক বিকাশ সাহা বলেন, “ প্রাতঃভ্রমণকারী ওই প্রবীণ নাগরিক বিদ্যুৎ অপচয় বন্ধের ব্যাপারে চিঠি দিয়ে নিঃসন্দেহে ভাল কাজ করেছেন। ওই চিঠির সূত্র ধরে বিভিন্ন দফতরের কর্তাদের প্রতিদিন সকাল পাঁচটার মধ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকার বিদ্যুতের আলো বন্ধ করার আর্জি জানান হয়েছে। ইতিমধ্যে তাতে ভাল সাড়া মিলছে। সকলের কাছেই ওই ব্যাপারে সহযোগিতা পাচ্ছি।”
কোচবিহার শহরজুড়ে অন্তত ৫০টি সরকারি দফতর রয়েছে। তার অধিকাংশ সাগরদিঘি চত্বরে। প্রতিদিন সাগরদিঘির চারদিকে প্রাতঃভ্রমণ করেন শহরের অসংখ্য বাসিন্দা। তাঁদের একাংশের অভিযোগ, অধিকাংশ দফতর চত্বরেই সকাল ৭ টা পর্যন্ত বিদ্যুতের আলো জ্বলে। কোনও কোনও দফতরে বেলা ৮টার পরেও বিদ্যুতের আলো নেভানো হয়না। শহরের অন্য এলাকাগুলিতেও বিভিন্ন দফতরে একইভাবে দিনের বেলা বিদ্যুতের আলো জ্বালানোর জেরে ফি মাসে মোটা অঙ্কের সরকারি টাকা খরচ হচ্ছে।
বিদ্যুতের অপচয় দৈনন্দিন ঘটনা হয়ে দাঁড়ালেও ওই অপচয় বন্ধে দীর্ঘদিন ধরে কোন মহলের তরফেই গরজ দেখান হচ্ছিল না। গোলবাগানের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত রেল আধিকারিক শেখর চক্রবর্তী বলেন, “অনেকদিন ধরে প্রাতঃভ্রমণের সুবাদে সাগরদিঘি চত্বরের বেশিরভাগ দফতরে অনেক বেলা পর্যন্ত বিদ্যুতের আলো জ্বালানোর বিষয়টি নজরে এসেছে। প্রাথমিকভাবে কয়েকটি দফতরে মৌখিকভাবে ওই ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিলাম। কাজ না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত সরাসরি মহকুমা শাসককে বিদ্যুতের অপচয় বন্ধে লিখিত অনুরোধ করে চিঠি দিয়েছি।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের প্রতিটি সরকারি দফতরে প্রতি মাসে গড়ে ৫-১০ হাজার টাকা বিদ্যুতের বিল আসছে। গড়ে দৈনিক দু’ঘন্টা করে বিদ্যুতের অপচয় বন্ধ করা গেলে ওই খরচের বহর অনেকটা কমবে। সাশ্রয় হওয়া টাকায় এক-দু’টি অফিসের একমাসের বিদ্যুতের বিল মেটান যেতে পারে। তাই ওই বাসিন্দার চিঠি পাওয়ার পরেই এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে তড়িঘড়ি মহকুমা শাসক সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরের কর্তাদের চিঠি দিয়ে তাঁদের নৈশ প্রহরী ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মীদের সকাল ৫টার মধ্যে আলো বন্ধের ব্যাপারে নির্দেশ দিতে আর্জি জানান। যে সব দফতরে চিঠি পাঠান হয়েছে সেই তালিকায় এনবিএসটিসি ও পুলিশের দফতরও রয়েছে।
এনবিএসটিসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর সুবল চন্দ্র দাস বলেন, “প্রতি মাসে আমাদের বিভিন্ন দফতর ও স্ট্যান্ড মিলিয়ে গড়ে লক্ষাধিক টাকা বিদ্যুতের বিল দিতে হয়। সকাল ৫টার পর অনর্থকভাবে নিগমের কোন দফতরে সাধারণত আলো জ্বালানো হয়না। মহকুমা শাসকের চিঠি পাওয়ার পর অসাবধানবশতও কোথাও যাতে এমন ঘটনা না হয় তা দেখতে বলা হয়েছে।” কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের উদ্যোগ ভাল। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীদের নির্দিষ্ট সময়ে আলো বন্ধের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy