Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি

কারখানা বন্ধ, ফের ডাকা হল বৈঠক

মালদহের অমৃতিতে একটি রেশম প্রক্রিয়াকরণের কারখানা মালিকপক্ষ বন্ধ করার নোটিস জারি করায় উদ্বেগে শ্রমিকরা। গত ফেব্রুয়ারি মাসের পর থেকে সেখানে কোনও উৎপাদন হচ্ছে না। অন্তত ৮৮টি শ্রমিক ও কর্মী ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বেতনও পাচ্ছেন না। ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজে পড়ানো ও সংসার চালাতে তাঁরা ভীষণ সমস্যায় পড়েছেন।

জয়ন্ত সেন
মালদহ শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৬ ০২:৫৮
Share: Save:

মালদহের অমৃতিতে একটি রেশম প্রক্রিয়াকরণের কারখানা মালিকপক্ষ বন্ধ করার নোটিস জারি করায় উদ্বেগে শ্রমিকরা। গত ফেব্রুয়ারি মাসের পর থেকে সেখানে কোনও উৎপাদন হচ্ছে না। অন্তত ৮৮টি শ্রমিক ও কর্মী ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বেতনও পাচ্ছেন না। ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজে পড়ানো ও সংসার চালাতে তাঁরা ভীষণ সমস্যায় পড়েছেন। কারখানাটি চালু করার জন্য ও শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনাগণ্ডা মিটিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন শ্রমিকরা। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি কারখানাটি চালুর ব্যাপারে জেলা শ্রম দফতরে দরবার শুরু করেছে। বিষয়টি মেটাতে জেলা শ্রম দফতরে একবার ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হলেও কোনও ফয়সালা হয়নি। আগামী ১২ জুলাই ফের ত্রিপাক্ষিক বৈঠক রয়েছে। জেলা শ্রম দফতরের সহকারী কমিশনার দেবু কর বলেন, ‘‘কারখানাটির ক্লোজার নোটিসটি আমরা মে মাসে পেয়েছি। কারখানাটি যাতে ফের চালু করা যায় তার চেষ্টা আমরা করছি। আগামী ১২ জুলাই ত্রিপাক্ষিক বৈঠক রয়েছে।’’

মালদহ জেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অমৃতি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ১৬ বিঘা জমির উপর রয়েছে রেশম প্রক্রিয়াকরণের ওই কারখানাটি। ১৯৯১ সাল থেকে কারখানাটি চালু রয়েছে। ৭৭ জন শ্রমিক ও ১১ জন কর্মী ছিলেন। শ্রম দফতর ও শ্রমিক সূত্রে জানা গিয়েছে, মালিকপক্ষের মূল সিল্ক কারখানা রয়েছে ছত্তীসগঢ়ের রায়পুরে। এখানে জেলার, বেঙ্গালুরু এবং অসম থেকে আনা রেশমগুটির সিল্ক ওয়েস্ট প্রক্রিয়াকরণ করে রায়পুরের কারখানায় পাঠানো হতো।

রায়পুরের কারখানাতেই সিল্কের ফিনিশড প্রোডাক্ট তৈরি হয়। যা বিদেশেও রফতানি হয়। শ্রমিকরা জানিয়েছেন, এই জেলায় প্রচুর রেশম চাষ হলেও পর্যাপ্ত কাঁচামাল পাওয়া যাচ্ছিল না। বাইরে থেকে আনতে হচ্ছিল। কিন্তু মালিকপক্ষ আগাম কিছু না জানিয়ে এ ভাবে যে কারখানা বন্ধের নোটিস জারি করবে, তা ভাবাই যাচ্ছে না। কারখানার শ্রমিক নবকুমার মণ্ডল, দিলীপ ঘোষ, নিরঞ্জন মণ্ডল, বিকাশ সাহারা বলেন, ‘‘গত ২৯ ফেব্রুয়ারি এখানকার প্রক্রিয়াকরণজাত সিল্ক ওয়েস্ট শেষ উৎপাদিত হয়ে রায়পুরের কারখানায় গিয়েছে। তারপর থেকে এখানে কোনও উৎপাদন হয়নি। কারখানা বন্ধ করার কোনও নোটিসও আমরা পাইনি। আমরা কারখানায় হাজিরা দিয়েছি। এখানে যে অফিসাররা রয়েছেন, তাঁরাও কিছু জানাননি। এখনও সকালে আমরা কারখানার গেটের সামনে আসি।’’

ইতিমধ্যে ফেব্রুয়ারি থেকে বেতন না পাওয়ায় শ্রমিক-কর্মীরা মার্চ ও এপ্রিল মাসে জেলা শ্রম দফতরের কাছে বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ করার আবেদন জানান। সেই শ্রম দফতর থেকেই মে মাসে তাঁরা জানতে পারেন যে, মালিকপক্ষ কারখানা বন্ধের নোটিস জারি করেছেন। এক শ্রমিক অজয় মাহাতো বলেন, ‘‘আমার বড় মেয়ে রিমা দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিক্স অনার্স নিয়ে পড়ছে। চার মাস থেকে বেতন নেই। মেয়ের লেখাপড়ার খরচ কী ভাবে জোগাব ভেবেই কুল পাচ্ছি না।’’

শ্রমিক আনু কুমারের ছেলে কলকাতার রাজারহাটের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ছেন। তারও একই অবস্থা। শ্রমিকরা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বন্ধ চা বাগানগুলি খোলার ব্যাপারে তো উদ্যোগী হয়েছেন। আমাদের কারখানা খোলার ব্যাপারেও উদ্যোগী হলে ভাল হয়।’’

আইএনটিটিইউসির ওই কারখানা ইউনিটের সম্পাদক আশিস সরকার বলেন, ‘‘কারখানাটি আচমকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কারখানাটি চালুর জন্য আমরা জেলা শ্রম দফতরে দরবার করছি। দফতরের মাধ্যমে কারখানাটি যে কোনও ভাবেই হোক চালু করতে চাইছি। ১২ তারিখ ত্রিপাক্ষিক বৈঠক রয়েছে, সেখানে যাতে ফয়সালা হয়ে যায় সেই আশায় রয়েছি। না হলে শ্রমিকদের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এ পর্যন্ত যে বকেয়া বেতন, গ্র্যাচুইটি, বোনাস ও অন্য টাকা রয়েছে, তা মেটানো হোক।’’ বেশির ভাগ শ্রমিকের বয়স যেহেতু চল্লিশের উপর তাই শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও করতে হবে বলে দাবি উঠেছে। জেলা আইএনটিটিইউসির সভাপতি মানব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ত্রিপাক্ষিক বৈঠক থেকেই আমরা কারখানাটি চালু করতে চাই।’’

কারখানার ম্যানেজার জসেন্দু বিকাশ ঝাঁ বলেন, ‘‘মালিকপক্ষ আমাকে একবার ডেকে জানিয়েছিলেন, বাজারের অবস্থা ভালো নয়। তাই কারখানা চালু রাখা মুশকিল। কিন্তু কারখানা বন্ধ করার বিষয়ে কাগজে-কলমে আমাকে কিছু জানানো হয়নি। আমি ও সহকর্মীরাও ফেব্রুয়ারি থেকে বেতন না পেয়ে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি।’’ মালিকপক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত পদাধিকারী কমল শর্মা বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Silk Processing Factory Closed Malda Silk
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE