E-Paper

ডেঙ্গি-মৃত্যুর পরেও পুরসভা, স্বাস্থ্য দফতরের ‘টনক নড়েনি’

স্বামীনগরে বালিকার মামাবাড়ির উল্টো দিকে খালপাড়াতেও আর একটি বাড়ি রয়েছে তাদের। দু’জায়গাতেই মেয়েটি থাকত।

সৌমিত্র কুন্ডু

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৪ ০৯:২৬
৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিবেকানন্দ রোডে স্বামীজি নগরের কাছে এ ভাবেই জমে আছে বৃষ্টির জল।

৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিবেকানন্দ রোডে স্বামীজি নগরের কাছে এ ভাবেই জমে আছে বৃষ্টির জল। ছবি বিনোদ দাস।

শিলিগুড়িতে ডেঙ্গির সংক্রমণ নিয়ে রবিবার এক বালিকার মৃত্যুর পরেও কার্যত টনক নড়েনি পুরসভা এবং স্বাস্থ্য দফতরের। সোমবার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জায়না খাতুন নামে ওই বালিকার বাড়িতে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা, এলাকায় অন্য বাড়িগুলি সমীক্ষা করে ব্যবস্থা নেওয়া, এলাকায় স্প্রে করা— কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ। স্বামীনগরে বালিকার মামাবাড়ির উল্টো দিকে খালপাড়াতেও আর একটি বাড়ি রয়েছে তাদের। দু’জায়গাতেই মেয়েটি থাকত। সাধারণত, কেউ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হলে সে এলাকায় বাড়ি-বাড়ি গিয়ে পরিত্যক্ত পাত্র, ডাবের খোলা, প্লাস্টিকের পাত্রে জল জমে থাকলে তা ফেলে দেওয়া, সাফাই করা, বাসিন্দাদের সচেতন করার কথা পুর কর্তৃপক্ষ এবং স্বাস্থ্য দফতরের। সে সব কিছু হয়নি। উল্টে, পুর কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, বালিকা ডেঙ্গিতে মারা গিয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর তাদের রিপোর্ট দেয়নি। তবে পুরসভার তরফে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি দেখা হচ্ছে। আবার দার্জিলিং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তুলসী প্রামাণিকও বলেন, ‘‘শিশুটি ডেঙ্গিতে মারা গিয়েছে বলে আমাদের জানানো হয়নি। তবে চার জনের তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে। তারা মঙ্গলবার (আজ) রিপোর্ট দেবে। স্বাস্থ্য দফতরের টিমও বাড়িতে যাবে।’’ পরিস্থিতি নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিরোধীরা।

এ দিন মৃত বালিকার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় আবর্জনা জমে রয়েছে। যে বাড়িতে মেয়েটি থাকত, সেখানে আনাচে-কানাচে পাত্রে জল জমানো রয়েছে। স্বামীনগরে মেয়েটির মামার বাড়ির চারপাশেও প্লাস্টিকের পরিত্যক্ত পাত্রে জল জমে রয়েছে বলে অভিযোগ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বার বার বলা হলেও এ সব পরিষ্কার করা হয় না। সচেতনতার অভাবও রয়েছে বলে দেখা গিয়েছে। কলকাতা থেকে এ দিনও ফেরেননি পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের মেয়র পারিষদ দুলাল দত্ত, যে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ঘটনা সেখানকার পুরপ্রতিনিধি পিন্টু ঘোষ, বরো চেয়ারম্যান আলম খানেরা। স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ ফোনে বলেন, ‘‘ডেঙ্গিতে বাচ্চাটি মারা গিয়েছে বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর এখনও কিছু জানায়নি। তবে পুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিকদের পাঠানো হবে।’’ পুরসভার একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত্যুর খবর পেয়ে পুরসভার দু’জন কর্মী খোঁজ নিতে যান। তবে তাঁরা পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সব কিছু বিস্তারিত জানাতে পারেননি পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগকে।

মৃত বালিকার মা জারা বেগম হাত জোড় করে বলেন, ‘‘আমার মেয়ে চলে গিয়েছে। আর ফিরে পাব না। আমার অনুরোধ পুরসভাকে বলুন এলাকা পরিষ্কার করতে। আমার বাচ্চার সঙ্গে যা হয়েছে কারও বাচ্চার সঙ্গে যেন না হয়।’’ এই কথা বলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। মৃত বালিকার ঠাকুমা সায়রা বেগম বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতর বা পুরসভার লোকজন আসেননি।’’ শিশুটির দিদিমা হুসনা বেগম বলেন, ‘‘নাতনির জ্বর হয়েছিল। চিকিৎসককে দেখিয়ে ওষুধ খেয়েছিল। পরে, ডেঙ্গি ধরা পড়ে। নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়।’’ পরিবারের দাবি, বাড়িতে আর কারও জ্বর নেই। জায়নার মা অসুস্থতার জন্য সম্প্রতি চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন।

শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘‘এলাকার শিশুটি মারা যাওয়ার ঘটনার পরে দায়সারা, উদাসীন মনোভাব ভবিষ্যতের পক্ষে বিপজ্জনক। মেয়রের মতো অভিজ্ঞ লোক রয়েছেন। তার পরেও কেন এ সব হচ্ছে বুঝতে পারছি না। পুরসভা কি তাঁরা সঠিক ভাবে চালাতে চান না?’’ মেয়র গৌতম দেব বলেন, ‘‘আমি নিজে ওই এলাকায় যাব। ডেঙ্গি-পরিস্থিতি পর্যালোচনায় জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর কী রিপোর্ট দেয় দেখা হবে। বিরোধীরা কী বলছেন, জানি না।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Siliguri Dengue

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy