Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

আচরণ দেখে ‘মানুষখেকো’ বোঝার চেষ্টা

পরপর চিতাবাঘ ধরা পড়ছে চা বাগান অঞ্চলে। আর তাদের ঘিরে স্থানীয় বাসিন্দাদের ‘মানুষখেকো’ রব উঠছে বারবার। কিন্তু বন বিভাগ কী বলছে?

নিজস্ব সংবাদদাতা
আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:০২
Share: Save:

পরপর চিতাবাঘ ধরা পড়ছে চা বাগান অঞ্চলে। আর তাদের ঘিরে স্থানীয় বাসিন্দাদের ‘মানুষখেকো’ রব উঠছে বারবার। কিন্তু বন বিভাগ কী বলছে? বনকর্তারা তালিকায় রেখেছেন মূলত দু’টি চিতাবাঘকে। একটি, স্ত্রী চিতাবাঘ। মানুষ পুতুল দেখে যে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আর একটি হল, ধুমচিপাড়ার পুরুষ চিতাবাঘ। ওই এলাকার বাসিন্দাদের কয়েকজনের দাবি, সেই পুরুষ চিতাবাঘটিই আসলে ‘মানুষখেকো’।

তবে কোন চিতাবাঘটি ‘মানুষখেকো’, তা নিয়ে এই সন্দেহের মাঝেই মাদারিহাটে আবার একটি চিতাবাঘ খাঁচাবন্দি হয়েছে। বুধবার রামঝোরা চা বাগানে পূর্ণ বয়স্ক চিতাবাঘটি খাঁচাবন্দি হয়েছে।

ডিসেম্বর থেকেই মাদারিহাটের বিভিন্ন চা বাগান এলাকায় চিতাবাঘের উপদ্রব বাড়তে শুরু করে। চিতাবাঘের হানায় তিন শিশু-কিশোর মৃত্যু হয়। এক বৃদ্ধ ও এক কিশোরকে চিতাবাঘের হানায় জখমও হতে হয়। চিতাবাঘের হানায় একের পর এক মানুষের মৃত্যু কিংবা জখমের ঘটনায় উদ্বেগ বাড়তে থাকে বনকর্তাদের অন্দরে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, তবে কি কোনও চিতাবাঘ একবার মানুষের রক্তের স্বাদ পেয়ে ‘মানুষখেকো’ হয়ে উঠেছে?

এই অবস্থায় পাতা হয় পনেরোটি খাঁচা। তাতে ধরা পড়তে থাকে একের পর এক স্ত্রী চিতাবাঘ। কিন্তু গত শুক্রবার ধুমচিপাড়া চা বাগানে প্রথমবার একটি পূর্ণবয়স্ক চিতাবাঘ ধরা পড়ে। ওই চিতাবাঘটিকে ঘিরেও ‘মানুষখেকো’র সন্দেহ দানা বাঁধে। ধুমচিপাড়ার স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েক জন সেদিন ওই চিতাবাঘটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলার দাবি তোলেন।

কিন্তু বন দফতরের আধিকারিকদের আর একটি অংশের সেই সন্দেহ বদলে যায় তার ঠিক দুদিন বাদে রবিবারে। ওই দিন গ্যারগেন্দা চা বাগানে আবার একটি পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী চিতাবাঘ ধরা পড়ে। খাঁচার ভিতরে টোপ হিসাবে রাখা একটি মানব পুতুলকে যে ভাবে ওই চিতাবাঘটি ক্ষত-বিক্ষত করে, তাতে বন দফতরের অনেকেরই সেটির উপরেও সন্দেহ গিয়ে পড়ে। কোনটি ‘মানুষখেকো’, তা জানতে দক্ষিণ খয়েরবাড়ি ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রে দু’টি চিতাবাঘের উপরেই কড়া নজরদারি শুরু হয়।

কিন্তু মানুষখেকো কি না তা বোঝার উপায় কি?

বনকর্তাদের একাংশের কথায়, অনেকগুলি বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যার মধ্যে একটি অবশ্যই চিতাবাঘের পায়ের ছাপ। যে সব এলাকায় মানুষের মৃত্যু বা জখম হওয়ার ঘটনা ঘটেছে সেখান থেকে চিতাবাঘের যে পায়ের ছাপ মিলেছে, তার সঙ্গে কোনও চিতাবাঘের পায়ের ছাপ মিলছে কি না, তা পরীক্ষা করা হবে। পাশাপাশি, অন্য কোনও মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও অনীহা রয়েছে কি না, সেটা দেখাও জরুরি। তা ছাড়া, আশেপাশে মানুষ দেখলে মানুষখেকো চিতাবাঘের আচরণ অন্যগুলির চেয়ে খানিকটা আলাদা হয়ে যাবে। জলদাপাড়ার ডিএফও কুমার বিমল বলেন, “দু’টি চিতাবাঘই সন্দেহের তালিকায় রয়েছে।” তবে রাজ্যের মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ শাখা) রবিকান্ত সিংহ বলেন, “পায়ের ছাপ ও শরীরের আকার দেখে ধুমচিপাড়ায় ধরা পড়া পুরুষ চিতাবাঘটির উপরেই সন্দেহ বাড়ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE