E-Paper

বউমার সরকারি চাকরির আবেদন তোরাবের

কলকাতায় নিকাশি নালা সাফাই করার কাজ করতেন তোরাবের তিন ছেলে। অত্যন্ত অভাবি, ভূমিহীন পরিবার।

বাপি মজুমদার 

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:৫০
মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের পূর্ব তালসুরের বাড়িতে তোরাব আলি ও রোজিনা বিবি। নিজস্ব চিত্র

মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের পূর্ব তালসুরের বাড়িতে তোরাব আলি ও রোজিনা বিবি। নিজস্ব চিত্র

ঘুমের ঘোরে আজও চমকে ওঠেন তোরাব আলি। দুই চোখে জলের ঝাপটা দিয়ে ফের ঘুমোনোর চেষ্টাতেও ঘুম আসে না। চার বছর ধরে এ ভাবেই দিন কাটছে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের পূর্ব তালসুরের তোরাব আলি ও তাঁর স্ত্রী রোজিনা বিবির। একই দিনে একই সঙ্গে মৃত তিন ছেলের শোক আজও ভুলতে পারেননি ওই দম্পতি। এই আবহেই শুক্রবার তাঁরা খবর পান, তাঁদের করা মামলায় আদালত আরও বাড়তি ২০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তা জেনে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন তোরাব। তবে শুধু টাকা নয়, পুত্রবধূর জন্য ছোটখাট সরকারি কোনও কাজ দেওয়ার জন্যও আবেদন করেছেন তোরাব।

কলকাতায় নিকাশি নালা সাফাই করার কাজ করতেন তোরাবের তিন ছেলে। অত্যন্ত অভাবি, ভূমিহীন পরিবার। তাঁদের সঙ্গেই কাজ করতেন প্রতিবেশী এক যুবক। ২০২১ সালের মে মাসে কুঁদঘাটে ম্যানহোলে কাজ করতে নেমে বিষাক্ত গ্যাসে অসুস্থ হয়ে মারা যান তোরাবের তিন ছেলে মহম্মদ আলমগির (২৮), জাহাঙ্গির আলম (২৩) ও সাবির আলম (১৭)। মৃত্যু হয় প্রতিবেশী লিয়াকত আলিরও (২৮)। লিয়াকত দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় ছিলেন। ওই ঘটনার পরে তাঁদের ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। সেই টাকার কিছুটা খরচ করে ভাঙাচোরা মাটির বাড়ি ভেঙে ইটের গাঁথনি দেওয়া পাকা ঘর তৈরি হয়েছে। তবে এখনও পলেস্তারা করতে বা দরজা, জানালা তৈরি করতে পারেননি। বাকি সঞ্চিত কিছু টাকা দিয়ে সংসার চলছে। সেই টাকাও শেষের পথে। ওই সময় তাঁদের পাশে দাঁড়ায় নানা সংগঠন। তাঁদেরই সহযোগিতায় বাড়তি ক্ষতিপূরণের মামলা করেন তাঁরা। সেই মামলায় আরও ২০ লক্ষ করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বলে আদালত নির্দেশ দিয়েছে।

বাড়িতে বড় ছেলে আলমগিরের স্ত্রী জ্যোৎস্নারা বিবি এবং তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তোরাব বলেন, ‘‘আমি আর কাজ করতে পারি না। ছেলেদের মৃত্যুর পরে অনেকেই বউমার জন্য একটা সরকারি কাজের আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু পরে আর কেউই খোঁজ নেয়নি। বউমার একটা কাজ হলে ওরা বাঁচত। ওদের মৃত্যুর দায় কি সরকার এড়াতে পারে? নিয়ম মেনে কাজ করানো হলে ছেলেদের মৃত্যু হত না।’’ এ দিন লিয়াকতের মা কোহিনুর খাতুন এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘বউমাকে সরকারি কোনও ছোটখাট একটা কাজ দেওয়া হলে ওরাও বাঁচত, আমরাও বাঁচতাম।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

harishchandrapur

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy