Advertisement
E-Paper

অভাবের সংসারে আলোর দিশারী চয়ন, বিপ্লব

ছোটবেলায় বাবা বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন। সেই থেকে লোকের বাড়িতে কাজ করে মা-ই সংসার চালান। সকাল ৮টায় কাজে বেরিয়ে যেতে হয় মা রিনাদেবীকে। রাত ৮টার আগে তিনি ফিরতে পারেন না। বাড়ির রান্না থেকে বাসন মাজা, ঘর মোছা সব কাজই করতে হয় চয়নকে। সংসারের এই পরিস্থিতি সামলেও উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৬৭ নম্বর পেয়ে স্কুলের সকলকেই অবাক করে দিয়েছেন নেতাজি উচ্চ বিদ্যালয়ের ওই ছাত্র চয়ন বিশ্বাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৬ ০৩:০০
(বাঁ দিকে) চয়ন বিশ্বাসকে সংবর্ধনা জেলা স্কুল স্পোর্টস বোর্ডের সদস্য মদন ভট্টাচার্যের। (ডান দিকে) বিপ্লবচন্দ্র পাল। নিজস্ব চিত্র।

(বাঁ দিকে) চয়ন বিশ্বাসকে সংবর্ধনা জেলা স্কুল স্পোর্টস বোর্ডের সদস্য মদন ভট্টাচার্যের। (ডান দিকে) বিপ্লবচন্দ্র পাল। নিজস্ব চিত্র।

ছোটবেলায় বাবা বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন। সেই থেকে লোকের বাড়িতে কাজ করে মা-ই সংসার চালান। সকাল ৮টায় কাজে বেরিয়ে যেতে হয় মা রিনাদেবীকে। রাত ৮টার আগে তিনি ফিরতে পারেন না। বাড়ির রান্না থেকে বাসন মাজা, ঘর মোছা সব কাজই করতে হয় চয়নকে। সংসারের এই পরিস্থিতি সামলেও উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৬৭ নম্বর পেয়ে স্কুলের সকলকেই অবাক করে দিয়েছেন নেতাজি উচ্চ বিদ্যালয়ের ওই ছাত্র চয়ন বিশ্বাস। বাড়ি শিলিগুড়ি শহরের জ্যোতিনগর এলাকায়।

বাড়িতে রান্না না হলে অনেক সময় স্কুলের মিড ডে মিলই ছিল ভরসা। শিক্ষকেরাও নিচু ক্লাসের ছেলেদের মিড ডে মিল থেকে তাঁর জন্য ব্যবস্থা করে দিতেন। ছেলের পরীক্ষার ফল শুনে তাই চোখে জল ধরে রাখতে পারেননি রিনাদেবী। কাজ থেকে সময় বের করে স্কুলে এসে ছেলেকে জড়িয়ে ধরেছেন। স্কুলে চয়নই সেরা। রিনাদেবী বলেন, ‘‘ভাল খাবার খেতে দিতে পারি না। দু’মাসে এক দিন হয়তো একটু মাংস রেঁধে খাওয়াতে পারি। ও যে এত ভাল ফল করবে তা সত্যিই ভাবিনি।’’ এ দিন স্কুলে গিয়ে চয়নকে ফুলের তোড়া মিষ্টি দিয়ে অভিনন্দন জানান, স্কুল স্পোর্টস বোর্ডের সভাপতি মদন ভট্টাচার্য।

মা কিছুটা দিতেন, গোটা ছয়েক টিউশন পড়িয়ে তিনিও ১২০০-১৫০০ টাকা রোজগার করতেন। তাই দিয়েই পড়াশোনা, সংসার খরচ চলাতেন মা ছেলে মিলে। বাংলায় তাঁর নম্বর ৯০, ইংরেজিতে ৯২, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ৯৪, দর্শনে ৯৯, ইতিহাসে ৯২, ভূগোলে ৮৭। স্কুলের শিক্ষকদের বাড়িতে গিয়েও পড়াশোনা করতেন চয়ন। সাহুডাঙি স্কুলের দর্শনের এক শিক্ষিকাও নিখরচায় পড়াতেন তাঁকে। চয়নের স্বপ্ন ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষা দিয়ে প্রশাসনের আধিকারিক হবেন। স্বপ্ন পূরণের জন্য কলকাতায় যাদবপুরে পড়াশোনার ইচ্ছে রয়েছে। কিন্তু অভাবের সংসার আর মাকে ছেড়ে যাবেন কী করে তা নিয়েই চিন্তায় পড়েছেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক চণ্ডীব্রত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওর পড়াশোনার জন্য আমরা যতটা পারি সাহায্য করব।’’ চয়নের গল্প পড়তে ভাল লাগে, ভাল লাগে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা। কখনও নিজেই আবৃত্তি করে।

চয়নের মতো অভাবী পরিবারের ছেলে বরদাকান্ত বিদ্যাপীঠের ছাত্র বিপ্লবচন্দ্র পাল। বাবা দীপকবাবু সব্জি বিক্রেতা। ঠেলা নিয়ে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সব্জি বিক্রি করেন। দুই মাইল এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন। বিপ্লবের আর এক ভাই রয়েছে নবম শ্রেণিতে পড়ে। অভাবের সংসারে দু’জনের পড়ার খরচ জোগাড় করাই কঠিন হন দীপকবাবুর পক্ষে। উচ্চ মাধ্যমিকে বিপ্লব ৪৬১ পেয়ে স্কুলে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন। ছেলের ভাল ফল করায় খুশি দীপকবাবু। বিপ্লব বাংলায় পেয়েছে ৯৪ নম্বর, ইংরেজিতে ৬৮, ইতিহাসে ৯১, ভুগোলে ৯৮, দর্শনে ৯৩, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ৮৫। ভূগোল বা ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করতে চায় বিপ্লব। স্কুলের শিক্ষক তমাল চন্দ বলেন, ‘‘টেস্টে ওর নম্বর অনেকটাই কম ছিল। চারশোর নিচে। নিজে পড়াশোনা করে অনেকটাই বাড়িয়েছে। এটাই ওর অধ্যাবসায়।’’

HS Result Exam Student
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy