Advertisement
E-Paper

তিন দুষ্কৃতী ধৃত, মিলল জাল নোট, পুলিশেরই আগ্নেয়াস্ত্র

খড়দহ থেকে গুয়াহাটি, যেখানেই ‘অপারেশন’ হতো, গাড়ি নিয়ে-ই পৌঁছত তিন জন। গোপনীয়তা বজায় রাখতে ‘অপারেশনে’র পর নানা ঘুরপথে শিলিগুড়ি ফিরত। সে কারণেই গাড়ি ব্যবহার। শিলিগুড়ির বাইরে গেলে হোটেল বা বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকত তারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৫ ০২:৩৪
উদ্ধার হওয়া জাল নোট ও আগ্নেয়াস্ত্র। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

উদ্ধার হওয়া জাল নোট ও আগ্নেয়াস্ত্র। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

খড়দহ থেকে গুয়াহাটি, যেখানেই ‘অপারেশন’ হতো, গাড়ি নিয়ে-ই পৌঁছত তিন জন। গোপনীয়তা বজায় রাখতে ‘অপারেশনে’র পর নানা ঘুরপথে শিলিগুড়ি ফিরত। সে কারণেই গাড়ি ব্যবহার। শিলিগুড়ির বাইরে গেলে হোটেল বা বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকত তারা। খরচ সামলাতে, পেট্রোল খরচ, খাওয়াদাওয়া, ঘর বা হোটেল ভাড়া সবই জাল নোটেই মেটাতো। মঙ্গলবার ‘অপারেশনে’ যাওয়ার সময়েই পুলিশের হাতে ধরা পড়ল বাংলা, রাজু ও গৌতম। তাদের থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রায় ৪০ হাজারের জাল নোট ও পুলিশেরই খোয়া যাওয়া একটি নাইন এমএম রিভলবার, ৫টি তাজা কার্তুজ। তিনজনের বিরুদ্ধে শিলিগুড়ি, উত্তর ২৪ পরগনা, অসম মিলিয়ে অন্তত ৬টি অভিযোগের খোঁজ পেয়েছে পুলিশ।

মাসদুয়েক আগে শিলিগুড়ি পুলিশের ভক্তিনগর থেকেই অসম থেকে গয়না নিয়ে আসার পথে ধরা পড়েছিল তিন জন। সে সময় তাদের গাডিটিকেও বাজেয়াপ্ত করেছিল পুলিশ। জেল থেকে ছাড়া পেয়েই ‘অপারেশন’ শুরুর মতলব আটছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। এলাকায় তিনজনকে ঘোরাফেরা করতে দেখে পুলিশের কাছে খবর পৌঁছয় বলে জানা গিয়েছে। গত মঙ্গলবার শিলিগুড়ি লাগোয়া ইএম বাইপাস থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের জেরা করে সেই জালনোট চক্রের হদিশও মিলবে বলে পুলিশ আশাবাদী।

শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা বলেন, ‘‘এই দলটির বিশেষত্ব হল এরা বাড়ি ছাড়া অন্য কোথাও চুরি করত না। রাজ্য তো বটেই, গুয়াহাটির একটি নার্সিংহোমের কর্ণধার চিকিৎসকের বাড়িতেও বড় ধরনের চুরি করে এই দলটি। অনেকদিন ধরেই চক্রটির উপর নজর রাখা হয়েছিল। ধৃতদের বিরুদ্ধে যে সব থানায় অভিযোগ রয়েছে, সেখানে জানানো হয়েছে। জেরা করে আরও কিছু তথ্য মিলবে।’’

আগ্নেয়াস্ত্র-সহ ধৃতেরা। শিলিগুড়িতে।

পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত তিনজনের মধ্যে দু’জন শিলিগুড়ির বাসিন্দা অন্যজন হাওড়ার সালকিয়ার। ধৃত গৌতম মালি ভক্তিনগরের পান্তাপাড়া এবং মানিক দাস ওরফে বাংলা ফকদই বাড়ি এলাকার বাসিন্দা। ধৃত অন্যজন রাজু রায় হাওড়ার সালকিয়ার বাসিন্দা। রাজু মূলত গাড়ি চালক। বছর কয়েক আগে সে শিলিগুড়িতে এসে বাড়ি ভাড়া নেয়। সে সময়ই মানিক এবং গৌতমের সঙ্গে পরিচয় হয় রাজুর। ভক্তিনগরে বেশ কয়েকটি বাড়িতে ছোট ধরনের চুরির পরে, শিলিগুড়ি থানা লাগোয়া মিলনপল্লির পুলিশ আবাসনেই তিনজন চুরি করে বলে অভিযোগ। এর পরে অসমের এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে চুরির অভিযোগ রয়েছে এদের বিরুদ্ধে।

পুলিশ জানিয়েছে, চলতি বছরের মার্চ মাসে উত্তর ২৪ পরগনার খড়দহ থানা চত্বরে একটি পুলিশ কোয়ার্টারে চুরি করে এই দলটি। সেখান থেকেই নাইন এমএম রিভালবরটি হাতে আসে দুষ্কৃতীদের। পুলিশের দাবি, জেরায় সব কটি ঘটনার কথাই স্বীকার করেছে দুষ্কৃতীরা।

এর আগেও একাধিকবার এই তিনজন ধরা পড়লেও, তাদের থেকে জাল নোট উদ্ধার হওয়ার ঘটনা এই প্রথম বলে পুলিশের দাবি। নিজেদের প্রয়োজনেই দলটি জাল নোট পাচার চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলে বলে দাবি। জেরায় পুলিশ জেনেছেন, রাজ্যে, ভিনরাজ্যে যেখানেই দলটি চুরি করতে যেত, গাড়িতে যেত। পুলিশের চোখে ধুলো দিতে মাঝারি মানের হোটেলে উঠত বা কোনও বাড়ি ভাড়া করত। সেখানকার স্থানীয় দুষ্কৃতীদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখতে হতো। সবই বিপুল খরচের বিষয়। সে কারণেই জাল নোট সংগ্রহ করতে থাকে তারা। জাল নোটেই হোটেল খরচ, পেট্রোল বিল, খাওয়ার মেটাতো তারা। পুলিশের একটি অংশের ধারণা, মালদহের একটি চক্রের সঙ্গে এদের যোগাযোগ গড়ে উঠেছিল। তবে সে বিষয় এখনই নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ কর্তারা। শিলিগুড়ি পুলিশের এসিপি (পূর্ব) পিনাকী মজুমদার বলেছেন, ‘‘ধৃতদের জেরা চলছে। জেরায় আরও তথ্য মিলবে।’’

criminals fake note khardaha siliguri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy