Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

পুলিশের পাহারা, তবু রয়েছে ভয়

শনিবার রাতেই স্বপ্নার বাড়ির সামনে পুলিশ প্রহরা বসেছে। রবিবার থেকে পাতকাটার ঘোষপাড়ায় স্বপ্নার বাড়ির সামনে বসে গিয়েছে পুলিশ ক্যাম্পও। বাড়ির কাছেই পাতকাটা বিএফপি স্কুলে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প করা হয়েছে

প্রহরা: স্বপ্নার বাড়ির সামনে সশস্ত্র পুলিশ পাহারা। নিজস্ব চিত্র

প্রহরা: স্বপ্নার বাড়ির সামনে সশস্ত্র পুলিশ পাহারা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা 
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৫:৩৪
Share: Save:

ছিনতাইয়ের পরে ২৪ ঘণ্টা কাটলেও উদ্ধার হল না স্বপ্না বর্মণের মায়ের সোনার হার। শনিবার সন্ধেয় বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে স্বপ্নার মা বাসনা বমর্ণের সোনার হার ছিনতাই হয়। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া কালিয়াগঞ্জে পিছন থেকে মোটরবাইকে এসে সোনার হার ছিঁড়ে নিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা। হ্যাঁচকা টানে বাসনা দেবী কাঁধে চোট পান। সে সময় স্বপ্না কলকাতায় রাজ্য সরকারের সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে ছিলেন। স্বপ্নার মাধ্যমে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষস্তরে খবর পৌঁছয়। খোদ জেলা পুলিশ সুপার পৌঁছে যান স্বপ্নার বাড়িতে। শনিবার রাতভর শহর লাগোয়া নানা এলাকায় তল্লাশি চালিয়েছে তিন থানার পুলিশ। পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি বলেন, “কয়েকজনকে আটক করে জেরা চলছে।’’

পুলিশ ক্যাম্প, দেহরক্ষী

শনিবার রাতেই স্বপ্নার বাড়ির সামনে পুলিশ প্রহরা বসেছে। রবিবার থেকে পাতকাটার ঘোষপাড়ায় স্বপ্নার বাড়ির সামনে বসে গিয়েছে পুলিশ ক্যাম্পও। বাড়ির কাছেই পাতকাটা বিএফপি স্কুলে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প করা হয়েছে। ছ’জন সশস্ত্র পুলিশকর্মী দিনরাত সেখানে থাকবেন। তাঁদের মধ্য থেকে পালাা করে একজন সশস্ত্র পুলিশকর্মী স্বপ্নার বাড়িতে পাহারায় থাকবেন। এছাড়াও স্বপ্নার বাড়িতে ঢোকার মুখে গলির সামনে দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ার রাখা হয়েছে। বাসনা দেবী বলেন, ‘‘স্বপ্না স্বর্ণপদক পাওয়ার পরে অনেকে বাড়িতে আসছেন। তাদের মধ্যে কে কী উদ্দেশ্য আসছেন তা বোঝার উপায় নেই। পুলিশ সুপারের কাছে নিরাপত্তার আবেদন জানিয়েছিলাম।

আতঙ্ক কাটেনি এখনও

রবিবারেও বাসনা দেবীর চোখে মুখে আতঙ্ক। শরীরও পুরোপুরি সুস্থ নয়। ঘরের কাজ করলেও মাঝেমধ্যে এখানে ওখানে বসে পড়ছেন। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘এমনটা কখনও হয়নি।’’ এ দিনও কলকাতায় মেয়ের সাথে বেশ কয়েকবার ফোনে কথা বলেছেন। তাঁকে চিন্তা করতে নিষেধ করেছেন। তবে নিজে চিন্তামুক্ত হতে পারছেন না। হার ছিনতাইয়ের সময় যেভাবে গলায় টান লেগেছিল তাতে চলন্ত স্কুটি থেকে পড়ে গেলে কী হত তা ভাবতেই শিউরে উঠছেন তিনি। তবে এ বার বাজারে গেলে সঙ্গে করে একজন দেহরক্ষীকে নিয়ে তবেই যাবেন, জানিয়েছেন বাসনা বর্মণ।

নম্বরহীন বাইক

বাসনা দেবীর দাবি, যে মোটরবাইকে চেপে দুষ্কৃতীরা এসেছিল তাতে কোনও নম্বরপ্লেট ছিল না। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া কালিয়াগঞ্জে ছিনতাই হয়েছে। বাইকটি জলপাইগুড়ি শহরের দিক থেকে এসেছিল বলে পুলিশকে জানানো হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তেও তেমনই জেনেছে পুলিশ। তাতেই দানা বেঁধেছে নানা প্রশ্ন। শহরের মধ্যে দিয়ে নম্বরহীন বাইক চালিয়ে কালিয়াগঞ্জের দিকে দুষ্কৃতীরা কী ভাবে গেল, উঠছেসেই প্রশ্ন। পুলিশের আর একটি সূত্রের দাবি রাজগঞ্জের দিক থেকে বাইকটি এসেছিল। সন্দেহভাজনদের মধ্যে রাজগঞ্জের কয়েকজনও রয়েছে। রাজগঞ্জ থেকে জলপাইগুড়ি জাতীয় সড়ক ধরে আসা যায়। নম্বরপ্লেট ছাড়া বাইক রাস্তায় চলায় পুলিশের নজরদারি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বাইকটি কোন দিকে গিয়েছে তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা কাটেনি।

ভাগিস্য সোনা পেয়েছিল

বেশ কয়েক বছর আগে এলাকার এক বাড়িতে লকার ভেঙে সোনা-টাকা চুরি হয়েছিল। অভিযোগ পাওয়ার একদিন পরে পুলিশ এসেছিল বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। স্বপ্নার মায়ের হার ছিনতাইয়ের কয়েক মিনিট পরেই স্বপ্নার বাড়ি এসেছিলেন খোদ জেলা পুলিশ সুপার। বাড়ির সামনে পুলিশ ক্যাম্প বসেছে। তিন থানার পুলিশ হার উদ্ধারে উঠেপড়ে লেগেছে। স্বপ্নার এক পড়শির দাবি, “এ সবই হল, মেয়েটা সোনা পেয়েছে বলে। না হলে প্রতিদিন চুরি হচ্ছে, হামলা হচ্ছে পুলিশকে এমন তৎপর দেখা যায়।” পুলিশ সূত্রের দাবি, স্বপ্নার মায়ের ছিনতাই নিয়ে নবান্ন থেকে প্রতিমুহূর্তে জানতে চাওয়া হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police Camp protection Swapna Barman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE