লড়াইটা বিধানসভা এলাকার। কিন্তু সেই লড়াইয়ের বৃত্তের কেন্দ্র যেন পুরসভার একটি ওয়ার্ড! কারণটা আর কিছুই না, বিধানসভার তিন যুযুধান প্রার্থীর বাসস্থানই এই ওয়ার্ড।
বিধানসভার নাম আলিপুরদুয়ার। এলাকাটি হল পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডের সূর্যনগর থেকে বিধানসভা নির্বাচনে লড়ছেন তিন প্রার্থী। পুরভোটে আট নম্বর ওয়ার্ডটি সিপিআইয়ের দখলে থাকলেও তৃণমূল, বিজেপি ও কংগ্রেস প্রার্থীরা এখানকারই বাসিন্দা। লড়াইয়ে আরএসপির প্রার্থী থাকলেও তিনি শহরের নিউ আলিপুরদুয়ার এলাকার নেতাজির রোড এলাকার বাসিন্দা। একটি ওয়ার্ড থেকে তিনটি দলের প্রার্থী হওয়ায় গুঞ্জন উঠেছে পাড়ায়।
তৃণমূলের সৌরভ চক্রবর্তী, কংগ্রেসের বিশ্বরঞ্জন সরকার ও বিজেপির কুশল চট্টোপাধ্যায়, তিন জনেরই বাড়ি এই সূর্যনগরে। তাতে পাড়ার বাসিন্দারা যেন খানিকটা গর্বই বোধ করছেন! তাঁদের আশা, এই তিন জনের মধ্যে থেকেই এক জন জিতবেন। তাঁরা বলছেন, যেই জিতুক না কেন, সে তো আমাদের পাড়ারই ছেলে হবে। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের নিরিখে আলিপুরদুয়ার বিধানসভায় এগিয়েছিল কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। এ বছর তারা আলাদা লড়ছে। দ্বিতীয় স্থানে ছিল আরএসপি, তৃতীয় স্থানে ছিল বিজেপি। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে প্রথম স্থানে আসে আরএসপি, দ্বিতীয় স্থানে আসে তৃণমূল, তৃতীয় স্থানে বিজেপি ও চতুর্থ স্থানে আসে কংগ্রেস। তাই ভোট বাক্সে এ বার কার পাল্লা ভারী হবে তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিআই কাউন্সিলর সুভাষ কর চৌধুরী বলেন, ‘‘ওয়ার্ডেই তিন প্রার্থী থাকায় খুশি বাসিন্দারা। তবে কে জিতবে সেটাই দেখার।’’
তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা প্রার্থী সৌরভ চক্রবর্তীর সঙ্গে কংগ্রেস প্রার্থী বিশ্বরঞ্জন বাবুর সঙ্গে পুরনো সর্ম্পক রয়েছে। রাজনৈতিক মহলে গুরু-শিষ্য বলেও ডাকা হয় তাঁদের। কংগ্রেস ছাড়ার পর সৌরভের সঙ্গে রাজনৈতিক দূরত্ব বাড়লেও ব্যক্তিগত সর্ম্পক এখনও ভালো। ২০১১ সালে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর নতুন জেলা গঠনের পিছনে সৌরভের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে দাবি তাঁর অনুগামীদের। তবে দু’দশক ধরে জেলার দাবিতে আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন আরএসপির নির্মল দাস। নির্মলবাবু আগে পাঁচবার বিধানসভা নির্বাচন জিতেছেন। তাছাড়া কংগ্রেসের জেলা সভাপতি বিশ্বরঞ্জন সরকারও জেলা আন্দোলনের মুখ ছিলেন। তাই ভোটে পৃথক জেলার বিষয়টিকে হাতিয়ার করতে চাইছে সকলেই।
আবার, বিজেপির প্রার্থী কুশল চট্টোপাধ্যায়ের বাবা ভীষ্ম চট্টোপাধ্যায় ১৯৭২-৭৭ পর্যন্ত কুমারগ্রাম এলাকায় কংগ্রেসের বিধায়ক ছিলেন। রাজনৈতিক পরিবেশ বড় হওয়ায় এই প্রার্থী লড়াইয়ের ময়দানে নামলেও সাংগঠনিক ভাবে তৃণমূল, আরএসপি ও কংগ্রেস তিন দলই বিজেপির থেকে আলিপুরদুয়ারে এগিয়ে বলে মত বাসিন্দাদের। তৃণমূল প্রার্থী সৌরভবাবুর বিয়েতে গিয়েছিলেন আরএসপির প্রার্থী নির্মল দাস। সৌজন্যের খাতিরে দুজনেই হাত মিলিয়েছিলেন। ভোট ঘোষণা হওয়ার পর নির্মলবাবু জেলা ঘোষনার জন্য তার দীর্ঘ দিনের লড়াইকেই প্রাধান্য দিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন।
তবে একই ওয়ার্ড থেকে তিনজন প্রার্থী হওয়ায় বাসিন্দারা উৎসাহিত হলেও সে সব ভাবতে নারাজ প্রার্থীরা। সৌরভবাবু বলেন, “কারা কারা প্রার্থী সেটা কোনও বিষয় নয়। ভোট হবে বিধানসভা ক্ষেত্রে। সেখানে উন্নয়নের নিরিখেই ভোট হবে।” বিশ্বরঞ্জনবাবুও বলছেন, ‘‘ওয়ার্ডে তিন জন প্রার্থী। অনেকে সে কথা বলছে। তবে শাসক দলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মানুষ রুখে দাড়াবে।’’ বিজেপি প্রার্থী কুশলবাবুর কথায়, ‘‘আমাদের ওয়ার্ডেই তিনজন প্রার্থী। তবে সেই সব নিয়ে ভাবনার সময় নেই। প্রচারে ব্যস্ত।’’ অন্য পাড়া নেতাজি রোডের বাসিন্দা নির্মলবাবু বলছেন, “লড়াইটা হবে শাসক দলের সঙ্গে। বাকিদের গুরুত্ব দিচ্ছি না।”
বিদায়ী কংগ্রেস বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায় অবশ্য এ বার বাম-কংগ্রেসের জোটের বিরুদ্ধে সরব হয়ে ভোটে দাঁড়াননি। তিনি এক ওয়ার্ডে তিন প্রার্থীর বিষয়টি শুনে তাঁর মন্তব্য, ‘‘ওয়ার্ডের লোকেরা ভাগ্যবান। সেখানে সব নেতারা থাকেন। তাই বর্ষায় ওয়ার্ডের অর্ধেক অংশ জলে ডুবে থাকে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy