নার্সারির এক ছাত্রীর ব্লাড গ্রুপ পরীক্ষা করতে গিয়ে একটি রোগ নির্ণয় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে চরম গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট শহরের সাড়ে তিন নম্বর মোড় এলাকায় একটি রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটে।
বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের পড়ুয়া বছর পাঁচেকের ওই ছাত্রী পঙ্কিতা প্রসাদের দু হাতে পর পর ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ ফুটিয়েও রক্ত নিতে পারেননি সংশ্লিষ্ট রোগ নির্ণয় কেন্দ্রের কর্মী সত্যজিত সুব্বা। বার বার দু’হাতে ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ ফোটানোয় খুদে পড়ুয়া ব্যাথায় চিৎকার করে ওঠে। হাত ফুলে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাচ্যভারতী এলাকার বাসিন্দা ওই শিশু কন্যার মা পিঙ্কিদেবী তারপরেই তাঁর স্বামী জনি প্রসাদকে ফোনে ডেকে নেন। শিশুকন্যার আর্ত চিৎকারে লোকজন ভিড় করেন। সংশ্লিষ্ট কর্মী অভিযুক্ত সত্যজিত সুব্বাকে মারধর দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বালুরঘাট থানার পাশাপাশি শিশুকন্যার মা পিঙ্কিদেবী জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। এরপরই প্রশাসন নড়েচড়ে বসে।
বালুরঘাট থানার আইসি সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘ওই ডায়গনস্টিক-সেন্টার সিল করে দেওয়া হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্ত কর্মী সত্যজিতকে।’’ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শহরের ওই বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও অভিভাবকেরা শিশুদের রক্ত পরীক্ষা করে ব্লাড গ্রুপের রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। অভিভাবকদের অভিযোগ চার ও পাঁচ বছরের শিশুদের হাতের শিরা স্পষ্ট হয়ে ওঠে না জেনেও স্কুল কর্তৃপক্ষ ব্লাড গ্রুপ রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। ওই ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অধ্যক্ষ দেবকীরঞ্জন মহান্তি বলেন, ‘‘ব্লাড গ্রুপের রিপোর্ট বাধ্যতামূলক করা হয়নি। জন্মের সময় যে ব্লাড গ্রুপ করা হয়, সেই রিপোর্ট জমা দিলেই হবে। নতুন করে কারও সমস্যা হলে আমরা অভিভাবকদের জোর করে ব্লাড গ্রুপ নির্ণয় করতে বলিনি।’’
যদিও অসুস্থ ওই শিশুকন্যার অভিভাবকরা বলেন, ‘‘স্কুলের নির্দেশে শহরের ঝাঁ চকচকে প্যাথলজিক্যাল সেন্টারে মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলাম ব্লাড গ্রুপ পরীক্ষা করতে। অপারদর্শী কর্মী রেখে ওই রোগ নির্ণয়কেন্দ্র যে কারবার ফেঁদেছে আমরা বুঝবো কী করে ? জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকুমার দে বলেন, ‘‘ওই শিশুকন্যার অভিভাবকের অভিযোগ পাওয়ার পর ওই কেন্দ্রটি সিল করে দেওয়া হয়েছে। ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। এ দিন থানায় ডিউটি অফিসারের ঘরে দাঁড়িয়ে অভিযুক্ত কর্মী সত্যজিত বলেন, ‘‘আমি নির্দোষ। শিশুকন্যার শিরা খুঁজে না পাওয়ায় মাত্র দু’বার ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ দুহাতে ফুটিয়ে ছিলাম।’’ অবশ্য রক্ত নেওয়ার কোনও প্রশিক্ষণ তার আছে কিনা, সে সম্পর্কে অভিযুক্ত সত্যজিতের কাছে কোনও সদুত্তর মেলেনি।