কলেজ সংসদের ঘরে বসে দিব্যি চলছিল মদ্যপান। আর পাশ থেকে সেই দৃশ্য ভিডিয়ো রেকর্ডিং করেছিলেন এক জন। মুহূর্তের মধ্যে তা ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল সমাজ মাধ্যমে। কোচবিহারের তুফানগঞ্জ কলেজের ওই ঘটনা সাড়া ফেলে দিয়েছিল চারদিকে। কোনও রকমে অভিযোগ অস্বীকার করে গা ঢাকা দিয়েছিলেন শাসক দলের এক ছাত্র নেতা। অভিযোগ, শুধু কোচবিহার নয়, মালদহ থেকে দক্ষিণ দিনাজপুর, উত্তর দিনাজপুর, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারে কলেজের ইউনিয়ন রুমগুলি শাসক দলের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। কসবা-কাণ্ডের পরে কলেজগুলির নিরাপত্তা নিয়ে তাই নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বসে মদ্যপান চলতে পারে, সেখানে যে কোনও মুহূর্তে আরও বড় অপরাধমূলক ঘটনা যে ঘটতে পারে, তা নিয়ে দ্বিধা নেই কারও। আর তাই দাবি উঠেছে, কলেজের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হোক। সংসদ ঘরেও থাকুক নজরদারি ক্যামেরা। কোনও ভাবেই যাতে বহিরাগতদের দৌরাত্ম্য কলেজে বজায় না থাকে, সে বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করুক।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজই হোক বা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা উত্তরের কলেজগুলিকে ঘিরে নানা অভিযোগ রয়েছে। বিরোধী ডিএসওর অভিযোগ, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তির সময় পড়ুয়াদের ইউনিয়ন ঘরে ডাকা হত তাঁদের থেকে তোলা তুলতে। হস্টেল ঘর বিলি সবই ইউনিয়ন রুম থেকে হত। কেউ বিরোধিতা করলে হুমকি, শাসানিও চলে। আর জি কর-কাণ্ডের পরে তা নিয়ে হইচই হয়। এর পর হুমকি, শাসানি কিছুটা কমেছে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজগুলির ইউনিয়ন রুমও শাসক দলের ছাত্রদের দখলে। অভিযোগ, তাঁদের মাধ্যমে বহিরাগতরাও সেখানে অবাধে যাতায়াত করে, আড্ডা মারে।
যদিও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যবেক্ষক মিঠুন বৈশ্য বলেন, ‘‘এ সব কোনও ব্যাপার নেই। মনগড়া কথা বললেই তো হবে না। কোথাও কোনও বিক্ষিপ্ত ঘটনার সঙ্গে সব জায়গা এক করে দেখা ঠিক নয়।’’ ডিএসওর কোচবিহার জেলাসম্পাদক আসিফ আলম বলেছেন, ‘‘কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ অফিস দখল করে রেখেছে শাসক দলের সংগঠন। সেখানে বহিরাগতদের আড্ডা হচ্ছে। অসামাজিক কাজহচ্ছে। এ সব কড়া হাতে বন্ধ করা উচিত।’’
রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের ঘর অবশ্য বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসার ও মেডিক্যাল অফিসারের ঘর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সদর গেটের পাশে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গার্ড রুম। গার্ড রুমের বাইরের একাংশের দেওয়ালে কাঁচ লাগানো রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দুর্লভ সরকার বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে প্রচুর নজর ক্যামেরা রয়েছে। ইউনিয়ন রুম ও গার্ড রুমও কলেজের নিরাপত্তাকে মাথায় রেখে ব্যবহার করা হচ্ছে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)