Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বিয়ে রোখায় প্রশাসনের সম্মান ফরহানাজকে

একজন ফরহানাজ খাতুন ও অন্য জন সীমা খাতুন। দু’জনেই সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। ১৪ র গণ্ডি এখনও পেরোয়নি তারা। মালদহের ভিন্ন ব্লকের বাসিন্দা হলেও নাবালিকা বিয়ে রুখে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের সংকল্প কিন্তু এক।

ফরহানাজ খাতুন।

ফরহানাজ খাতুন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৬ ০১:১৩
Share: Save:

একজন ফরহানাজ খাতুন ও অন্য জন সীমা খাতুন। দু’জনেই সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। ১৪ র গণ্ডি এখনও পেরোয়নি তারা। মালদহের ভিন্ন ব্লকের বাসিন্দা হলেও নাবালিকা বিয়ে রুখে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের সংকল্প কিন্তু এক। সেই লক্ষ্য নিয়ে তাঁরা দু’জনেই কিছু দিন আগে তাঁদের দুই নাবালিকা সহপাঠীর বিয়ে রুখে দিয়েছে। এই কাজে নিজেদের এলাকার বাসিন্দাদের কাছে তো বটেই, জেলা প্রশাসনের কাছেও তারা রোল মডেল হয়ে উঠেছে। ওই কাজের স্বীকৃতি হিসেবে মালদহ জেলা প্রশাসন ও একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শিশু সুরক্ষা সপ্তাহের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে সোমবার ফরহানাজকে কুর্নিশও জানাল। সীমাকেও হয়তো একই সম্মান জানানো হবে পরে।

কী করেছে ওই দুই ছাত্রী?

রতুয়া ১ ব্লকের কারবোনাতে বাড়ি ফারহানাজ খাতুনের। সে কারবোনা বটতলা আদর্শ হাই মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। ফরহানাজ জানায়, জুলাই মাসের শেষ দিক। সহপাঠীদের মধ্যে খুবই ঘনিষ্ঠ রেহানাকে এক দিন ক্লাসে মনমরা হয়ে বসে থাকতে দেখে সে। কারণ জিজ্ঞেস করতেই ফরহানাজকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েছিল রেহানা। বলেছিল তাঁর বাবা-মা তাঁর বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। কিন্তু কোনও মতেই বিয়ে করতে চায় না সে। লেখাপড়া করতে চায়। পরের দিনই সহপাঠী শবনম খাতুনকে নিয়ে ব্লকেরই জাকিরনগরে থাকা রেহানার বাড়িতে গিয়ে তাঁর বাবা-মা ও পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে। ফরহানাজ বলে, ‘‘তাঁদের বোঝাই যে ১৮ বছরের আগে বিয়ে দেওয়া আইনত অপরাধ। সেই সঙ্গে কন্যাশ্রী প্রকল্পের কথাও তাঁদের জানাই। রেহানার বাবা-মা কিন্তু সে দিনই জানিয়ে ছিলেন তাঁদের মেয়ের বিয়ে দেবেন না। এখন প্রতিদিনই মাদ্রাসায় আসে সে। ওই কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সোমবার জেলা প্রশাসন আমাকে সংবর্ধিত করেছে। আমি খুশি।’’

সীমা খাতুনের বাড়ি চাঁচল ১ ব্লকের ইসমাইলপুরে। সে ইসমাইলপুর জুনিয়র হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। সীমা জানিয়েছে, তারই সহপাঠী মর্জিনা খাতুনের বিয়ে ঠিক করে ফেলেছিল তার বাবা-মা। কিন্তু মর্জিনা বিয়েতে কোনওমতেই রাজি ছিল না। সে কথা জানতে পেরেই অন্যান্য সহপাঠীদের সঙ্গে নিয়ে স্কুলের কাছেই থাকা মর্জিনার বাড়ি গিয়েছিল। ১৮ বছরের আগে বিয়ে করলে শাস্তির কথা তারা জানিয়েছিল মর্জিনার বাবা-মাকে। শেষমেশ কাজ হয়। মর্জিনা এখন দিব্যি স্কুলে আসছে। সীমা বলে, ‘‘আমাদের এলাকায় সবলা গ্রুপ রয়েছে এবং সেখানে নাবালিকা বিয়ে রোখার ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সেই প্রশিক্ষণ পেয়ে আমি আমার এক সহপাঠীর বিয়ে রুখতে পেরেছি। এতেই আমি খুশি।’’

মালদহ জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক অসীম রায় বলেন, ‘‘জেলা থেকে বাল্য বিবাহ রুখতে আমরা নানা কর্মসূচি নিয়েছি। অনেক মেয়েই এগিয়ে এসে নিজেদের বিয়ে নিজেরা রুখে দিয়েছে। আবার কেউ এলাকার নাবালিকাদের বিয়ে রুখে দিচ্ছে। আমরা সকলকেই কুর্নিশ জানাই। ফারহানাজ ও সীমা আমাদের কাছে রোল মডেল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Child marriage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE