Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ইচ্ছেশক্তিতে হার মেনেছে প্রতিবন্ধকতা, দারিদ্র্যও

তিনি বলেন, ‘‘সমস্যা অনেক রয়েছে। কিন্তু তাও পড়তে চাই। পরীক্ষায় ভাল প্রস্তুতি নিয়েছি। পরীক্ষা দেব।’’

পরীক্ষাকেন্দ্রে মালতি হালদার। —নিজস্ব চিত্র

পরীক্ষাকেন্দ্রে মালতি হালদার। —নিজস্ব চিত্র

শান্তশ্রী মজুমদার
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৫:৩৪
Share: Save:

একজনের বছর ছয়েক ধরে শরীর অসাড়। আর এক জনের দুই হাতে দু’টি করে আঙুল। সমস্ত শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তুচ্ছ করে লড়াই করেছেন ওই দু’জন। অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মেনেছে দারিদ্র্যও। আর আত্মবিশ্বাসকে সঙ্গী করেই এ দিন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছেন পমি রজক ও মালতি হালদার।

ছোটবেলা থেকে সব ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু শেষ ছ’বছর হল অসাড় হতে শুরু করে পমির শরীর। ধীরে ধীরে কথাবলা, হাঁটাচলা সবেতেই দেখা যায় সমস্যা। এখন ভাল করে কথা বলা, চলাফেরা কোনওটাই নিজে করতে পারেন না দুর্গানগর এলাকার বাসিন্দা পমি। তাঁর বাবা রামকুমার রজকের লন্ড্রির দোকান। সেই আয় থেকেই চলে চারজনের সংসার। কিন্তু মেয়ের ইচ্ছাশক্তির জোর দেখে তাঁর পাশেই দাঁড়িয়েছে তাঁর পরিবার। রাজেন্দ্রপ্রসাদ গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী পমি মঙ্গলবার তরাই তারাপদ মেমোরিয়াল হাইস্কুলে মায়ের সঙ্গে পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন।

তিনি বলেন, ‘‘সমস্যা অনেক রয়েছে। কিন্তু তাও পড়তে চাই। পরীক্ষায় ভাল প্রস্তুতি নিয়েছি। পরীক্ষা দেব।’’ ক্লাসে লেখাপড়ার ক্ষেত্রে স্কুলের বান্ধবী ছাড়াও শিক্ষিক-শিক্ষিকাদের সাহায্য পেয়েছেন বলে জানান তিনি। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য একজন রাইটার সাহায্য করছে তাঁকে। পমিকে লেখায় সাহায্য করছে তাঁর স্কুলেরই একাদশ শ্রেণির ছাত্রী কুলসুম খাতুন। পমির মা সীতা রজক বলেন, ‘‘ওর ওষুধের পিছনে মাসে প্রায় ৩ হাজার টাকা চলে যায়। তাও ও পড়তে চায় বলে আমরা ওর জন্য অনেক কষ্ট করি ওর পড়াশোনার জন্য।’’ এই লড়াইয়ে পরিবারই বড় ভরসা পমির।

তরাই তারাপদ মেমোরিয়াল হাইস্কুলেই সিট পড়েছে শক্তিগড় বালিকা বিদ্যালয়ের আরও এক লড়াকু ছাত্রী মালতি হালদারের। তাঁর হাত ছোট এবং দুই হাতেই দু’টি করে আঙুল। মালতির কথায়, ‘‘স্কুলে পরীক্ষা নিজেই দিতাম। কিন্তু অসুবিধা হত। এটা বড় পরীক্ষা। প্রস্তুতি ভালই নিয়েছি। অসুবিধা হলেও আমাকে লড়তে হবে।’’

শক্তিগড় বালিকা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা অর্চনা হালদার বলেন, ‘‘মেয়েটির ইচ্ছাশক্তি প্রবল। আমরা ওঁকে নানাভাবে বই খাতা দিয়ে সাহায্য করেছি। নবম শ্রেণির শোভা বর্মণকে বলে ওঁর হয়ে লেখার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’’ এ দিন মায়ের সঙ্গে পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন মালতি।

তাঁর মা চঞ্চলা হালদার জানান, নৌকাঘাটের কাছে থাকেন তাঁরা। মালতির বাবা হরিগোপালবাবুর একটি কাঠের দোকান রয়েছে। সেই আয় থেকেই চলে তাঁর বড় পরিবার। তাই বেশ কষ্ট করেই পড়াশোনা চালাতে হচ্ছে মালতিকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE