Advertisement
১৭ মে ২০২৪
Malda

মহিলা নিগ্রহকাণ্ডের জের, বামনগোলা থানায় নতুন আইসি, বদল পাকুয়াহাট পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বেও

পাকুয়াহাটে চুরির অভিযোগে দুই মহিলাকে ‘বিবস্ত্র’ করে মারধরের ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে পুলিশের একাংশের ভূমিকা।

—প্রতীকী ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২৩ ১৮:২৬
Share: Save:

মালদহের বামনগোলার পাকুয়াহাটের ঘটনার আইসি-সহ চার পুলিশ আধিকারিককে ‘ক্লোজ়’ করে জেলা পুলিশ। যাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ, তাঁরা হলেন— বামনগোলা থানার আইসি জয়দীপ চক্রবর্তী, এসআই সঞ্জয় সরকার, পাকুয়াহাট পুলিশ ফাঁড়ির ওসি রাকেশ বিশ্বাস এবং এএসআই মিলনকুমার সরকার। জেলা পুলিশ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, বামনগোলা থানার আইসি জয়দীপের জায়গায় দায়িত্বে আসছেন শঙ্কর সরকার। অন্য দিকে, গাজোল থানার এসআই অনিমেষ সমাজপতিকে পাকুয়াহাট পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

পাকুয়াহাটে চুরির অভিযোগে দুই মহিলাকে ‘বিবস্ত্র’ করে মারধরের ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে পুলিশের একাংশের ভূমিকা। দুই ‘নির্যাতিতা’কে কেন গ্রেফতার করা হয়েছিল, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছিল। তার প্রেক্ষিতে গত বুধবার, ঘটনার পাঁচ দিন পর পাকুয়াহাট ফাঁড়ির ওসি রাকেশ বিশ্বাস-সহ বেশ কয়েক জনের বিরুদ্ধে বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন জেলা পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব। এর পর শুক্রবার চার পুলিশ আধিকারিককে ‘ক্লোজ়’ করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, চার জনের কর্তব্যে ‘গাফিলতি’ রয়েছে।

গত শুক্রবার রাতে মালদহের বামনগোলার পাকুয়াহাটে চোর সন্দেহে দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে গণপ্রহারের অভিযোগের ভিডিয়ো নেটমাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেই ভিডিয়োর সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি। স্থানীয় সূত্রে দাবি, বামনগোলার সাপ্তাহিক হাটে গিয়েছিলেন দুই মহিলা। দরাদরির সময় তাঁরা আনাজ বিক্রেতার টাকা ছিনিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। হাটের ব্যবসায়ীরা তাঁদের ধরে মারধর করেন। সেই ঘটনা নিয়ে হইচই হতেই পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে। তার মধ্যে তিন জন মহিলাও রয়েছেন। বিরোধীদের অভিযোগ, দুই ‘নির্যাতিতা’কেও পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। গণপ্রহারের ঘটনার ২৪ ঘণ্টা আগে বিজেপির আন্দোলনে বামনগোলার নালাগোলা ফাঁড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় ওই দুই ‘নির্যাতিতা’কে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সেখানেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে নির্যাতিতার পরিবার এবং বিরোধীরা। এক নির্যাতিতার মেয়ে বলেন, ‘‘মা ও কাকিমা হাটে হাটে লেবু বিক্রি করেন। তাঁদের চোর সন্দেহে মারধর করা হয়েছে। পুলিশ উল্টে মা আর কাকিমাকে গ্রেফতার করল কেন?’’

ফাঁড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় দুই ‘নির্যাতিতা’কে গ্রেফতারি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছিল পুলিশের একাংশের মধ্যেও। প্রশ্ন তুলেছিল রাজ্য মহিলা কমিশনও। প্রশ্ন উঠেছিল— ফাঁড়ি ভাঙচুরের মামলায় প্রাথমিক ভাবে কি নাম ছিল দুই নির্যাতিতার? না কি পরে দু’জনের নাম জুড়ে দেওয়া হয়? মহিলাদের নির্যাতনের সময় কাছাকাছি থাকা সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এই সব বিষয় নিয়ে পুলিশের কাছে রিপোর্টও চেয়ে পাঠিয়েছে রাজ্য মহিলা কমিশন। তার প্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, ‘‘রাজ্যের মহিলা কমিশনকে রিপোর্ট দেওয়া হবে। মহিলাদের মারধরের অভিযোগে, ভিডিয়ো ফুটেজ খতিয়ে দেখে আরও কয়েক জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টাও চলছে।’’ এই টানাপড়েনের মধ্যে গত সোমবার মালদহের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের (সিজেএম) আদালত দুই ‘নির্যাতিতা’র জামিন মঞ্জুর করে।

গণপ্রহারের ঘটনায় শুধু অভিযুক্তদেরই নয়, ফাঁড়ির পুলিশ আধিকারিকদের বিরুদ্ধেও শাস্তির দাবি তুলেছেন পাকুয়াহাটকাণ্ডের দুই ‘নির্যাতিতা’। গত মঙ্গলবার রাতে ইমেল মারফত পুলিশের কাছে গোটা ঘটনার রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও। পুলিশ এখনও পর্যন্ত কী কী পদক্ষেপ করেছে, রিপোর্টে সবই উল্লেখ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার পরেই এই পদক্ষেপ করল জেলা পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Malda
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE