চিন্তায়: নইমুনা খাতুন। নিজস্ব চিত্র
কবে বাড়ি ফিরবে ছেলে, সেই অপেক্ষায় আজাদ আলির মা নইমুনা খাতুন।
দিল্লির হিংসার কবলে পড়েছেন আজাদও। তাঁর বাড়ি উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখর সীমান্তের প্রত্যন্ত দেবীগঞ্জের থাড়ুটোলায়। কাজের খোঁজে সেখান থেকে ১৫ বছর আগে দিল্লিতে গিয়েছিলেন ওই যুবক।
হিংসায় আক্রান্ত আজাদোর বর্তমানে ঠিকানা দিল্লির একটি ত্রাণশিবির। প্রতি দিন ছেলের খোঁজখবর নিচ্ছেন নইমুনা। চিন্তায় রয়েছেন পুত্রবধূ ও নাতি-নাতনিকে নিয়েও।
কেন হিংসা ছড়িয়েছে দিল্লিতে, জানেন না আজাদের মা। শুধু জানেন, একটা কিছু গণ্ডগোল হচ্ছে রাজধানীতে। তাতে বিপাকে পড়েছেন তাঁর ছেলে। নইমুনার মন ভারাক্রান্ত কয়েক দিন ধরেই। তাঁর সন্দেহ, ছেলে স্পষ্ট করে তাঁকে কিছুই বলছে না।
একচিলতে জীর্ণ বাড়িতে থাকেন নইমুনা। রোজগেরে একমাত্র আজাদই। বৃদ্ধা জানান, তাঁর স্বামী মারা গিয়েছেন এক বছর আগে। বাড়িতে এক প্রতিবন্ধী বোন। এমন পরিস্থতিতে আজাদের বিপাকে গোটা পরিবারও অসহায় হয়ে পড়েছে। নইমুনা জানান, পড়শি এক জনের ফোনে ছেলের খোঁজ নিচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘গ্রামে এখনও কাঁচা রাস্তা। এলাকায় সে ভাবে উন্নয়ন হয়নি। নেই কোনও কাজ। সে জন্যই কাজের খোঁজে আজাদের সঙ্গে ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দিয়েছিল গ্রামেরই সাকির আলম।’’
স্থানীয় সূত্রে খবর, সাকির দিল্লির একটি হোটেলে কাজ করেন। তিনিও হিংসার কবলে পড়েছেন। সপরিবার রয়েছেন ত্রাণ শিবিরে।
সাকিরের বাবা মইনুদ্দিন বলেন, ‘‘ছেলের জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে। চারপাশে যা শুনছি। তাতে আশঙ্কা বাড়ছেই। ছেলেকে বলেছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়িতে চলে আসতে।’’
এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, উত্তর দিনাজপুরে গোয়ালপোখর এলাকা সব থেকে পিছিয়ে। এই বিধানসভা এলাকার বিধায়ক গোলাম রব্বানি। তিনি রাজ্যের শ্রম দফতরের প্রতিমন্ত্রী। কিন্ত আজাদের কথা জানতেন না মন্ত্রী। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি জানা নেই।’’
আজাদ ও সাকিরের পরিজনদের অভিযোগ, কয়েক দিন ধরে অসহায় পরিস্থিতিতে তাঁরা রয়েছেন। কিন্ত খোঁজ নেয়নি স্থানীয় পঞ্চায়েত ও ব্লক প্রশাসন। আজাদের মায়ের আক্ষেপ, ‘‘ছেলে ও বাকিরা কেমন আছে, কী অবস্থায় রয়েছে বুঝতে পারছি না। রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে।’’
সাকিরের বাবা মইনুদ্দিন দিনমজুরি করেন। ছেলের চিন্তায় কয়েক দিন ধরে কাজে যেতে পারেননি। তাঁর কথায়, ‘‘আজাদ, সাকির ১৫ বছর ধরে দিল্লিতে কাজ করছে। দু’জনেরই পরিবার দিল্লিতে। দিল্লিই তাঁদের বাড়ির মতো। পরিবার নিয়ে নিশ্চিন্তে কাজ করছিল ওরা। সেই দিল্লিতে এমন হচ্ছে ভাবতে পারছি না।’’
ওই গ্রামের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য মহম্মদ খৈয়র। তাঁর কথায়, ‘‘আজাদের মতো এই এলাকার প্রচুর ছেলে দিল্লিতে রয়েছেন। দিল্লির হিংসা নিয়ে চিন্তিত তাঁদের পরিবারগুলি। রাজ্য সরকারের তরফে দিল্লিতে থাকা শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি সুনিশ্চিত করা উচিত।’’
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, দিল্লিতে এখন এলাকার কত শ্রমিক আটকে রয়েছেন তার কোনও স্পষ্ট হিসেব নেই রাজ্যের শ্রম দফতরে। দফতরের ইসলামপুরের আধিকারিক শেখ নৌসাদ আলম বলেন, ‘‘কত জন শ্রমিক রাজধানীতে এখন রয়েছেন তা খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ গোয়ালপোখরের বিডিও অতনু ঘোষ বলেন, ‘‘আজাদদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy