চা সুন্দরী প্রকল্পে ঘর পাওয়া শ্রমিকদের জমির কাগজও দেওয়া হোক— এমনই চায় সঙ্ঘের শ্রমিক সংগঠন। খোলা চা বাগানে পর্যটন নিয়েও আপত্তি রয়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের শ্রমিক সংগঠন বিএমএসের চা শ্রমিক শাখারও। চা বাগানে পর্যটনের জন্য ৩০ শতাংশ জমির ব্যবহারের বিরোধিতা করে উত্তরবঙ্গের চা বাগানগুলিতে মিছিল তথা প্রতিবাদ সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপিও। প্রতি সভায় দলের রাজ্য স্তরের নেতারা আসবেন বলে জানানো হয়েছে। একাধিক বার চা শ্রমিকদের সভায় আসতে পারেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হলেই চা বাগানে মিছিল শুরু হবে বিজেপির।
গত পঞ্চায়েত ভোট থেকেই উত্তরবঙ্গের চা বলয়ে বিজেপির আধিপত্য ‘কমতে’ শুরু করেছে। গত লোকসভা ভোটেও তার প্রমাণ মিলেছিল। আগামী বিধানসভা ভোটের আগে চা বলয়ে তাই বিজেপির বাড়তি নজর থাকবে বলে রাজনৈতিক মহলের দাবি।
চা বাগানের জমিতে পর্যটন-সহ সহযোগী বাণিজ্যিক কাজে ৩০ শতাংশ জমি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে রাজ্য সরকার। বিরোধী বেশিরভাগই সংগঠনই তার প্রতিবাদ করেছে। বিরোধী দলগুলির চা শ্রমিক সংগঠন বাগানে বাগানে বিক্ষোভ করছে। বিজেপি দলগত ভাবেই মার্চ মাসের শেষ থেকে এপ্রিল এবং মে মাস জুড়ে চা বাগানে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের কর্মসূচি নিয়েছে। সঙ্ঘের চা শ্রমিক সংগঠনও বাগানে পাট্টা এবং চা সুন্দরী নিয়ে সক্রিয় হয়েছে। ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘের প্রভারী শম্ভুনাথ মিস্ত্রী বলেন, “আমরা চাই চা শ্রমিকদের পূর্ণাঙ্গ অধিকার। শুধু চা সুন্দরীর ঘর দিলে হবে না, জমি কোথায়? চা শ্রমিকেরা তো অনেকেই চা সুন্দরীর ঘরে যেতে চাইছেন না। খোলা চা বাগানের জমি বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার আমরাও চাই না।” তৃণমূলের অবশ্য দাবি, বন্ধ এবং রুগ্ন চা বাগানে পর্যটনের কথা বলা হয়েছে। সঙ্ঘের শ্রমিক নেতার মন্তব্য, “এই সুযোগে ভাল বাগানকে রুগ্ন না বানিয়ে দেওয়া হয়।”
বিজেপি সূত্রে খবর, চা শ্রমিকদের এক জোট করতে তিন মাস ধরে লাগাতার কর্মসূচি হবে। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি চা বলয়ের বিপুল সমর্থন পেয়েছিল। গত বিধানসভা ভোটেও পেয়েছিল। গত পঞ্চায়েত ভোট থেকে চা বলয়ে জমি ফিরে পেতে থাকে তৃণমূল। বিজেপি সূত্রে খবর, চা বলয়ের মন না পেলে উত্তরবঙ্গে বিজেপির কয়েকটি বিধানসভা হাতছাড়া হতে পারে। জলপাইগুড়ি জেলা বিজেপি সভাপতি বাপি গোস্বামী বলেন, “চা বলয় জুড়ে আন্দোলন হবে। চা বাগানের জমি প্রোমোটার এবং রাজ্য সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর হাতে তুলে দিতে দেব না।”
তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের জেলা সভাপতি তপন দে বলেন, “কোনও ভাল বা চলতে থাকা বাগানে পর্যটনের কথা বলা হয়নি। বন্ধ এবং রুগ্ন বাগানের শ্রমিকদের স্বার্থে ওই ঘোষণা করা হয়েছে। বিধানসভা ভোটের আগে ভোট পেতে বিজেপি মিথ্যা প্রচারে নেমেছে, গুজব ছড়াচ্ছে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)