Advertisement
E-Paper

জীর্ণ মন্দিরে ভূমিকম্পের জের, উদ্বেগ কোচবিহারে

কোথাও দেওয়ালের পলেস্তরা খুলে পড়ছে। কোথাও আবার দেওয়ালের উপরে আগাছা গজিয়েছে। কোথাও আবার রঙ ধুয়ে ইট বেরিয়ে গিয়েছে। পরপর ভূমিকম্পের জেরে রাজাদের আমলে তৈরি কোচবিহারের বিভিন্ন প্রাচীন মন্দিরের এমনই বেহাল দশা দেখে স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্বেগ বেড়েছে।

অরিন্দম সাহা

শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৫ ০২:২৭
ধলুয়াবাড়িতে শিব মন্দিরের টেরাকোটার কাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দেখভালের অভাবে। মন্দিরের বাঁ দিক হেলে গিয়েছে।

ধলুয়াবাড়িতে শিব মন্দিরের টেরাকোটার কাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দেখভালের অভাবে। মন্দিরের বাঁ দিক হেলে গিয়েছে।

কোথাও দেওয়ালের পলেস্তরা খুলে পড়ছে। কোথাও আবার দেওয়ালের উপরে আগাছা গজিয়েছে। কোথাও আবার রঙ ধুয়ে ইট বেরিয়ে গিয়েছে। পরপর ভূমিকম্পের জেরে রাজাদের আমলে তৈরি কোচবিহারের বিভিন্ন প্রাচীন মন্দিরের এমনই বেহাল দশা দেখে স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্বেগ বেড়েছে।

অভিযোগ, বেশিরভাগ মন্দিরে ফি বছর স্রেফ একবার রং করা হয়। বছরে ওই একবার করেই লাগোয়া চত্বরের জঙ্গল সাফাই করা হচ্ছে। কিন্তু পুরাকীর্তিগুলির যথাযথ রক্ষার জন্য সুসংহত পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে না। এমনকি মন্দিরের গায়ের পলেস্তারার সঙ্গে সঙ্গে যে তার গায়ের শিল্পকলার নিদর্শনগুলিও খসে পড়ছে, তা নিয়েও কর্তৃপক্ষের হেলদোল নেই। অথচ গোটা কোচবিহার জেলা ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা বলে চিহ্নিত।

বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন কোচবিহার হেরিটেজ সোসাইটির কর্তারাও। তাঁদের বক্তব্য, সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতির ব্যাপারে নজর দেওয়া হলে ভবিষ্যতে কম্পনের ক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা অনেকটা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তারপরেও যাদের আওতাধীন ওই সব মন্দির, সেই কোচবিহার দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ড কর্তারা উদাসীন বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্য কোনও মহলেরও কোন হেলদোল নেই।

সংস্কারের অভাবে বেহাল ডাঙ্গরআই মন্দির।

দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ড সূত্রের অবশ্য দাবি, মন্দিরগুলির পরিকাঠামো নিয়ে সমীক্ষার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কোচবিহারের সদর মহকুমা শাসক তথা দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের সদস্য বিকাশ সাহা বলেন, “বোর্ডের আওতাধীন মন্দিরগুলি একতলা। সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে কোনও মন্দিরে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এমন কোন খবরও নেই। তারপরেও সমস্ত মন্দিরের পরিকাঠামোগত অবস্থা কেমন রয়েছে তা যাচাই করতে ইঞ্জিনিয়রদের একটি দলকে সমীক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তারা ওই ব্যাপারে রিপোর্ট দেবেন। সেটা দেখেই মেরামতের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” রাজ্যের পূর্ত দফতরের পরিষদীয় সচিব কোচবিহারের বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “বিভিন্ন প্রাচীন মন্দির কোচবিহারের ঐতিহ্য, পর্যটক আকর্ষণ। ওই রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে দেবোত্তর কর্তারা চাইলে সবরকম সাহায্য করা হবে।”

দেবোত্তর ও স্থানীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, বোর্ডের আওতায় রাজাদের আমলে তৈরি কোচবিহারের ২৯টি মন্দির ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ওই তালিকায় কোচবিহার সদর মহকুমার মদনমোহন মন্দির, বাণেশ্বর মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, ডাংগোরাই মন্দির, রাজমাতা মন্দির, ধলুয়াবাড়ির শিবমন্দির ছাড়াও তুফানগঞ্জের নাটাবাড়ির বলরাম মন্দির, ষান্ডেশ্বর মন্দির, দিনহাটার কামতেশ্বরী মন্দির প্রভৃতি রয়েছে।

অভিযোগ, ডাংগোরাই মন্দিরে বিক্ষিপ্ত ভাবে দেওয়ালের পলেস্তরা খুলে পড়ছে। বেশ কিছু জায়গায় দেওয়ালে আগাছা গজিয়েছে। ধলুয়াবাড়ির শিবমন্দিরটিরও জীর্ণ দশা। এই মন্দিরটির গায়ে রয়েছে পোড়ামাটির কাজ। দিনহাটার কামতেশ্বরী মন্দির, তুফানগঞ্জের বলরাম ও ষান্ডেশ্বর মন্দিরের দীর্ঘদিন পূর্ণাঙ্গ মেরামত হয়নি। সব মিলিয়ে অন্তত ১০টি মন্দিরের পরিকাঠামো ঢেলে সাজিয়ে মেরামতের ব্যবস্থা জরুরি হয়ে পড়েছে। কোচবিহার হেরিটেজ সোসাইটির সম্পাদক অরূপজ্যোতি মজুমদার বলেন, “ভূমিকম্পের মাত্রা বেশি হলেও যাতে পুরানো মন্দিরগুলির ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা এড়ান যায়, তা নিয়ে সুসংহত পরিকল্পনা দরকার। বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে ওই ব্যাপারে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। শুধু মন্দির রং ও জঙ্গল সাফাই করে লাভ হবে না। রাজবাড়ির ক্ষেত্রে আমরা আধুনিক ব্যবস্থার দাবি করেছি।” রাজ্যের পূর্ত দফতরের অবসরপ্রাপ্ত পদস্থ বাস্তুকার অমল সরখেল বলেন, “সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ হলে কম্পনে ক্ষতির আশঙ্কা কিছুটা কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’’

ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

Cooch Behar Earthquake Temple Arindam Saha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy