Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Sikkim Flood

তিস্তার পাড়ে কাশবনে পড়ে দেহাংশ

শনিবার সন্ধে পর্যন্ত তিস্তা থেকে এখনও পর্যন্ত ৩৫ জনের দেহ পেয়েছে জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন। আরও পাঁচটি দেহ উদ্ধারের খবর শোনা গিয়েছে। বাংলাদেশে ভেসে যাওয়া দু’টি দেহও ফিরেছে।

An image of Sikkim Flood

ভয়াবহ বিপর্যয় সিকিমে। —ফাইল চিত্র।

অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:৩৭
Share: Save:

তিস্তার পাড়ে ঘন কাশবনের ভিতরে ছড়িয়ে রয়েছে হাতের আঙুল, কানের টুকরো, পায়ের অংশ। শিয়াল-কুকুরে মুখে নিয়ে চলে যাচ্ছে চরের ঝোপে। কত দেহ নিয়ে পাহাড় থেকে সমতলে নেমেছে তিস্তা, তার কোনও হিসাব এখনও নেই প্রশাসনের কাছে। শনিবার সন্ধে পর্যন্ত তিস্তা থেকে এখনও পর্যন্ত ৩৫ জনের দেহ পেয়েছে জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন। আরও পাঁচটি দেহ উদ্ধারের খবর শোনা গিয়েছে। বাংলাদেশে ভেসে যাওয়া দু’টি দেহও ফিরেছে। এ দিন দেহের পাশাপাশি নদীর পাড় জুড়ে থাকা কাশবনের মধ্যে দেখা গেল দেহাংশও। তার কোনওটি সেনা জওয়ানের, কোনওটি সাধারণ বাসিন্দার।

এমন দৃশ্য কবে দেখেছে জলপাইগুড়ি! অনেকেই মনে করালেন, সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের সময়ে দেহ ও দেহাংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। তাঁদের বক্তব্য, এর থেকেই বোঝা যায়, মঙ্গলবার গভীর রাতে কতটা তাণ্ডব চালিয়েছে তিস্তা!

জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালের মর্গে উদ্ধার হওয়া দেহের ময়না-তদন্ত চলছে। এখনও পর্যন্ত চিহ্নিত হয়েছে আটটি দেহ। তার মধ্যে পাঁচ জন সেনা জওয়ান রয়েছেন। বাকি দেহগুলির অবস্থা এমনই যে, চিহ্নিত করাই মুশকিল। সেনাবাহিনীর তরফে উদ্ধার হওয়া দেহগুলি শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। নদী বিশেষজ্ঞদের অনুমান, জলপাইগুড়ি এবং লাগোয়া তিস্তা-পাড় থেকে আরও দেহ উদ্ধারের আশঙ্কা রয়েছে। কেন? তাঁদের কথায়, সেবক পর্যন্ত পাহাড়ি পথে তিস্তা নদী খরস্রোতা। সেবক পার হওয়ার পর থেকে স্রোত কমে। এবং কিছু বহন করে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতাও কমে নদীর। এ ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। গজলডোবা ব্যারাজ হয়ে জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া সেতুর আশপাশে এসে দেহ ও দেহাংশ আর বইতে পারছে না তিস্তা। তাই এত দেহ উদ্ধার হচ্ছে জলপাইগুড়ি লাগোয়া এলাকায়। বিপর্যয়ের পরের দু’দিন নদীর স্রোত এতটাই তীব্র ছিল যে, দেহ ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ পর্যন্ত। জলপাগুড়ির জেলাশাসক শামা পারভিন জানিয়েছেন, ময়না-তদন্তের পরে শনাক্ত করা দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।

আরও দেহ ভেসে আসবে, এমন আশঙ্কা করেই জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দল জলপাইগুড়িতে রেখে দেওয়া হয়েছে। জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানায় একটি দলকে রাখা হয়েছে। তিস্তায় নৌকা নামিয়ে দেহের খোঁজ চলছে। পাহাড় থেকে নদী খাতের বড় বড় পাথরে ধাক্কা খেয়ে নামা দেহগুলি ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে। তাই এত দেহাংশ। সে সবই ভাসিয়ে নিয়ে সমতলে জমা করছে তিস্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE