ভোটের একদিন আগে উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের একাধিক ওয়ার্ডে বহিরাগত দুষ্কৃতীদের জড়ো করে এলাকায় তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার দুপুরে সিপিএমের কালিয়াগঞ্জ জোনাল সম্পাদক দেবব্রত সরকার, পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান তথা ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী অরুণ দে সরকার ও কালিয়াগঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক প্রমথনাথ রায় পৃথকভাবে পুলিশ ও নির্বাচন কমিশন নিযুক্ত পর্যবেক্ষকের কাছে এই অভিযোগ জানান। অন্যদিকে, এদিন বিজেপির তরফে কোথাও কোনও অভিযোগ জানানো না হলেও দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর চক্রবর্তী কালিয়াগঞ্জের ১৭টি ওয়ার্ডের দলীয় কর্মী সমর্থকদের কাছ থেকে বহিরাগতদের বিষয়ে খোঁজখবর নেন।
জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজা জানান, বহিরাগত নিয়ে তিনিও অভিযোগ শুনেছেন। অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন শেষ করতে পুলিশ সবরকম পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি বহিরাগতদের রুখতে নানা এলাকায় তল্লাশি শুরু করেছে। তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনও বৈধ কারণ ছাড়া কালিয়াগঞ্জে কোনও বহিরাগতকে পাওয়া গেলে তাদের গ্রেফতার করা হবে। পুলিশের পাশাপাশি বিএসএফও নির্বাচনের দিন শহরে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে।’’ জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচনী আধিকারিক রণধীর কুমারের বক্তব্য, ‘‘নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন শেষ করতে প্রশাসন সবরকম পদক্ষেপ করবে। কারও কোনও নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে, অবশ্যই তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
সরকারিভাবে এই বিবৃতি দিলেও পুলিশ ও প্রশাসনের একাধিক কর্তার আশঙ্কা, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য কালিয়াগঞ্জ ও ইসলামপুরে শাসকদলের কর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ নিলে নির্বাচনের পর তাঁদের বদলি বা শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে। জানা গিয়েছে, নির্বাচন চলাকালীন যাতে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয় বা শাসকদলের বিরুদ্ধে বিরোধীরা কোনও অভিযোগ তুলতে না পারে তারজন্য পুলিশ প্রশাসনের তরফে জেলা তৃণমূল নেতাদের কাছে সুষ্ঠভাবে নির্বাচন পরিচালনায় সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
এদিকে শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মজলিশপুর এলাকায় একাধিক তৃণমূল নেতার বাড়িতে বহিরাগত দুষ্কৃতীদের এনে জড়ো করা হয়েছে বলে কালিয়াগঞ্জ থানার আইসি শ্রীমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অভিযোগ করেন সিপিএমের কালিয়াগঞ্জ জোনাল কমিটির সম্পাদক দেবব্রতবাবু। এদিন কালিয়াগঞ্জের পলিটেকনিক কলেজে ভোটসামগ্রী বিতরণ কেন্দ্রে গিয়ে আইসির সঙ্গে দেখা করেন তিনি। পরে দেবব্রতবাবু বলেন, ‘‘নির্বাচনের দিন বিভিন্ন ওয়ার্ডে বুথজ্যাম, বিরোধী দলের পোলিং এজেন্টদের মারধর সহ ছাপ্পাভোট দেওয়ানোর জন্য তৃণমূল বহিরাগত দুষ্কৃতীদের জড়ো করেছে। পুলিশকে আমি সেকথাই বলেছি।’’
অন্যদিকে, এদিন বিকালে কালিয়াগঞ্জ পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান তথা ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী অরুণবাবু ও স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক প্রমথনাথবাবু নির্বাচন কমিশন নিযুক্ত কালিয়াগঞ্জের পর্যবেক্ষক দীপঙ্কর মণ্ডলের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁদের অভিযোগ, কালিয়াগঞ্জের ৩,৮,১০,১৫ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে তৃণমূলের বহিরাগত দুষ্কৃতীরা তান্ডব শুরু করেছে। তাঁরা বলেন, ওই পাঁচটি ওয়ার্ডে বৃহস্পতিবার রাত থেকে তৃণমূলের বহিরাগত দুষ্কৃতীরা কংগ্রেস প্রার্থী, কর্মী, সমর্থক ও বিরোধী মনোভাবাপন্ন ভোটারদের হুমকি দিচ্ছে। সেইসঙ্গে বাসিন্দাদের আতঙ্কে রাখতে বাইক বাহিনীর তান্ডবও শুরু হয়েছে। তাঁরা বলেন, ‘‘আজ নির্বাচনের দিন কালিয়াগঞ্জের কোনও ওয়ার্ডে শাসক দলের দুষ্কৃতীরা বুথজ্যাম, ছাপ্পাভোট সহ কোনও সন্ত্রাস সৃষ্টির চেষ্টা করলে কংগ্রেসের তরফে নিয়ম মেনে পুলিশ, প্রশাসন ও পর্যবেক্ষককে তা জানানো হবে। শাসক দলের চাপে কেউ কোনও ব্যবস্থা না নিলে কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকেরা প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন। তাতে আইনশৃঙ্খলার কোনও অবনতি হলে তার দায় শাসক দল ও রাজ্য সরকারের উপর বর্তাবে।’’
বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক শঙ্করবাবুর অভিযোগ, শাসক দলের বহিরাগত দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করলে নির্বাচনের পর পুলিশকে শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে, সেই আশঙ্কা করে পুলিশ বিরোধীদের নানা অভিযোগ পাওয়ার পরেও উদাসীন মনোভাব দেখাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘কালিয়াগঞ্জের কোন কোন ওয়ার্ডে বহিরাগতরা রয়েছে, ও তারা কী ধরণের সন্ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করছে, সেই বিষয়ে ১৭টি ওয়ার্ডের দলীয় কর্মী সমর্থকদের নজরদারি রাখতে বলে হয়েছে।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্য অবশ্য বিরোধীদের সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, কংগ্রেস পরিচালিত কালিয়াগঞ্জ ও ইসলামপুর পুরসভার গত দুই দশকের ধারাবাহিক অনুন্নয়নের সৌজন্যে বাসিন্দারা এবছর তৃণমূলকে ওই দুই পুরসভা উপহার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘এবছর হার নিশ্চিত বুঝতে পেরে কংগ্রেস সিপিএম ও বিজেপি বাসিন্দাদের বিভ্রান্ত করতে একযোগে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও মিথ্যা অভিযোগ তুলছে।’’