পাহাড়ি পাকদণ্ডি পথে টয়ট্রেনে চেপে ঘুরে বেড়ানো পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। আগ্রহের কমতি নেই স্থানীয়দেরও। দার্জিলিঙের টয়ট্রেন পাহাড়ের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু বছর গড়িয়ে গেলেও পাহাড়-সমতলে টয়ট্রেন চলাচল নিয়মিত হয়নি।
১৮৮১ সাল থেকে পাহাড় ও সমতলের রোজ চলাচল করে টয়ট্রেন। নব্বইয়ের দশকের শেষে বিশ্ব হেরি়টেজ স্বীকৃতিও পায় টয়ট্রেন। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এবং অনিয়মিত যাতায়াতের ফলে ইউনেস্কোর পরবর্তী সমীক্ষাতে টয়ট্রেনের শিরোপা অটুট থাকবে কি না তা নিয়ে সন্দিহান রেল কর্তারাই।
গত বছরের শেষের দিকে রেলের তরফে জানানো হয়েছিল ইঞ্জিন মেরামতির কারণে কিছুদিনের জন্য সপ্তাহে তিনদিন টয়ট্রেন চলবে। গত নভেম্বর মাসে শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটার রেলপথ সুরক্ষিত ও নিরাপদ বলে ঘোষণা করে রেল। তারপরেও শুরু হয়নি টয়ট্রেনের নিত্য যাতায়াত। কেন রোজ চলছে না ট্রেন? উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের কাটিহার ডিভিশনের ডিআরএম উমাশঙ্কর যাদব বলেন, ‘‘যাত্রী সংখ্যা নিয়ে সমস্যা রয়েছে।’’ পর্যাপ্ত যাত্রী পেলে রোজ ট্রেন চালানো হবে বলে তাঁর দাবি।
যদিও রেলের এই দাবি নস্যাৎ করে দিচ্ছে রেলের টিকিট সংরক্ষণের তালিকাই। এখন দু’টি কামরা নিয়ে পাহাড় ও সমতলের মধ্যে যাতায়াত করছে ট্রেন। দু’টিই প্রথম শ্রেণির কামরা। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত ভাড়া ৩৬৫ টাকা। ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি মাসের টিকিট বুকিং শেষ হয়ে গিয়েছে। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহের টিকিটও অমিল। এমনকী, এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহের টিকিট কাটলে জায়গা পাওয়া যাচ্ছে ওয়েটিং লিস্টে। তাহলে যাত্রী সঙ্কট কোথায়? ডিআরএমের মন্তব্য, ‘‘আবার খোঁজ নিয়ে দেখব।’’
কর্তৃপক্ষের উদাসীন মনোভাবই ট্রেনের অনিয়মিত যাতায়াতের কারণ বলে রেলের অন্দরের জল্পনা। এখন চারটি ডিজেল ইঞ্জিন রয়েছে চলাচলের জন্য। সেগুলি পুরানো। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ হয় না বলেও অভিযোগ। যার অভাবে বেশিরভাগ রেকের ব্রেক ‘জ্যাম’ হয়ে গিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গিয়েছে কামরাগুলিও। রেলের এক কর্তার কথায়, ‘‘প্রথম থেকে যদি সব দিকে নজর থাকত তবে এই সমস্যা হতো না।’’
শিলিগুড়ি জংশন হোক বা দার্জিলিং স্টেশন। সব জায়গায় টয়ট্রেনের টিকিট বুক করতে পর্যটকদের নিত্য লাইন। বেশিরভাগকেই খালি হাতে ফিরতে হয়। উত্তরবঙ্গের ট্যুর অপারেটরদের অন্যতম বৃহৎ সংগঠনের তরফে সম্রাট সান্যাল এমন ঘটনার জন্য পেশাদারি মনোভাবের অভাবকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘এক বছর ধরে রেল দু’টি ইঞ্জিন এবং কয়েকটি রেক যদি সংস্কার করতে না পারে, তা খুবই হতাশাজনক।’’ এমন ঘটনার ফলে বিদেশি পর্যটকদের কাছে সম্মানহানি হয় বলেও জানান তিনি।