Advertisement
E-Paper

ঝাঁপ বন্ধ শোকে, না শিশুশ্রম লুকোতে

তালা বন্ধ দোকানে আগুনে পুড়ে দুই কিশোরের মৃত্যুর পরের দিন মঙ্গলবার শিলিগুড়ির সেবক রোডের ওই এলাকায় ঝুপড়ি দোকানগুলি খোলেনি। তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারও মতে, দুই শিশুর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করতেই দোকান বন্ধ রাখা হয়েছে। আবার কারও মতে, দোকান বন্ধ রেখে শিশু শ্রমিকদের লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন কিছু মালিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৫১
পুড়ে যাওয়া সেই দোকান। মঙ্গলবার সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

পুড়ে যাওয়া সেই দোকান। মঙ্গলবার সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

তালা বন্ধ দোকানে আগুনে পুড়ে দুই কিশোরের মৃত্যুর পরের দিন মঙ্গলবার শিলিগুড়ির সেবক রোডের ওই এলাকায় ঝুপড়ি দোকানগুলি খোলেনি। তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারও মতে, দুই শিশুর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করতেই দোকান বন্ধ রাখা হয়েছে। আবার কারও মতে, দোকান বন্ধ রেখে শিশু শ্রমিকদের লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন কিছু মালিক।

সোমবার দুই কিশোর হোটেলকর্মীর মৃত্যুর পরে তা নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ দানা বাঁধছে। পুড়ে যাওয়া দোকানের আশেপাশের একই রকম কয়েকটি হোটেল রয়েছে। মঙ্গলবার এলাকার সব গুমটি বন্ধ ছিল। ব্যবসায়ীদের দাবি, শোক প্রকাশ করতেই দোকানগুলি বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে, বাসিন্দাদের অভিযোগ, গুমটির হোটেল, চায়ের দোকান থেকে গ্যারেজ—সর্বত্রই শিশুদের দিয়ে কাজ করানো হয়। সোমবার দুপুরেও ওই দোকানগুলিতে শিশুদের কাজ করতে দেখেছেন বাসিন্দারা। অগ্নিকাণ্ডের পরে প্রশাসন থেকে শিশু শ্রমিক খুঁজতে অভিযান চালানো হবে বলে এলাকায় চাউর হয়ে যাওয়াতেই, এ দিন সব দোকান বন্ধ রাখা হয়েছিল বলে এলাকার কিছু বাসিন্দার অভিযোগ। তাঁদের প্রশ্ন, যদি শোক প্রকাশের জন্যই দোকান বন্ধ রাখা হত, তা হলে মৃত নাবালকদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নিদেনপক্ষে মোমবাতি-ফুল দেখা যেত। মৃতদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাহায্য বা সমবেদনাও জানানো যেত। তার কিছুই এ দিন দেখা যায়নি। উল্টে প্রশাসন বা সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের দেখলেই ব্যবসায়ীদের অনেককেই এলাকা থেকে সরে যেতে দেখা গিয়েছে।

শ্রম দফতরের একটি প্রতিনিধি দল এ দিন এলাকার দোকানগুলিতে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। সব দোকানই বন্ধ থাকায় তাঁদের খালি হাতেই ফিরতে হয়। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন চাইল্ড লাইনও সেবক রোডের দোকানগুলিতে শিশু শ্রমিক রয়েছে কি না খতিয়ে দেখতে গিয়েছিল। তাঁদেরও দোকানের বন্ধ ঝাঁপ দেখে ফিরে আসতে হয়েছে। হোটেল হোক বা চায়ের দোকান কিংবা বাইকের গ্যারাজ—সেবক রোডের সিংহভাগ দোকানে মূলত শিশুরাই কাজ করে বলে অভিযোগ। রাতারাতি ওই সব শিশুদের কাজ থেকে সরিয়ে দিয়ে কোনও দোকানই চালানো সম্ভব নয় বলে বাসিন্দারাই দাবি করেছেন।

এ দিন দুপুরে বন্ধ দোকানের সামনে কয়েকজনকে জটলা করতে দেখা গিয়েছে। তাঁরা অবশ্য কেউই নিজেদের দোকান-মালিক বলে দাবি করলেন না। যদিও, বাসিন্দাদের অভিযোগ, দোকান বন্ধ করে ব্যবসায়ীরা আশেপাশেই ছিলেন। অচেনা কাউকে দেখলেই তাঁরা আড়ালে চলে গিয়েছেন বলে দাবি।

শ্রম দফতরের উত্তরবঙ্গের যুগ্ম কমিশনার সমীর বসু বলেন, ‘‘সেবক রোডের সব দোকানগুলিতে পরিদর্শনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দফতরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, দোকান বন্ধ থাকায় এ দিন পরিদর্শন সম্ভব হয়নি। তবে আমরা বাসিন্দাদের থেকে বিভিন্ন তথ্য পেয়েছি। দোকানগুলি কাদের তা-ও জানা গিয়েছে।’’

বাসিন্দাদের প্রশ্ন, এত দিন প্রশাসন কেন চোখ বন্ধ করে ছিল? শিশু শ্রমিকদের নিয়ে যদি প্রশাসন আগেই সচেতন হত, তা হলে এমন কাণ্ড ঘটত না। শ্রম দফতর ছাড়াও, পুলিশ-পুরসভা সব কর্তৃপক্ষের তরফেই কোথাও শিশুদের অথবা নাবালকদের শ্রমে লাগানো হয়েছে কি না, তার নজরদারি করার কথা। পুরসভা এলাকায় ট্রেড লাইসেন্স পেতে গেলে শিশুদের কাজে লাগানো হবে না বলে মুচলেকাও দিতে হয় ব্যবসায়ীদের। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যৌথভাবে নজরদারি কমিটি গড়ে অভিযান চালানোরও উল্লেখ রয়েছে শিশু শ্রম বিরোধী আইনে। দার্জিলিং জেলায় শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলিকে এক ছাতার তলায় এনে জেলা শিশু অধিকার নেটওয়ার্ক নামে কমিটিও তৈরি হয়েছে।

এত গালভরা নিয়ম বা কমিটি থাকলেও সবার নাকের ডগাতেই সেবক রোডের মতো শিলিগুড়ি শহর জুড়েই বিভিন্ন গুমটি থেকে পাকা ঘরের দোকান-গ্যারেজে অবাধে নাবালকদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। আগুনে দুই নাবালকের পুড়ে মৃত্যুর পরে প্রশাসন বা শিশুদের অধিকার রক্ষার জন্য গঠিত কমিটিগুলির সক্রিয়তা বাড়বে কি না, তাই এখন প্রশ্ন।

Siliguri store closed child labor hide
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy