Advertisement
E-Paper

অনুগামীদের উচ্ছ্বাসে ভাসলেন নির্দল অমু

ওয়ার্ডের মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল করতে পেরে অনুগামীদের উচ্ছ্বাসে ভেসে গেলেন শিলিগুড়ি পুরসভার একমাত্র জয়ী নির্দল প্রার্থী অরবিন্দ ঘোষ (অমু)। তিনি ১৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী হন। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ২১০৬। তিনি দ্বিতীয় স্থানে থাকা তৃণমূলের প্রার্থীর চেয়ে ৬৬৩ ভোট বেশি পেয়েছেন। তাঁর জেতার ব্যপারে ওয়ার্ডের কর্মীরা এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে, তাঁকে গণনার আগের দিনই গিয়ে ওয়ার্ডের উন্নয়নের তালিকা ধরিয়ে দেন।

সংগ্রাম সিংহ রায়

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৪৪
শিলিগুড়ির একমাত্র জয়ী নির্দল প্রার্থী অরবিন্দ ঘোষ। নিজস্ব চিত্র।

শিলিগুড়ির একমাত্র জয়ী নির্দল প্রার্থী অরবিন্দ ঘোষ। নিজস্ব চিত্র।

ওয়ার্ডের মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল করতে পেরে অনুগামীদের উচ্ছ্বাসে ভেসে গেলেন শিলিগুড়ি পুরসভার একমাত্র জয়ী নির্দল প্রার্থী অরবিন্দ ঘোষ (অমু)। তিনি ১৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী হন। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ২১০৬। তিনি দ্বিতীয় স্থানে থাকা তৃণমূলের প্রার্থীর চেয়ে ৬৬৩ ভোট বেশি পেয়েছেন।

তাঁর জেতার ব্যপারে ওয়ার্ডের কর্মীরা এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে, তাঁকে গণনার আগের দিনই গিয়ে ওয়ার্ডের উন্নয়নের তালিকা ধরিয়ে দেন। জয়ের পর সমর্থকদের মুখেও একই ধ্বনি। এক সমর্থকের কথায় , ‘‘আমরা রাজনীতি চাই না। আমরা ওয়ার্ডে সুস্থ পরিবেশ ও উন্নয়ন চাই। তাই অরবিন্দবাবুকে ভোট দিয়েছি। কোনও স্বার্থ থাকলে রাজনীতি করতাম।’’ তাঁর বক্তব্যেই যেন ফুটে উঠেছে গোটা ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সুর। আর যাঁকে নিয়ে এত উচ্ছ্বাস সেই ‘অমুদা’ কী বলছেন? তাঁর দাবি, ‘‘কোনও দলের সাহায্য ছাড়াই যে ভাবে মানুষ আমাকে সমর্থন করেছেন, ভালবাসা দিয়েছেন, তাতে আগামী পাঁচ বছর তাঁদের জন্য কাজ করা ছাড়া আর কোনও রাস্তা নেই।’’

তবে তাঁর একটি আসনই এখন বামেদের কাছে চরম আকাঙ্ক্ষিত বলে গণ্য হচ্ছে। বামেদের আসন সংখ্যা ২৩। ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছাতে তাঁদের আর একটিমাত্র আসন প্রয়োজন। গণনাকেন্দ্র থেকে বেড়িয়ে সিপিএমের এক কাউন্সিলর দাবি করেন, অমুদা তাঁদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন। অরবিন্দবাবু জিতে বের হতেই তাঁকে জড়িয়েও ধরেন তিনি। দু’জনেই দু’জনকে অভিনন্দন জানান। যদিও তাঁর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের একটা বড় অংশের মত যে, অমুদার যা সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক শক্তি তাতে তাঁর ডেপুটি মেয়র পদ পাওয়া উচিত। তাঁর সঙ্গে ভোটের কাজ করা এক বাসিন্দা জানালেন, একমাত্র সেই শর্তেই তাঁকে তারা বামফ্রন্টকে সমর্থন করার পরামর্শ দেবেন। অমুদাও তাঁর সমর্থকদের উপরেই ছেড়ে দিচ্ছেন বামেদের সমর্থন করার সিদ্ধান্ত। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমাকে যাঁরা জয়ী করেছেন, তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করেই আমি পরবর্তী পদক্ষেপ করব।’’ যদিও সম্ভাব্য মেয়র পদপ্রার্থী অশোক ভট্টাচার্য দাবি করেন অরবিন্দবাবু তাঁদের সমর্থন করবেন। তাঁর দাবি, ‘‘আমরা সকলের সহযোগিতা দাবি করেছি। নির্দল প্রার্থীকেও আহ্বান জানিয়েছি। উনি সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।’’

এই ওয়ার্ড থেকে তিনি জিততে পারেন, এই আশঙ্কা থাকায় এক সময় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব ওই ওয়ার্ড থেকে লড়াই করবেন বলে ঠিক করেছিলেন। পরে দলের আপত্তি থাকায় তিনি সেখান থেকে সরে আসেন। পরে সেই জায়গায় প্রার্থী করা হয় গতবারের প্রার্থী মৈত্রেয়ী চক্রবর্তীকে। ২০০৯ সালে মৈত্রেয়ীদেবীকে জেতাতে ওয়ার্ডে ঘুরেছিলেন এই অরবিন্দবাবুই। এর আগে বাম আমলেও তিনি নির্দল হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন।

পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডেও তৃণমূল থেকে বের হয়ে নির্দল প্রার্থী আলম খানের সমর্থনেও অনেকেই ভিড় করেছিলেন। যদিও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জানা যায়, অশোকবাবু জিতছেন। তখনই তাঁর সমর্থকদের মধ্যে হতাশা নেম‌ে আসে। আলমবাবু অবশ্য মনে করছেন, তিনি নির্দল প্রার্থী হিসেবে যে নজর কেড়ে নিতে পেরেছেন তাতে তাঁর নৈতিক জয় হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘বিপক্ষে হেভিওয়েট প্রার্থী ছিল। লড়াই ছিল কঠিন। তবু লড়াই ফিরিয়ে দেওয়াটা বড় কথা। আমি সেটা পেরেছি।’’ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আলম খান নিজে না জিতলেও জিতিয়ে দিয়ে গিয়েছেন অশোকবাবুকে। আলমবাবুর প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা ৮১৬। অন্যদিকে তৃণমূলের প্রার্থী অরূপরতনবাবুর প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা ১০৩০। এই ওয়ার্ডে জয়ী অশোকবাবু ১৬০৩টি ভোট পেয়েছেন। তৃণমূল থেকে দাঁড়ানোর কথা ছিল আলমবাবুরই। টিকিট না পেয়ে তিনি নির্দল প্রার্থী হয়ে যান। তিনি দাঁড়ালে তাঁর ভোট তৃণমূলের ভোটবাক্সে পড়লে অশোকবাবু হয়ত জিততে পারতেন না। সেক্ষেত্রে বামেদের অন্য আসনগুলি জেতা অনেকটাই ফিকে হয়ে যেত।

তবে ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে জিততে না পারলেও নির্দল প্রার্থী দিলীপ বর্মনের উদ্দেশ্য সফল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তৃণমূল কর্মী হিসেবে তাঁর টিকিট পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দল অর্থের বিনিময়ে অন্য একজনকে টিকিট দেয় বলে অভিযোগ তুলে দল ছাড়েন দিলীপবাবু। নির্দল থেকে গোঁজ হিসেবে দাঁড়িয়ে দলের অস্বস্তি বাড়ান তিনি। তাঁর একটা বড় অংশের সমর্থক রয়েছে এলাকায়। ফলে সেই ভোটগুলো তৃণমূল পায়নি। যার ফলে ওয়ার্ডে ভোট কাটার সুযোগ নিয়ে সিপিএম প্রার্থী মুকুল সেনগুপ্ত জিতে বেড়িয়ে যান। দিলীপবাবু অবশ্য মুখে বলছেন ‘‘লড়াই করেছিলাম। দলের সমর্থন ছাড়াই মানুষ যতটা সমর্থন করেছে তাতে আমি খুশি।’’ এই ওয়ার্ডে বিজয়ী বাম প্রার্থী সিপিএমের মুকুল সেনগুপ্ত ৫৮৫৯ ভোট পেয়েছেন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা তৃণমূলের জয়প্রকাশ চহ্বন পেয়েছেন ৪৫৭৬ টি ভোট। দিলীপবাবুর প্রাপ্ত ভোট ৯৭০। তিনিও এই ওয়ার্ডের দীর্ঘদিনের তৃণমূল কর্মী। সমাজসেবী হিসেবে তাঁর একটা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তিনি তৃণমূলে না থাকাতে অনেকেই দলকে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছেন। যা শেষে নির্ণায়ক হয়ে গিয়েছে। নতুবা এই ওয়ার্ডের ফলও অন্যরকম হতে পারত।

siliguri independent candidate win omu arabinda ghosh siliguri 15 no ward siliguri vote result sangram singh roy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy