Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

কথা বলারই সুযোগ পেল না পরিবার

মেয়ে চলে যাবে। ঘুম হয়নি মা বাসনা বর্মণ এবং পরিবারের সকলের। কাল রাতে বাড়ির সবার এক রকম অনিদ্রায় কেটেছে। ১১ মাস পরে মেয়ে বাড়িতে এল। তাও ঠিকমত থাকতে পারল না। জমিয়ে বসে গল্প করা হল না। কলকাতায় পৌঁছনোর পর শুরু হবে স্বপ্নার চিকিৎসা। তারপর বিদেশে যাওয়া। শুরু হবে অনুশীলন।

ফেরার আগে: পরিবারের সঙ্গে স্বপ্না বর্মণ। সোমবার জলপাইগুড়িতে। ছবি: সন্দীপ পাল

ফেরার আগে: পরিবারের সঙ্গে স্বপ্না বর্মণ। সোমবার জলপাইগুড়িতে। ছবি: সন্দীপ পাল

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৮ ০২:৪৫
Share: Save:

মেয়ে চলে যাবে। ঘুম হয়নি মা বাসনা বর্মণ এবং পরিবারের সকলের। কাল রাতে বাড়ির সবার এক রকম অনিদ্রায় কেটেছে। ১১ মাস পরে মেয়ে বাড়িতে এল। তাও ঠিকমত থাকতে পারল না। জমিয়ে বসে গল্প করা হল না। কলকাতায় পৌঁছনোর পর শুরু হবে স্বপ্নার চিকিৎসা। তারপর বিদেশে যাওয়া। শুরু হবে অনুশীলন। আবার কবে বাড়িতে ফিরবেন তার ঠিক নেই।

মেয়ে সকালেই চলে যাবেন। দাদারা আগের দিন রুই মাছ এনে রেখেছিলেন। মা বাসনা এবং ছেলের বউরা মিলে রেঁধেছিলেন রুই মাছের ঝোল আর ভাত। সকালে তৃপ্তিভরে তাই খেয়ে নেন স্বপ্না। যাওয়ার আগেও একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে স্বপ্নাকে সংবর্ধনা জানানো হয়। সকাল সাড়ে সাতটায় স্বপ্না বাড়ি থেকে বাগডোগরার পথে রওনা হয়ে যান। চোখের জলে পরিবার এবং পাড়ার প্রতিবেশীরা তাঁকে বিদায় জানান। সকাল সাড়ে দশটায় তাঁর বিমান ছেড়ে যায়।

শুক্রবার আসার পর থেকে স্বপ্নার উপর দিয়ে সংবর্ধনার ধকল গিয়েছে। শনিবার শিলিগুড়িতে গিয়েছিলেন। তারপর বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত একের পর এক সংবর্ধনা। শনিবারও তাঁর কেটেছে একই ভাবে। রবিবার বিকেলে পুরসভার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে পুরসভার চেয়ারম্যানের ঘরে বসে ক্লান্তিতে টেবিলে মাথা দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়েছিলেন। শনিবার সংবর্ধনার অনুষ্ঠান তাড়াতাড়ি শেষ হয়।

তার পরে রাতে গ্রামে গিয়ে প্রতিবেশীদের বাড়ি বাড়ি ঘুরেছেন। বাড়ির লোকজন গল্প করার সুযোগই পাননি। স্বপ্নার দাদা অসিত বর্মণ বলেন, “বোন বাড়িতে এল না। ভাবলাম ওঁর কাছে দেশ বিদেশের গল্প শুনব। ওঁর সঙ্গে পাঁচ মিনিটও কথা বলার সুযোগ পেলাম না।”

সাই সুত্রে জানা গিয়েছে, স্বপ্নার পা, হাঁটু এবং কোমরের চিকিৎসার জন্য তাঁকে প্রথমে মুম্বাই যেতে হবে। অন্যত্রও যেতে হতে পারে। পা অনুযায়ী জুতোর জন্য তাঁর বিদেশেও যাওয়ার কথা রয়েছে। এই সব শেষ করতে করতেই এমাস লেগে যাবে বলে জানা গিয়েছে। তারপর কলকাতার সাই কমপ্লেক্সে স্বপ্নার অনুশীলন শুরু হবে। অলিম্পিক্সের আগে ২০১৯ সালে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ আছে।

স্বপ্নার কোচ সুভাষ সরকারের সঙ্গে কলকাতায় যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “ট্রেনিং শুরু করার পর স্বপ্না কতটা লোড নিতে পারছে তা দেখতে হবে। আস্তে আস্তে ওকে ওঁর লক্ষের পথে নিয়ে যেতে হবে। প্রথমে লক্ষ হবে ৬১০০ পয়েন্টের দিকে এগিয়ে যাওয়া। তারপর ৬২০০ এবং তারপর ৬৩০০ পয়েন্ট করা। এইভাবে ওকে এগিয়ে যেতে হবে।”

একটা বিষয়ে সাইয়ের কর্তারা শঙ্কিত। এশিয়ান গেমসে সফল হওয়ার পর প্রচুর অর্থ, খ্যাতি এবং ভাল চাকরি পেয়ে ভারতের বহু অ্যাথলেট হারিয়ে গিয়েছে। স্বপ্নার ক্ষেত্রে সেরকম কোনও ঘটনা ঘটবেনা তো! স্বপ্নাও প্রচুর অর্থ এবং খ্যাতি পেয়েছেন। এশিয়ান গেমসের আগের স্বপ্নার সঙ্গে এখনকার স্বপ্নার অনেক অমিল। অনুশীলন শুরুর আগে তাঁকে মানসিক প্রস্তুতিও নিতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Swapna Barman Family Talk
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE