Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

মিশনারি স্কুলে হুমকি চিঠি, ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ

জলপাইগুড়ি জেলার নাগরাকাটার একটি মিশনারি স্কুলের বিরুদ্ধে নানা রকম হুমকি দেওয়া চিঠি মিলল ওই শিক্ষাঙ্গনের ভিতর থেকেই। রানাঘাট কাণ্ডের পরদিনই সেন্ট ক্যাপিটানিও নামে নাগরাকাটার ওই স্কুলে প্রথম হুমকি চিঠিটি মেলে। তারপর থেকে গত শনিবার পর্যন্ত মোট পাঁচটি চিঠি মিলেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালবাজার শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৫ ০২:৫১
Share: Save:

জলপাইগুড়ি জেলার নাগরাকাটার একটি মিশনারি স্কুলের বিরুদ্ধে নানা রকম হুমকি দেওয়া চিঠি মিলল ওই শিক্ষাঙ্গনের ভিতর থেকেই। রানাঘাট কাণ্ডের পরদিনই সেন্ট ক্যাপিটানিও নামে নাগরাকাটার ওই স্কুলে প্রথম হুমকি চিঠিটি মেলে। তারপর থেকে গত শনিবার পর্যন্ত মোট পাঁচটি চিঠি মিলেছে। সব ক’টি চিঠিই পাওয়া গিয়েছে স্কুলের হস্টেলের বারান্দা ও সিঁড়ি লাগোয়া এলাকা থেকে। সব চিঠিতেই স্কুল ছেড়ে যেতে বলা হয়েছে সিস্টারদের। না হলে তাঁদের জীবনের ঝুঁকি রয়েছে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। স্কুলে আগুন দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।

রানাঘাট কাণ্ডের পরপরই এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। খবর পৌঁছয় নবান্নেও। কড়া পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এই ব্যাপারে কোনও শিথিলতা চলবে না বলে পুলিশকে জানিয়েছেন তিনি। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকার মনে করছে গত কয়েক মাস ধরে মিশনারিদের উপরে এই ধরনের ঘটনার প্রবণতা বাড়ছে। এর কারণ খতিয়ে দেখতে একেবারে শিকড়ে পৌঁছতে হবে।

কেন এই হুমকি দেওয়া হচ্ছে তা কোনও চিঠিতেই বলা নেই। তবে প্রাথমিক তদন্তে কালো কালিতে কাঁচা হাতে হিন্দিতে লেখা চিঠিগুলি দেখে পুলিশের ধারণা, কিছু পড়ুয়াই দুষ্টুমি করে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। চা বাগানের দুঃস্থ ছাত্রীরা এই উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে পড়ে। তিন দশক পুরনো এই স্কুলে এখন ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় বারোশো। পড়াশোনার মাধ্যম হিন্দি। ছাত্রীদের একটি অংশ হস্টেলে থাকে। স্কুলের সাত জন সিস্টারও উঁচু দেওয়াল ঘেরা বিদ্যালয় চত্বরের মধ্যেই আলাদা একটি বাড়িতে থাকেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন ভিন রাজ্যের বাসিন্দা। স্কুলটি ফি বছরই কলকাতার রেড রোডে প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডে অংশ নেয়।

খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের উত্তরবঙ্গের একটি সংগঠন ইউনাইটেড ক্রিশ্চিয়ান ফোরামের তরফে এক কর্তা জানান, ওই চিঠিগুলির একটিতে স্কুলের চার্চটি পুড়িয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। আর একটি চিঠিতে স্কুলটিই পুড়িয়ে দেওয়া হবে বলে লেখা রয়েছে। একটি চিঠিতে ওই স্কুলের সবচেয়ে বৃদ্ধা সিস্টারের বাবা-মাকে খুন করা হবে বলে হুমকি রয়েছে। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, হস্টেলের সুপারই এখানকার সব থেকে প্রবীণা। তিনি ভিন রাজ্যের বাসিন্দা। ফোরামের শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ির একাংশের

দায়িত্বপ্রাপ্ত রেভারেন্ড ফাদার ললিত বলেন, “আমি শুনেছি, ওই স্কুলে একাধিক হুমকি চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। পুলিশের উচিত, বিষয়টি দ্রুত খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া।”

এ দিন স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, স্কুলের কোনও ছাত্রী এই ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে সেই আশঙ্কা থাকলেও রানাঘাট কাণ্ডের পরে তাঁরা কোনও ঝুঁকি নিতে চাননি। এর পরই সক্রিয় হয়ে ওঠে পুলিশ। ভুটান সীমান্ত লাগোয়া চাম্পাগুড়ির এই মিশনের বাইরে সর্ব ক্ষণের জন্যে পুলিশ মোতায়েনও করে দেওয়া হয়। তবে কোন পুলিশ আধিকারিকই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাইছেন না। স্কুলের অন্যতম প্রধান কর্ত্রী মাদার অ্যানেসও এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে নারাজ। তবে জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “রানাঘাটের ঘটনার জেরে নাগরাকাটার ঘটনাটিকে লঘু করে দেখা হচ্ছে না। তাই স্কুলে নজরদারি রাখা হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE