দলে ‘বিদ্রোহী’দের ডানা ছেঁটে জেলা কমিটি থেকে ব্লক কমিটি পুরো নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূল সভাপতি বিপ্লব মিত্র নয়া কমিটি তৈরি করেছিলেন গত মাসের ১০ তারিখে। বালুরঘাটে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে রাজ্যস্তরে ওই কমিটির অনুমোদন মিলেছে বলেও দাবি করেন তিনি। এক মাস না পেরোতেই ওই কমিটিতে পরিবর্তন হওয়ায় দলের বিপ্লব-বিরোধী গোষ্ঠী কার্যত ‘উল্লসিত’ বলে দল সূত্রে খবর।
মন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তীর বিধানসভা ক্ষেত্র বালুরঘাট, এবং তপন ও কুমারগঞ্জে সংশ্লিষ্ট বিধায়কদের দাবি মেনেই ব্লক কমিটি গুলিতে তৃণমূলের সভাপতি থেকে কার্যকরী সভাপতি পদে বিপ্লব মিত্রের অনুগামীরা বাদ পড়েছেন। সেই জায়গায় মনোনীত হয়েছেন শঙ্করবাবুর অনুগামীরা। ফলে জেলা কমিটিতে বিপ্লব মিত্রের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই আলগা হয়ে গেল বলে দলীয় সূত্রের খবর। যদিও বিপ্লববাবু বলেন, “কমিটিতে কিছু পরিবর্তন হয়েছে। রাজ্য থেকে এ বিষয়ে আমাকে জানানো হয়েছে। তবে এটা কোনও ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়।”
দলীয় সূত্রের খবর, অন্য জেলার মতো দক্ষিণ দিনাজপুরেও এতকাল দলের যাবতীয় বিষয়ে মুকুল রায়ই শেষ কথা বলতেন। জেলা সভাপতি বিপ্লববাবু তাঁর অনুগামী বলেই পরিচিত ছিলেন। তবে গত বার কমিটি গঠনের সময়ে দলনেত্রী জেলাস্তরে মূল সাংগঠনিক নেতৃত্বকে (বিপ্লব মিত্র) কাছে টেনে কমিটি তৈরিতে পুরো ক্ষমতা দেওয়ার কৌশল নেন বলেও অনেকের অভিমত। যাতে নতুন করে মুকুলবাবুর দল তৈরির সম্ভাবনা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়। ফলে পূর্ণ দায়িত্ব পেয়ে বিপ্লববাবু তাঁর মতো করে জেলায় সংগঠন তৈরি করেন।
গত মাসের ১০ তারিখে বালুরঘাটে সাংবাদিক বৈঠক করে বিপ্লববাবু নতুন জেলা কমিটি থেকে এ জেলার ৮টি মফস্বল ব্লক কমিটি এবং বালুরঘাট টাউন কমিটি ঘোষণা করেন। বালুরঘাট টাউন তৃণমূল কমিটির সভাপতি তথা মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ অসিত রায়কে সরিয়ে সভাপতি করা হয়েছিল সমীর ভট্টাচার্যকে। কিন্তু সাম্প্রতিক রদবদলে অসিত রায়ই বালুরঘাট টাউন কমিটির সভাপতি পদে বহাল রয়েছেন। বালুরঘাট বিধানসভার অধীনে বালুরঘাট ব্লক এবং শহরের সঙ্গে হিলি এলাকাও রয়েছে সেখানেও এলাকার দলীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তীর অনুগামীদের কারও কমিটিতে জায়গা হয়নি বলে অভিযোগ ছিল।
জেলা থেকে পাঠানো তালিকা তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অনুমোদন করেন বলে সাংবাদিক বৈঠকে বিপ্লববাবু জানিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরই বালুরঘাট, তপন, কুমারগঞ্জের বিধায়কেরা রাজ্যস্তরে তীব্র আপত্তি জানিয়ে ব্লক কমিটিতে দলের জেলা সভাপতির চাপিয়ে দেওয়া প্রার্থী পরিবর্তনের পক্ষে সরব হন। তাঁদের বক্তব্য, আগামী বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্লক কমিটিতে তাঁদের পছন্দের প্রার্থীকে দায়িত্ব দিলে আখেরে লাভ বই ক্ষতি হবে না। এরপরেই দলের রাজ্য নেতৃত্ব বিধায়কদের বক্তব্যকে গুরুত্ব দিয়ে কমিটি পরিবর্তনের সুপারিশ করে তাঁদের নির্বাচিত অনুগামীদের কমিটিতে মনোনীত করেন।
দল সূত্রে খবর, এই জেলায় সাংগঠনিক বিষয়ে বরাবর মুকুল রায়ের উপর দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল। সেই দায়িত্ব এ বারে পালন করেন দলের মহাসচিব পার্থবাবু। তবে বিপ্লববাবুর দাবি, “দলে মুকুলবাবু ও আমি সমসাময়িক। এইসব ব্যাপারে আমার উপরই দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল। এ বারেও তাই হয়েছে। দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা বানানো।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy