কমছে প্রতিমার ডাকের সাজ। মন ভরছে না শোলার কদম ফুলে। পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন শোলা শিল্পীরাও। সব মিলিয়ে কদর কমছে শোলার। যার জেরে যত দিন যাচ্ছে ছোট হচ্ছে পুরাতন মালদহ পুরসভার ২নম্বর ওয়ার্ডের নবাবগঞ্জের প্রায় ৫০ বছরের পুরানো শোলার হাটও।
পুজোর মরসুমেও ফাঁকাই পড়ে থাকে এই হাট। বিক্রি জমে না ওঠায় কম দামে শোলা বিক্রি করে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে বিক্রেতাদের। এখন শোলা সংগ্রহ করতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন বিক্রেতারা। জলাশয়ের সংখ্যা কমে যাওয়ায় জলপাইগুড়ি, রায়গঞ্জ কখনও বাহিরের কাটিহার থেকেও শোলা নিয়ে আসতে হয় বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। ‘‘ঝুঁকি, খরচ দু’টি নিয়েও মিলছে না দাম’’— খেদ ঝরে পড়ল গাজলের আদিনার বাসিন্দা শোলা বিক্রেতা বিনয়চন্দ্র সাহা, রঞ্জিত সিংহের গলায়। ডাকের সাজে খরচ বেশি হওয়ায় পুজো উদ্যোক্তারা আগ্রহ হারাচ্ছেন। শোলার তৈরি পুজোর সামগ্রীর জায়গা নিচ্ছে প্লাস্টিক। চাহিদা কমে যাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছেন জেলার শোলা শিল্পীরা। দীর্ঘদিনের পুরানো শোলার হাটও ঐতিহ্য হারাচ্ছে।
আগে নবাবগঞ্জের মাঠে বসত হাট। এখন রাস্তার দুই ধারে শোলার পসরা নিয়ে বসেন বিক্রেতারা। জুলাই, অগষ্ট ও সেপ্টেম্বর, বছরের তিনমাস, সপ্তাহের বুধবার ও রবিবার হাট বসে এখানে। বছর দশেক আগেও দেড়শোরও বেশি বিক্রেতারা আসতেন হাটে। এখন তা কমতে কমতে ষাটে এসে ঠেকেছে। বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, জলাশয়ে প্রাকৃতিক ভাবে উৎপন্ন হয় শোলা। বিহারের কাটিহারে ব্যপক পরিমাণে এই শোলা পাওয়া যায়। এ ছাড়া জলপাইগুড়ি, রায়গঞ্জ, ইটাহারেও পাওয়া যায়। একে ফুল শোলা বলা হয়। ২০০টি সোলার দাম হাজার টাকা, মান ভাল হলে তা প্রায় দেড় হাজার টাকা হয়ে যায়। মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানের বাসিন্দা পেশায় শোলা শিল্পী পার্থ মালাকার বলেন, ‘‘এখন রাজ্যে একমাত্র নবাবগঞ্জেই শোলার হাট রয়েছে। আমি দীর্ঘ বছর ধরে এখালে আসি।’’ শোলার দাম বাড়ার সঙ্গে বিক্রেতাদেরও সংখ্যা কমছে বলে জানান তিনি। বহুদিনের পুরানো জেলার এই শোলার হাটটির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার দাবি তুলেছেন ক্রেতা থেকে বিক্রেতা প্রত্যেকেই। পুরাতন মালদহ পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের কার্তিক ঘোষ বলেন, ‘‘আমাদের তরফ থেকে ওই হাটের ব্যবসায়ীদের জন্য কিছু করা যায় কি না তা খতিয়ে দেখছি।’’