দেহ আলো: ভালবেসে এই ভাবেই পনেরো বছর কাটিয়ে দিয়েছেন ধনঞ্জয় ও পম্পা। নিজস্ব চিত্র
ভালবাসার কি আলাদা কোনও দিন হয়?
ওঁরা দু’জনেই মিটিমিটি হাসছেন। সেই হাসি বুঝিয়ে দিচ্ছে অনেক কিছু। জানান দিচ্ছে ওঁদের মনের কথা। তবুও ওঁরা বলেই ফেললেন, ‘‘রোজই আমাদের ভালবাসার দিন। রোজই আমাদের ভ্যালেন্টাইন্স ডে।’’
ওঁরা শোনাচ্ছিলেন পুরনো দিনের কথা। কৈশোরের চৌকাঠ পেরিয়ে প্রথম ভাললাগা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই ভাললাগা খুলে দিল ভালবাসার দুয়ার। তার পরে প্রেম থেকে পরিণয়। গত দেড় দশকে জীবনের নানা ওঠাপড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভ্যালেন্টাইন্স ডে এসেছে। আবার চলেও গিয়েছে। আর পাঁচ জনের মতো ১৪ ফেব্রুয়ারি ওঁরা কেউ কাউকে কখনও লাল গোলাপ, টেডি কিংবা চকলেটের মতো উপহার দেননি। অন্যদের মতো চোখে চোখ রেখে কথাও নয়। তবুও হাতে হাত রেখেই দিব্যি আছেন ওঁরা। ধনঞ্জয় দাস আর পম্পা দত্ত প্রেমের আলোয় ঘুচিয়েছেন দু’চোখের আঁধার।
ধনঞ্জয় কোচবিহারের খোল্টা-মরিচবাড়ির বাসিন্দা। পম্পার বাড়ি ডোডেয়ারহাটে। দু’জনেই একসময় কোচবিহারের একটি দৃষ্টিহীন বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতেন। কৈশোর পেরিয়ে সেই বিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানেই তাঁদের প্রথম কথা হয়। ‘স্পেশ্যাল এডুকেটর’ ধনঞ্জয় বলছিলেন, “তখন দু’জনে আলাদা হস্টেলে থাকতাম। স্কুলের এক অনুষ্ঠানে পম্পার সঙ্গে আলাপ। ওর কথা আমাকে নাড়া দিয়েছিল। সেই শুরু। তার পরে তো সাত পাকে বাঁধা পড়ে গিয়েছি।” দৃষ্টিহীনদের একটি বিদ্যালয়ে কর্মরত পম্পা বলেন, “স্কুল পেরনোর পরে কয়েক বছর যোগাযোগ ছিল না। পরে অবশ্য পছন্দের মানুষকেই জীবনসঙ্গী হিসেবে পেলাম। সংসার শুরুর আগে সংশয় ছিল। আমরা তো অন্যদের মতো নই। কিন্তু ধনঞ্জয় ভরসা দিয়েছিল। দুই ছেলেকে নিয়ে আমাদের সুখী সংসার।” খেই ধরেন ধনঞ্জয়, ‘‘আসলে কী বলুন তো, ভালবাসাই সম্পর্কের মূল ভিত। সেটাই আমাদের চলার পথ মসৃণ করেছে।”
ওঁরা জানান, জীবনের যে কোনও প্রতিবন্ধকতাকে ইতিবাচক মনোভাবেই তাঁরা দেখেন। পরস্পরের সমস্যাটাও বোঝেন হৃদয় দিয়ে। তাই কর্মস্থল তুফানগঞ্জ থেকে না ফেরা পর্যন্ত উদ্বেগে থাকেন পম্পা। পম্পা রান্নাঘরে ঢুকলে বারবার খোঁজ নেন ধনঞ্জয়। চোখে নয়, ওঁরা যেন দু’জন দু’জনকে মনে হারান।
জানলা দিয়ে ঢোকা নরম রোদ গড়াগড়ি খায় মসৃণ মেঝেয়। বেজে ওঠে ধনঞ্জয়ের মোবাইল, ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy