Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ঘুম ছুটেছে জঞ্জালে জেরবার শিলিগুড়ির

দূষণের দাপটে শিলিগুড়ি শহরের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া মহানন্দার আশেপাশে যে বেশিক্ষণ দাঁড়ানো যায় না তা এখন শহরবাসীর প্রায় সকলেই জানেন। ফুলেশ্বরী-জোড়াপানির হালও একই। বাতাস বইলে নদীর দুর্গন্ধ আশেপাশের গৃহস্থের ঘুম ছুটে যায়। দিনের পর দিন এমন চললেও নেতা-কর্তারা নদী সংস্কারের জন্য কতটা উদ্যোগী হয়েছেন তা নিয়ে আলোচনা চলে।

ভ্যাটে জমছে জঞ্জাল।

ভ্যাটে জমছে জঞ্জাল।

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৫ ০২:০০
Share: Save:

দূষণের দাপটে শিলিগুড়ি শহরের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া মহানন্দার আশেপাশে যে বেশিক্ষণ দাঁড়ানো যায় না তা এখন শহরবাসীর প্রায় সকলেই জানেন। ফুলেশ্বরী-জোড়াপানির হালও একই। বাতাস বইলে নদীর দুর্গন্ধ আশেপাশের গৃহস্থের ঘুম ছুটে যায়। দিনের পর দিন এমন চললেও নেতা-কর্তারা নদী সংস্কারের জন্য কতটা উদ্যোগী হয়েছেন তা নিয়ে আলোচনা চলে। আর গত তিনদিন ধরে বোঝার উপরে শাকের আঁটির মতো শহরবাসীর মাথাব্যথার কারণ হয়েছে জঞ্জাল। সাতসকালে বাড়ি থেকে বেরোলেই নজরে আসছে জঞ্জালের স্তূপ। ফ্ল্যাটের সামনে জমে রয়েছে জঞ্জাল। স্কুল-কলেজ-অফিস-কাছারির সামনেও ডাঁই হয়ে রয়েছে জঞ্জাল। কারণ, ফেলার জায়গা নেই। যেখানে এতদিন আবর্জনা ফেলা হত এখন সেখানে ফেলতে গেলেই সেখানকার বাসিন্দারা তেড়ে বাধা দিচ্ছেন। ফলে, আমজনতার সাধের শিলিগুড়ি ক্রমশ যেন হয়ে উঠছে জঞ্জাল-নগরী।
এই ভয়ঙ্কর অবস্থার কথা জানেন সকলেই। শহরের অতীত-বর্তমান মেয়র, প্রাক্তন-বর্তমান মন্ত্রী, শাসক ও বিরোধী দলের নেতাদের অনেকেই জঞ্জাল-পরিস্থিতি নিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন। সকলেরই লক্ষ্য, শহর জঞ্জাল মুক্ত রাখা। এবং এজন্য সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণও যে জরুরি সে ব্যাপারে তাঁরা প্রায় সকলেই একমত। অথচ শহরের হাল ফেরে না। আরও খারাপ হয়। সে জন্য নেতা-কর্তারা সমস্যাটা জিইয়ে রেখে ফায়দা তুলতে চান কি না তা নিয়ে ইদানীং নানা মহলে বিতর্ক তুঙ্গে।

কেন জঞ্জাল সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে শিলিগুড়ির প্রভাবশালী নেতা ও কর্তাদের একাংশের ভূমিকা নিয়ে এত আলোচনা? এত বিতর্ক?

সমস্যার সূত্রপাত কী ভাবে তা আগে দেখে নেওয়া যাক। পুরসভা গঠনের পরে গোড়ায় জঞ্জাল ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা ছিল না। নদীর ধারেই তা ফেলা হতো। শহর বাড়তে নদী-দূষণের কথা মাথায় রেখে পুরসভার আবর্জনা একপ্রান্তের শালুগাড়া বনাঞ্চলের কাছের এলাকায় ফেলা শুরু হয়। ওই এলাকাটি তখন ছিল প্রায় জনহীন। শহর বাড়তেই সেখানে গড়ে উঠল স্কুল, কলেজ, বসতবাড়ি। ওই এলাকার জমি হয়ে উঠল বহুমূল্য। জনবসতি বাড়তেই ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ডে’র আবজর্না নিয়ে ক্ষোভ দানা দানা বাঁধল। তা সরানোর জন্য দাবি উঠল। গড়ে উঠল কমিটি।

সেই বাম আমলে জঞ্জাল ফেলার জন্য শহরের আরেক প্রান্তে রাজগঞ্জ ব্লকের পুঁটিমারিতে পুরসভা জায়গা কিনে জঞ্জাল ফেলার পরিকল্পনা হাতে নিল। কিন্তু, সেখান থেকে বাধা দেওয়া হল। সেই সময়ে তৃণমূলের পুঁটিমারির নেতারা বিরোধিতা করায় তা সেখানে সরানো গেল না। পরে বামেদের হটিয়ে তৃণমূল-কংগ্রেস শিলিগুড়ি পুরভোটে ক্ষমতাসীন হল। সেই সময়ে ডাম্পিং-গ্রাউন্ড সরানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছিল তৃণমূল-কংগ্রেস বোর্ড। কিন্তু, পুঁটিমারি এলাকার বাসিন্দারা আপত্তি করায় তা হয়নি।

ঘটনাচক্রে, তৃণমূল-কংগ্রেস পুরবোর্ডে থাকাকালীন ‘ডাম্পিং-গ্রাউন্ড’ সরানোর দাবিতে সে সময়ে আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন বাম নেতাদের অনেকেই। ২০১৫ সালে নির্দল প্রার্থীর সমর্থনে বামেরা পুরবোর্ড দখল করেছে। এবার ডাম্পিং-গ্রাউন্ড সরানোর দাবিতে আন্দোলন জোরদার হল। কারণ, আন্দোলনকারীদের একাংশের আশা, একদা যাঁরা তাঁদের সমর্থন করেছেন, সেই বাম নেতারা বোর্ডে আসীন হওয়ায় তাঁদের দাবি পূরণ হবে।

জঞ্জাল জমে এ ভাবেই ছড়াচ্ছে দূষণ।

কিন্তু, অতীতে প্রায় আড়াই দশকের বেশি সময় বামেরা পুরবোর্ডে থেকে যে ডাম্পিং গ্রাউন্ড সরাতে পারেনি তা এবার এক মাসেই কি পারবে ? তা নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। যেমন কংগ্রেসের এক নেতা তথা প্রাক্তন কাউন্সিলর জানালেন, তাঁরা বোর্ডে থাকাকালীন চেষ্টা করলেও নানা বাধায় জঞ্জাল ফেলার সুষ্ঠু ব্যবস্থা করাতে পারেনি। পক্ষান্তরে, তৃণমূলের এক কাউন্সিলর দাবি করেছেন, তাঁরাও চেষ্টা করে পারেননি।

তবে কংগ্রেস-তৃণমূলের অনেকেই মানছেন, জঞ্জাল নিষ্কাশনের সুষ্ঠু বন্দোবস্ত যাঁরাই করতে পারবেন, তাঁরা ইস্টার্ন বাইপাস সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় ভোট-রাজনীতিতে এগিয়ে যাবেন। সে কথা জানেন সিপিএমের প্রায় সকলেই। তাঁরাও জানেন, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের বিধানসভার আওতায় থাকা এলাকা থেকে ডাম্পিং গ্রাউন্ড সরাতে পারলে ভোটবাক্সে সুবিধাও মিলতে পারে। কিন্তু, যে কাজটা তৃণমূল বোর্ডে থাকাকালীন হয়নি, পুরবোর্ড প্রশাসকের অধীনে থাকার সময়ে গৌতমবাবু করাতে পারেননি তা এখন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা বর্তমান মেয়র অশোক ভট্টাচার্য করতে পারবেন বলে আশা রাখতে পারছেন না ভুক্তভোগীরা। তাঁদের আশঙ্কা, ভোটের রাজনীতির জাঁতাকলে পড়েছেন শহরবাসী। তাই সমস্যা অত সহজে মেটার নয়।

দেখা যাক শহরের প্রভাবশালী নেতা-কর্তারা এখন কী বলছেন? কী ভাবছেন? সকলেই তো জঞ্জাল-সমস্যার সমাধান করাতে আগ্রহী। তা হলে হচ্ছে না কেন?

—নিজস্ব চিত্র।

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

siliguri kishor saha cpm trinamool tmc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE