তিস্তা নদীর তীর ধরে হেঁটে দেখলেন পরিবেশকর্মী সম্রাট মৌলিক। সিকিম পাহাড়ে তিস্তা নদীর একাধিক বার পথ বদলের ছবিও উঠে এল তাঁর সমীক্ষায়। ২০২৩ সালে সিকিমে লোনাক হৃদ বিপর্যয়ের কিছু দিন পরে সমতলে তিস্তার গতিপথ বদলে যাওয়ার ছবি উঠে এসেছিল সেচ দফতরের সমীক্ষায়। যদিও সে সময়ে পাহাড়ে তথা সিকিমে গতিপথ নিয়ে সরকারি সমীক্ষা হয়নি বলে দাবি। পলিজমিতে সিকিমে তিস্তার খাত কতটা উঁচু হয়েছিল, তা নিয়ে একাধিক সমীক্ষা করা হয়েছিল। সোমবার জলপাইগুড়িতে সম্রাট বলেন “নদীর গতি পরিবর্তন হয়েছে কি না, তা বোঝার জন্য কয়েকটি বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি অনুসরণ করেছিলাম। তাতে দেখা গিয়েছে, বারবার পাহাড়ি পথে তিস্তা নদী দিক পরিবর্তন করেছে।”
সিকিমের চুংথাম থেকে কোচবিহারের বাংলাদেশ সীমান্তে ঝাড়সিংহাসন গ্রাম পর্যন্ত হেঁটেছেন সম্রাট। সিকিম থেকে তিনি হাঁটা শুরু করেছিলেন ২৪ এপ্রিল। গত রবিবার কোচবিহারের বাংলাদেশ সীমান্তে হাঁটা শেষ হয় সম্রাটের। তার পর থেকে তিস্তা নদী বাংলাদেশে ঢুকেছে। এর আগেও একাধিক বার তিস্তায় সমীক্ষা করেছেন তিনি। তবে এ বারের গোটা পর্ব ছিল তিস্তা নদীর তীর ধরে হেঁটে যাওয়া। সম্রাট বলেন, “আমার উদ্দেশ্য হল, নদীর পার দিয়ে হেঁটে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করা। নদীকে কোথায় যত্ন করা হয়েছে, কারা যত্ন করছেন, কোথায় নদী অবহেলিত হচ্ছে, কোথায় নদীর ক্ষতি করা হচ্ছে— সে সব তথ্য জেনে সাধারণ মানুষের মধ্যে তা ছড়িয়ে দেওয়া।”
মূলত ২০২৩ সালের বন্যার পরে তিস্তার নদীখাত উঁচু হয়েছে। তার পরেও তিস্তা নদীতে অবাধে নির্মাণ সামগ্রী ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সম্রাট। তাঁর সঙ্গে একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও নানা সাহায্য করেছে। ‘তিস্তার সঙ্গে হাঁটা’ এই সমীক্ষায় কলকাতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সম্রাটের সঙ্গে রয়েছে। সেই সংগঠনের সদস্যরাও এ দিন জলপাইগুড়িতে এসেছিলেন। তিস্তা নদী এবং পাহাড়ের পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন সমীক্ষার সঙ্গে যুক্ত সম্রাট-সহ সকলেই। সম্রাট বলেন, “২০২৩ সালের বিপর্যয়ের পরে যে ভাবে নদীতে পলি জমেছে এবং পাহাড়ে যে ভাবে ফাটল ধরে রয়েছে, তাতে ফের কোনও বিপর্যয় হলে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।” নদীতে জলের পরিমাণও অনেক কমেছে বলে সমীক্ষায় উঠে এসেছে। বিশেষ করে নিম্নগতিতে তথা সেবকের পর থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত নদী মাঝ বরাবরও শুকিয়েছে বলেও দাবি সমীক্ষায়।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)