Advertisement
E-Paper

নদী পেরনো হল না, মৃত্যু অসুস্থ শিশুর

বর্ষায় নদীতে জল বাড়ায় অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে তা আর পার হতে পারেননি তার বাবা। নদীর ধারে জল কমার জন্য অপেক্ষা করেন তাঁরা। কিন্তু দু’ঘণ্টাতেও জল না নামায় তাঁরা ফিরে যান। এক হাতুড়েকে আবার দেখান।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৬ ০৩:০৬
ভাঙা কজওয়ের উপর দিয়ে বইছে বালা নদী। (ইনসেটে) মৃত আরাধ্য দাস। ছবি: নারায়ণ দে।

ভাঙা কজওয়ের উপর দিয়ে বইছে বালা নদী। (ইনসেটে) মৃত আরাধ্য দাস। ছবি: নারায়ণ দে।

বর্ষায় নদীতে জল বাড়ায় অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে তা আর পার হতে পারেননি তার বাবা। নদীর ধারে জল কমার জন্য অপেক্ষা করেন তাঁরা। কিন্তু দু’ঘণ্টাতেও জল না নামায় তাঁরা ফিরে যান। এক হাতুড়েকে আবার দেখান। কিন্তু তার চিকিৎসায় কাজ হয়নি। রাতেই মারা যায় আরাধ্য দাস (৪) নামে এক বালকের।

আরাধ্যর বাড়ি জয়ন্তী বনবস্তিতে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জয়ন্তী থেকে বালা নদীর পার হয়ে যেতে হয় রাজাভাত খাওয়া বা আলিপুরদুয়ার। সে জন্য বালা নদীতে ছিল কংক্রিটের একটি কজওয়ে। তা দিয়েই যাতায়াত করত গাড়ি। মানুষজন। কিন্তু সেই কডওয়েটি মাস কয়েক আগে ভেঙে দেওয়া হয়েছে, পাকা সেতু তৈরি করা হবে বলে। কিন্তু সেই কজওয়ের কংক্রিটের টুকরো নদীতেই পড়ে রয়েছে। রাতে জল বেড়ে যাওয়ায় সেই টুকরোগুলো জলের তলায় চলে গিয়েছে। তাই জলের উপর দিয়ে গাড়ি চালালে রাতে কংক্রিটের টুকরোয় ধাক্কা লেগে উল্টে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আরাধ্যার বাবা ধীরেন দাস জানান, সে কারণেই সেই রাতে আর নদী পার হওয়ার চেষ্টা করেননি তাঁরা।

ধীরেনবাবু জানান, বাধ্য হয়েই তাঁরা তখন হাতুড়ের কাছে যান। কিন্তু হাতুড়ের চিকিৎসায় ছেলেকে বাঁচাতে পারেননি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আরাধ্যর দুপুর দিকে জ্বর আসে। স্থানীয় সেন্টার থেকে ওষুধ নিয়ে এসে তাঁকে খাওয়ান। বিকেলে ফের জ্বর আসায় এক হাতুড়েকে দেখান। ওষুধও খাওয়ান। ধীরেনবাবু বলেন, ‘‘রাত বারোটায়র হঠাৎ দেকি ছেলের প্রচণ্ড জ্বর আসে। রাতেই একটি গাড়ি জোগাড় করে বালা নদীর কাছে যাই। নদীতে প্রায় এক হাঁটু জল ছিল। তার সঙ্গে ছিল পাকা রাস্তা ভাঙা কংক্রিটের টুকরো। সেখান দিয়ে অন্ধকারে গাড়ি নিয়ে যাওয়া অসম্ভব ছিল। নদীর পাড়ে স্ত্রী ও অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে অপেক্ষা শুরু করি। প্রায় দু’আড়াই ঘণ্টা পরে জল বাড়তে থাকায় আমরা জয়ন্তী ফিরে আসি। ফের হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে যাই তিনি তেল মালিশ করতে বলেন। পরে রাতেই ছেলে মারা যায়।’’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, রাজাভাতখাওয়া বা আলিপুরদুয়ার যেতে হলে বালা নদী পার করে যাওয়াটাই সোজা রাস্তা। না হলে তিনটি নদী পার হয়ে প্রায় ৪০ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হত। তাই তাঁরা এই রাস্তাই ব্যবহার করেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের সেই সঙ্গেই দাবি, এলাকার উফ স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি থেকে সব রকম পরিষেবা পাওয়া যায় না। রাতের দিকে চিকিৎসকও থাকেন না। তাই হয় নদী পেরিয়ে আলিপুরদুয়ার যেতে হয় অথবা হাতুড়ের শরণাপন্ন হতে হয়।

আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক দেবীপ্রসাদ করণম বলেন, “বিষয়টি নিয়ে কালচিনির বিডিও-র সঙ্গে আলোচনা করব। ট্রাক বা কোনও পিকআপ ভ্যান করে নদী পারাপার করা যায় কি না দেখা হবে। স্বাস্থ্য পরিষেবার দিকেও নজর রাখা হবে।” আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌর‍ভ চক্রবর্তী বলেন ঘটনাটি দুঃখজনক।

Child River Patient
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy