Advertisement
E-Paper

একার লড়াই, সঙ্গী টিউশন

আদিবাসী অধ্যুষিত নেমুয়া কামাত গ্রামের বছর চোদ্দোর কিশোরী লক্ষ্মী হেমব্রম। বাবার মৃত্যুর পর মা বুধিন টুডু সংসারের হাল ধরতে ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতে চলে গিয়েছেন তাও বছর দুয়েক হল। দু’মাসে একবার কয়েক দিনের জন্য বাড়ি ফেরেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৭ ০২:৩৪

আদিবাসী অধ্যুষিত নেমুয়া কামাত গ্রামের বছর চোদ্দোর কিশোরী লক্ষ্মী হেমব্রম। বাবার মৃত্যুর পর মা বুধিন টুডু সংসারের হাল ধরতে ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতে চলে গিয়েছেন তাও বছর দুয়েক হল। দু’মাসে একবার কয়েক দিনের জন্য বাড়ি ফেরেন। দাদা মঙ্গল থাকে পাশের গ্রামে শ্বশুর বাড়িতে। বাড়ি আগলে রাখার দায়িত্ব একা লক্ষ্মীর কাঁধে। ফলে বন্ধ হয়ে যায় মুচিয়ার চন্দ্রমোহন হাই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীর পড়াশোনা।

শুধু লক্ষ্মীই নয়, পুরাতন মালদহের মুচিয়া পঞ্চায়েতের এই গ্রামে পূর্ণিমা হেমব্রম, গীতা মোদি, চঞ্চলা হেমব্রমদের মতো অনেক কিশোরীরই নানা পারিবারিক প্রতিকূলতায় দু’-এক বছর ধরে বন্ধ স্কুলের পাঠ। স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা চলতি শিক্ষাবর্ষে ফের তাদের স্কুলে ভর্তি করলেও অন্য সহপাঠীদের সঙ্গে তারা তাল মেলাতে পারছিল না। দীর্ঘ দিন লেখাপড়ার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হতদরিদ্র এই কিশোরীদের এ বার নিখরচায় টিউশন দেওয়ার ব্যবস্থাও করল ওই সংস্থা। সংস্থাটি তাদের ফিল্ড ফেসিলেটরদের দিয়ে গ্রামের একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে পড়ানোর ব্যবস্থা করেছে। খাতা-কলমও সরবরাহ করছেন সংস্থার সদস্যরা।

এই স্কুলছুট কিশোরীদের খুঁজে বের করে চলতি শিক্ষাবর্ষে ফের স্কুলে ভর্তি করেছে স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তবে এখানেও দেখা দিয়েছে বিপত্তি। কেননা, প্রায় দু’বছর ধরে লেখাপড়ার সঙ্গে যোগ না থাকায় তারা অন্য সহপাঠীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে নিয়ে যেতে পারছে না। তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা এতটাই দুর্বল যে টিউশন নেওয়ার সাধ্যও নেই। তাই সেই শুক্রবার সকালে নেমুয়া কামাত গ্রামে গিয়ে দেখা গেল মাটিতে বস্তা বিছিয়ে লেখাপড়ায় ব্যস্ত লক্ষ্মী, পূর্ণিমারা। তাঁদের সঙ্গে সুজন, অষ্টমী, সমীর, রূপালীদের মতো এলাকার অন্য কয়েক জন ছেলেমেয়েও পড়ছে। তাঁদের পড়াচ্ছিলেন ফিল্ড ফেসিলেটর রীণা রায়চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘তিন মাস ধরে টিউশন নিয়ে ওরা এখন অনেক সাবলীল।’’ সংস্থার প্রকল্প সমন্বয়কারী বিশ্বনাথ মণ্ডল বলেন, ‘‘কিশোরীদের সবলা, কন্যাশ্রী প্রকল্পের প্রশিক্ষণও দিচ্ছি। ওদের কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। বামনগোলা ব্লকেও এমন ১০ জনকে পড়ানো হচ্ছে।’’

আর কী বলছে লক্ষ্মী? জানাল, ভোরে উঠে নিজের জন্য ভাত রেঁধে সে সকাল সাড়ে সাতটায় টিউশন পড়তে আসে। এর পর স্কুল। দুপুরে ভরসা মিডডে মিল। রাতে সকালের রান্না করা ভাতই সম্বল। তবে ফের স্কুলে ভর্তি হতে পেরে সে খুবই খুশি। টিউশন নিয়েও উপকার পাচ্ছে। বলল, ‘‘এ ভাবে লড়াই করেই লেখাপড়া চালিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’’

Tribal girl trying hard Opportunity To Study Malda Lakshmi Hembram
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy