Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

জন্মদিনের বিকেলে দেহ এল ঈশ্বরের

জন্মদিনের এক দিন আগে, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার স্কুলের পুকুরে ডুবে মৃত্যু হল ঈশ্বরের৷ যে ঘটনায় ইতিমধ্যেই স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আলিপুরদুয়ার থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন পরিবারের লোকেরা৷ যার ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ৷

ঈশ্বর প্রধান।

ঈশ্বর প্রধান।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৮ ০২:৫৮
Share: Save:

শুক্রবার ছিল জন্মদিন৷ বছরের শুরু থেকে স্কুলের হস্টেলে থাকলেও, এই দিনটিতে বাবা-মা ও দিদিদের সঙ্গে কাটানোর খুব ইচ্ছা ছিল দশ বছরে ঈশ্বর প্রধানের৷ বিকালবেলায় কালচিনির পানাবস্তির বাড়িতে পৌঁছলও সে৷ কিন্তু ফুলে ঢাকা অবস্থায় শববাহী গাড়িতে চেপে৷

জন্মদিনের এক দিন আগে, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার স্কুলের পুকুরে ডুবে মৃত্যু হল ঈশ্বরের৷ যে ঘটনায় ইতিমধ্যেই স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আলিপুরদুয়ার থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন পরিবারের লোকেরা৷ যার ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ৷

ঈশ্বরের বাবা চাষবাস করেন। একটি ছোট দোকান চালান৷ বাড়িতে বাবা-মা ছাড়াও ঈশ্বরের দুই দিদিও রয়েছে৷ বাড়ির লোকেরা জানিয়েছেন, এ বছর জানুয়ারি মাসে আলিপুরদুয়ার একটি বেসরকারি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে সে ভর্তি হয়৷ স্কুলের হস্টেলেই থাকত সে৷ ঈশ্বরের বাবা কুমার প্রধান জানান, “বৃহস্পতিবার বিকেলে স্কুলের অধ্যক্ষ ফোন করে জানান, আমার ছেলে জলে ডুবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে৷ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷ কিন্তু হাসপাতালে গিয়ে দেখি সে মৃত৷”

কী ভাবে জলে ডুবে গেল ঈশ্বর? স্কুল কর্তৃপক্ষ, স্কুল হস্টেলের আবাসিকরা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর একটা নাগাদ স্কুলের সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীকে নিয়ে শিক্ষকরা কাছের রেলওয়ে ইনস্টিটিউট মাঠে যান৷ সেখানে আন্তঃজেলা স্কুল ফুটবল খেলা চলছিল৷ খেলা চলাকালীন এক সহপাঠীর সঙ্গে স্কুলে ফিরে আসে ঈশ্বর৷ অভিযোগ, সেই সময় স্কুলে কোন শিক্ষক তো ছিলেনই না, ছিলেন না হস্টেল সুপার বা স্কুলের নিরাপত্তারক্ষীও৷ ঈশ্বরের সঙ্গে স্কুলে আসা সহপাঠীর বাবা জানান, ‘‘স্কুলে ফিরেই ঈশ্বর ও আমার ছেলে স্কুলের পিছন দিকের পুকুরে হাত-পা ধুতে যায়৷ তখনই কোনও ভাবে পা পিছলে জলে তলিয়ে যায় ঈশ্বর৷’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমার ছেলেও পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে৷ তাই চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারেনি ঈশ্বরকে। তখন ও চিৎকার শুরু করে৷’’ সেই ডাকে আশপাশের লোক ছুটে এসে ঈশ্বরকে উদ্ধার করে ঠিকই, কিন্তু ততক্ষণে তার মৃত্যু হয়েছে।

ঈশ্বরের পরিবারের অভিযোগ, স্কুল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতেই এই ঘটনা ঘটেছে৷ কুমারবাবুর অভিযোগ, ‘‘ছোট ছোট ছেলেরা হস্টেলে থাকে জেনেও স্কুলের পুকুরটিকে কোনও দিন ঘিরে রাখার ব্যবস্থা করা হয়নি।’’ বৃহস্পতিবার গভীর রাতে স্কুলের অধ্যক্ষ, হস্টেল সুপার-সহ তিন জনের বিরুদ্ধে আলিপুরদুয়ার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন কুমার প্রধান৷

এ দিন স্কুলে গিয়েও অবশ্য হস্টেল সুপারকে পাওয়া যায়নি৷ নিরাপত্তারক্ষীর দায়িত্বে থাকা এক যুবক জানালেন, তিনি বৃহস্পতিবার ছুটিতে ছিলেন৷ অধ্যক্ষ অভয় কুজুর বলেন, ‘‘হস্টেল সুপার ছাড়াও আরও দুই কর্মী ছাত্রদের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকেন৷ কিন্তু বৃহস্পতিবার আর সকলের সঙ্গে সুপার মাঠে গিয়েছিলেন৷’’ অভয়বাবু বলেন, ‘‘আগে এমন ঘটনা ঘটেনি৷ তাই পুকুর ঘেরার কথাও মাথায় আসেনি৷’’

জন্মদিনের বিকেলে ঈশ্বরের মৃতদেহ বাড়িতে পৌঁছতেই পানাবস্তিতে কান্নার রোল পড়ে যায়৷ জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ছাত্রের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত চলছে৷’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Student Deadbody
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE