হলদিবাড়িতে সাবেক ছিটমহলে ভোটের লাইনে মহিলারা। ছবিটি তুলেছেন রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আগে ভোট পরে রান্না।
হলদিবাড়ির সাবেক ছিটমহলের ক্যাম্পের বাসিন্দারা বৃহস্পতিবার ভোট দিতে যাওয়ার আগে এ কথাই বলেছেন। এত দিন অপেক্ষার পরে ভোট। তাঁদের মধ্যে প্রতিবন্ধী মহিলা থেকে সব চেয়ে বয়স্ক ভোটার সকলেই ছিলেন।
এ দিন সকালে হলদিবাড়িতে বৃষ্টি হয়েছে। সকাল সাড়ে সাতটা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি থামার পর কেউ আর অপেক্ষা করেননি। সাজ সাজ রব পড়ে গিয়েছিল হলদিবাড়ির কৃষি দফতর লাগোয়া সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের ক্যাম্পে। ক্যাম্পের বাসিন্দা হরি বর্মন বলেন, “রাতে উত্তেজনায় ঘুমোতে পারিনি। বিশ্বাস হচ্ছিল না যে আমরা সত্যি ভোট দিতে পারব। সকালে বৃষ্টি দেখে মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। বৃষ্টি থামতেই সবাই ভোট দিতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে শুরু করে দিয়েছিলাম।”
সকাল ন’টা থেকে সবাই ভোটকেন্দ্রে যাওয়া শুরু করেন। বেলা দশটার মধ্যে ক্যাম্প ফাঁকা। তার বদলে হলদিবাড়ির সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের জন্য নির্দিষ্ট ভোট কেন্দ্র পয়ামারি স্পেশাল ক্যাডার প্রাথমিক স্কুলে বিশাল লাইন হয়ে গেল। এই বুথের ১২৩ (ক) বুথটি সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের ক্যাম্পের বাসিন্দাদের জন্য নির্দিষ্ট ভোটগ্রহণ কেন্দ্র ছিল। মোট ভোটার ছিল ২৮৬ জন। মহকুমা নির্বাচন দফতর সূত্রে জানা যায়, সবাই ভোট দিয়েছেন।
এক সময় সাবেক ছিটমহল নাজিরগঞ্জে বাড়ি ছিল অনিতা রায়ের। দুর্ঘটনায় তাঁর মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যায়। আর জোড়া লাগেনি। স্বামী নৃপেন রায়ের সঙ্গে চলে এসেছেন ভারতে। হুইল চেয়ারে করে তিনি ভোট দিলেন। স্বামী নৃপেন রায় বলেন, “এই অবস্থায় এখানে এসে ভোট দেওয়া কষ্টকর। তা সত্ত্বেও ওর জেদ, ভোট দেবই। কী আর করব, কষ্ট হলেও নিয়ে চলে এলাম।” অনিতা রায় বলেন, “এত দিনে এই অধিকার পেলাম, তা কখনও ছাড়া যায়। কষ্ট হলেও ভোট দিলাম।”
হইল চেয়ারে করে ভোট দিতে এসেছেন মহেশচন্দ্র সরকার। এক সময় ২ নম্বর কোটভাজনি ছিটমহলের বাসিন্দা ছিলেন। সেখানে ছিটমহলগুলির প্রত্যার্পণ কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে ছিটমহল প্রত্যার্পণ নিয়ে আন্দোলন করেছেন। এখন বয়স ৯৭ বছর। ছিটমহল প্রত্যার্পণ হওয়ার সময় হলদিবাড়ির ক্যাম্পে চলে এসেছেন। চলতে ফিরতে পারেন না। কথাও অনেকটা জড়ানো। ছেলে কমলেশ্বরের সঙ্গে হুইল চেয়ারে করে বুথে ঢুকে ভোট দিয়েছেন। জড়ানো গলায় বললেন, “জীবনে প্রথমবার ভোট দিয়ে ভাল লাগল।”
সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের ক্যাম্পের গৃহবধূরা বুধবারই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে বাড়ির রান্নাবাড়ি এদিন পরে হবে। আগে তারা ভোট দিয়ে আসবেন। তারপর বাড়ির রান্না হবে। এদিন তাই সবাই তাঁদের সব থেকে ভাল শাড়ি পরে সেজেগুজে সকলে ভোট দিতে আসেন। পয়ামারির স্কুলে লাইনে দাঁড়িয়ে গৃহবধূ দেখন রায়, মায়ারানি রায়, ভারতী রায় বলেন, “আজ আমাদের উৎসবের দিন। আজ আমরা প্রথম দেশের মাটিতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে দেশের পুরোপুরি নাগরিক হলাম।” শুধু এঁরাই নন, এ বার প্রথম নতুন ভোটার হয়ে ভোট দিলেন জগদীশ রায়, বাদল রায়, ভারতী রায়ের মতো ভোটাররা। তাঁরা বলেন, “আমরা ভাগ্যবান। আমাদের অপেক্ষা করতে হল না। ভোট দেওয়ার বয়স হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোট দিতে পারলাম।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy