Advertisement
০১ মে ২০২৪
Train accident

বরখাস্ত স্টেশন সুপারিন্টেন্ডেন্ট, শাস্তির মুখে সেকশন অফিসার

২০২২ সালের ১৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় জলপাইগুড়ি রোড স্টেশন ছাড়ার পরে, দোমহানির ধরলা সেতুর কাছে গুয়াহাটিগামী বিকানের এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়। মৃত্যু হয়েছিল ন’জন যাত্রীর।

লাইনচ্যুত গুয়াহাটিগামী বিকানের এক্সপ্রেস।

লাইনচ্যুত গুয়াহাটিগামী বিকানের এক্সপ্রেস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:৫৯
Share: Save:

আগে থেকে বিপদের আঁচ পেয়েও ট্রেন থামাননি রেলকর্মীরা— বিকানের এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার তদন্তে উঠে এসেছে এমনই রিপোর্ট। শাস্তি হতে চলেছে অভিযুক্ত রেল আধিকারিক ও কর্মীদের। বছরখানেক আগে, দোমহানিতে বিকানের এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনায় দুই আধিকারিকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করল রেল। তৎকালীন জলপাইগুড়ি রোডের স্টেশন সুপারিন্টেন্ডেন্টকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং সেকশন অফিসারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাঁর পদের অবনমন ঘটানো হচ্ছে বলে রেল সূত্রের খবর।

২০২২ সালের ১৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় জলপাইগুড়ি রোড স্টেশন ছাড়ার পরে, দোমহানির ধরলা সেতুর কাছে গুয়াহাটিগামী বিকানের এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়। মৃত্যু হয়েছিল ন’জন যাত্রীর। পরের দিন ভোরে ঘটনাস্থলে যান রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। সে দিনই জানানো হয়েছিল, ত্রুটি ছিল রেলের ইঞ্জিনে। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে বলেন, “দুর্ঘটনার তদন্তে গাফিলতি ধরা পড়েছে। জলপাইগুড়ি রোডের তৎকালীন স্টেশন সুপারিন্টেন্ডেন্টকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।” বিকানের এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় আগেই আধিকারিক-সহ মোট আট জন রেলকর্মীর গাফিলতি পেয়েছিল রেল।

কেন দুর্ঘটনা ঘটেছিল, তা জানতে একটি মূল কমিটি গঠিত হয়। এ ছাড়া, একাধিক কমিটি গড়েছিল রেলের একাধিক বিভাগ। দুর্ঘটনার কারণ জানতে এখনও পর্যন্ত ৬৫ জনের বেশি কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তদন্তে উঠে আসে নানা তথ্য। রেল সূত্রের খবর, জলপাইগুড়ি রোড স্টেশনে ঢোকার আগে থেকেই ইঞ্জিনের ‘ট্র্যাকশন মোটর’ ঝুলে পড়েছিল। সে মোটরের অংশ রেললাইনের মাঝে পাতা কংক্রিটের স্লিপারে ধাক্কা খেয়ে আগুনের ফুলকি ঝরাতে থাকে। সে ফুলকি চোখে পড়েজলপাইগুড়ি রোড স্টেশনে ঢোকার আগের রেলগেটের কর্মীর। তিনি সে খবর জলপাইগুড়ি রোড স্টেশনে জানান। জলপাইগুড়ি রোড স্টেশন থেকে সে খবর ইঞ্জিনের চালককে জানানো হলেও, স্টেশন থেকে ট্রেন দাঁড় করানোর বার্তা পাঠানো হয়নি বলে সূত্রের দাবি। নিয়ম অনুযায়ী, ইঞ্জিনে অথবা রেল চলাচলে সামান্য কোনও বিচ্যুতি চোখে পড়লেই ট্রেন থামিয়ে পরীক্ষা করার কথা। বছরখানেক আগের সে সন্ধ্যায় সে সবের কিছুই হয়নি। ইঞ্জিনের তলা থেকে ফুলকি বার হতে দেখেও, সে বার্তা পাঠাতেই সময় নষ্ট করেন রেলকর্মীদের কয়েক জন— এমনই সব তথ্য উঠে এসেছে তদন্তে।

তদন্তের রিপোর্ট মেনেই বরখাস্ত করা হয়েছে তদানীন্তন স্টেশন সুপারিন্টেন্ডেন্টকে। শাস্তির মুখে আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের সেকশন অফিসারও, যাঁর দায়িত্ব কোন ট্রেন কখন যাবে বা সে ট্রেনটি আদৌও চালানো যাবে কি না, তার সিদ্ধান্ত নেওয়া। আলিপুরদুয়ার ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার দিলীপ সিংহ বলেন, “বিকানের এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় আমরা জলপাইগুড়ি রোড স্টেশনের তৎকালীন স্টেশন সুপারিন্টেন্ডেন্টের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেছি। এ ছাড়া, আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের সেকশন কন্ট্রোলারের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এঁদের বিরুদ্ধে বড়সড় নিয়মভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে। তবে তদন্ত এখনও চলছে। সব অভিযোগ প্রমাণিত হলে আরও বড় পদক্ষেপ করা হতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Train accident Bikaner–Guwahati Express
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE