Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

বাংলো ঘিরে পর্যটন ভাবনা

মকাইবাড়ি নামটা শুনলেই চা-বিলাসীদের ছুঁয়ে যায় মনমাতানো সুগন্ধী চায়ে চুমুক দেওয়ার অনুভব। তুলনাহীন প্রথম শ্রেণির এই চায়ের সুখ্যাতি শুধু ভারতে নয় বিশ্বের দরবারেও পৌঁছে গিয়েছে।

বেহাল: বান্দাপানি চা বাগানের বাংলোর বেহাল অবস্থা। এগুলো সংস্কার করেই ‘টি ট্যুরিজিম’-এর কথা ভাবা হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র

বেহাল: বান্দাপানি চা বাগানের বাংলোর বেহাল অবস্থা। এগুলো সংস্কার করেই ‘টি ট্যুরিজিম’-এর কথা ভাবা হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র

অনিতা দত্ত
শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৭ ০২:১৫
Share: Save:

মকাইবাড়ি নামটা শুনলেই চা-বিলাসীদের ছুঁয়ে যায় মনমাতানো সুগন্ধী চায়ে চুমুক দেওয়ার অনুভব। তুলনাহীন প্রথম শ্রেণির এই চায়ের সুখ্যাতি শুধু ভারতে নয় বিশ্বের দরবারেও পৌঁছে গিয়েছে। বেজিং অলিম্পিক কিংবা ব্রাজিল বিশ্বকাপে অফিসিয়াল টির সম্মান পেয়েছিল মকাইবাড়ির চা। ২০১৩-তে এই বাগানের উৎপাদিত চা প্রতি কেজি ১ লক্ষ ১১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। যা ভারত তো বটেই বিশ্বের চা বাজারেও সর্বকালীন রেকর্ড। এই বসন্তে যখন চা গাছে ফুল ফুটতে শুরু করেছে তখনই আগুনে ভস্মীভূত হয়ে গেল মকাইবাড়ির শতাব্দী-প্রাচীন ঐতিহ্যপূর্ণ বাংলোটি।

১৮৩৫ সাল। দার্জিলিঙে যাওয়ার পথে পাঙ্খাবাড়ির পাহাড়ি পথের ধারে তখন চা গাছ কোথায়? তেঁতুলিয়া আউটপোস্টের ক্যাপ্টেন স্যামলারের নেতৃত্বে গোর্খা রেজিমেন্টের তাঁবু পড়ে এখানে। পাহাড়ের ঢালে ছড়ানো হয় মকাই বা ভুট্টার দানা। তার থেকেই নাম হল মকাইবাড়ি। ১৮৫০-এ গিরীশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় স্যামলারের পরামর্শে জমির স্বত্ব লাভ করেন।

১৮৫৯-এ পাহাড়ের ঢালে শুরু হল দুটি পাতা একটি কুঁড়ির চাষ। তৈরি হল ফ্যাক্টরি। ডিরেক্টরস বাংলোটিও এই সময়েই তৈরি। চায়ের পাশাপাশি বাংলোটির আকর্ষণও কম নয়। বস্তুত দার্জিলিঙ, তরাই, ডুয়ার্সের চা-বাগানের এই বাংলোগুলি গঠন বৈচিত্রে স্বতন্ত্র। এর অনেকগুলিই হেরিটেজ সম্মানের দাবিদার। এই তালিকায় রয়েছে ডুয়ার্সের সুভাষিনী, জুরান্তি, ফাগু, দার্জিলিঙের সেলিমহিল, গ্লেনবার্ন, তরাইয়ের লোহাগুড়ি, পাহাড়ঘুমিয়া, নকশালবাড়ি, মেরিভিউ, পানিঘাড়া।

বাংলোগুলি বেশির ভাগই আগাগোড়া কাঠের দোতলা। সুবিশাল বসার ঘর, শোওয়ার ঘর, খাওয়ার ঘর। ভিতরেই রয়েছে লাইব্রেরি, বিলিয়ার্ডস রুম। কোনও বাংলোর চৌহদ্দিতে সুইমিংপুল। কোনও বাংলোর ভিতরে ডান্স রুম। সামনে সুবিশাল বারান্দা-সহ প্রায় প্রতিটি বাংলোতেই রয়েছে ফায়ার প্লেস। সেকালে তো বৈদ্যুতিক আলো ছিল না, ছাদের বেশ কিছু জায়গায় ট্রান্সপারেন্ট শিট লাগানো থাকত। রান্নাঘর হত বাংলো থেকে বেশ খানিকটা দূরে। রান্না হত বড় বড় উনুনে। যা ইংল্যান্ডে তৈরি।

কোনও কোনও বাংলোর দেওয়ালে আজও শোভা পাচ্ছে বাইসন বা হরিণের শিং কিংবা চিতাবাঘের চামড়া। কাঁচের বাসন আর আসবাবে আভিজাত্যের গর্ব। কোথাও আবার হারিয়ে যাওয়া কলের গানের হদিশ। চাইলেই পাওয়া যেতে পারে পছন্দের মাল্টিকুইজিন থালি, রকমারি স্ন্যাক্স। ব্রেকফাস্ট হোক কিংবা বিকালের চা জলখাবার অথবা লাঞ্চ বা ডিনার শেষে সুবাসিত গরম চায়ে চুমুক। এ সব কিছু নিয়েই হাজির কার্সিয়াঙের গ্লেনবার্ন।

শুধু কি গঠনশৈলী?

লেখক গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্য জানালেন, বাংলোগুলির চারপাশে নিসর্গও অসাধারণ। যত দূর চোখ যায় সমান করে ছাঁটা চা বাগিচা যেন সবুজ গালিচা। তার গা ঘেঁষেই দার্জিলিঙ বা ভুটান পাহাড়ের চূড়া। টি ট্যুরিজমের হাত ধরে বাংলোগুলিও পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। উপরি পাওনা পাতা তোলা থেকে চা পাতার তৈরির কলাকৌশল চাক্ষুস করা।

অনেক বাগান অচল হয়ে পড়ায় বাংলোগুলি ঠিক মতো রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না বলে জানান, চা বিশেষজ্ঞ রামঅবতার শর্মা। কালচিনি, রায়ঘাটা, রেডব্যাঙ্ক, কুমলাইয়ের বাংলোগুলির অবস্থা সঙ্গীন। কোনও বাংলো ঝোপঝাড় আগাছায় ভর্তি। কোথাও জানালা, আসবাব চুরি গিয়েছে। কোথাও বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা এত দিনের পুরনো, যা থেকে মকাইবাড়ির মতো ঘটনা ঘটা অসম্ভব নয়। রাম অবতারবাবু জানান, বাগান মালিকরা অতিরিক্ত খরচ করতে অনিচ্ছুক। গ্লেনবার্ন, ফাগু, সিংটাম, সৌনেনী চা বাগান ঘিরে টি ট্যুরিজম গড়ে ওঠায় এই বাংলোগুলির রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে। পর্যটকেরা থাকছেন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি তরফে টি ট্যুরিজমের উপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tourism planning Makaibari Bungalow
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE