Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

উত্তরের কড়চা

সে কবেকার কথা। এক প্রেমিকের বলা কথা গানের সুরে ছড়িয়ে গিয়েছিল ছোটনাগপুরের মালভূমির ঢালে। প্রেমিক বলছেন,‘‘চল মিনি অসম যাব।’’ অসমের চা বাগানের সবুজ হাতছানি দিয়েছিল রুখা-সুখা দেশের মানুষগুলিকে।

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৬ ০৩:৩৪
Share: Save:

যদুরামের বাগান

সে কবেকার কথা। এক প্রেমিকের বলা কথা গানের সুরে ছড়িয়ে গিয়েছিল ছোটনাগপুরের মালভূমির ঢালে। প্রেমিক বলছেন,‘‘চল মিনি অসম যাব।’’ অসমের চা বাগানের সবুজ হাতছানি দিয়েছিল রুখা-সুখা দেশের মানুষগুলিকে। চা বাগানের হরিয়ালিতে ভাল থাকার স্বপ্ন গানের প্রথম কয়েক কলিতে। তার পরেই অবশ্য স্বপ্নভঙ্গ। ‘হায় যদুরাম, ফাঁকি দিয়ে পঠাইলি অসম।’ সময় অনেক এগিয়েছে। ‘যদুরাম’-রা এখন আরও বেশি সক্রিয় বলে জানাচ্ছেন চা নিয়ে খোঁজখবর রাখা ব্যক্তিরা। আড়কাঠির কাজ করা যদুরামরা চা বাগানের অসংখ্য ‘মিনি’দের ভুলিয়ে ভিনরাজ্যে পাচার করছে বলে অভিযোগ। গোড়া থেকে এখনও পর্যন্ত চা বাগিচায় জীবনযাপনের নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে ‘গদ্যে পদ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে উত্তরের চা বাগান’ পত্রিকায়। রবিবার শিলিগুড়িতে প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকার নবম বর্ষের প্রথম এবং দ্বিতীয় সংখ্যা। অর্থনীতিবিদ মানস দাশগুপ্ত থেকে শুরু করে অশোক গঙ্গোপাধ্যায়, সৌমেন নাগ সহ বিশিষ্টজনের লেখা রয়েছে এই সংখ্যায়। তামিলনাড়ুর চা বাগানের গল্প থেকে শিলিগুড়ি লাগোয়া চাঁদমণি চা বাগানের উচ্ছেদের কাহিনি সবই আছে সংখ্যায়।

দ্যোতনার উদ্যোগ

জলপাইগুড়ির সাহিত্যপিপাসুদের নিয়ে জমজমাট আড্ডা বসেছিল এক শীতসন্ধ্যায়। মধ্যমণি ছিলেন সাহিত্যিক দেবেশ রায়। সাহিত্য পত্রিকা ‘দ্যোতনা’র উদ্যোগে পত্রিকা দফতরে আয়োজিত আড্ডায় আসে উন্নয়ন, সমাজকাঠামোর ভিত্তি, সহিষ্ণুতা-অসহিষ্ণুতার প্রসঙ্গ। সবচেয়ে বেশি চর্চা হয় তিস্তাপারের জনজীবনের আশা-স্বপ্ন-স্বপ্নভঙ্গ নিয়ে। রাস্তাঘাট শুধু নয়, সমাজজীবনের অভ্যন্তরীণ উন্নতিই উন্নয়ন। নদী-অরণ্যকে ঘিরে যাদের জীবনযাপন, তাদের উৎখাত করে উন্নয়ন সম্ভব নয়। আড্ডা চলে সাহিত্য নিয়েও। নতুন প্রজন্মের লেখালেখি নিয়ে আশান্বিত দেবেশবাবু।

মাতৃত্বেরপাঠ

অনেকের মতে এটাও এক ধরনের ‘সহজ পাঠ’। হবু বাবা-মায়ের মনে রাশি-রাশি প্রশ্ন। ছোট্ট অতিথিকে পৃথিবীতে আনার আগে সকলেই ত্রুটিহীন রাখতে চান সামগ্রিক পরিস্থিতি। ভাবী বাবা-মায়েদের কথা ভেবে অনেক দিন ধরেই লিখছেন শিলিগুড়ির বিশিষ্ট স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠবিহারী দাস তথা জিবি দাস। সম্প্রতি পরম্পরা থেকে প্রকাশিত তাঁর ‘মা ডাকবে’ শিরোনামের বই যেন সহজ সরল ভাষায় লেখা গাইড।

সাহিত্যআঙিনায়

সম্প্রতি শিলিগুড়ির ‘সাহিত্য অঙ্গন’ পত্রিকাগোষ্ঠীর উদ্যোগে এক আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। সঞ্জীবন দত্তরায় জানান, নারীদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার হলেও তারা আজও শরৎসাহিত্যের নারীর প্রতিচ্ছবি। নারী আজও সমানাধিকার পায়নি। নাট্যকার সুবীর চৌধুরী জানান, ভিসুয়ালাইজেশনের প্রয়োগ অভিনব এবং শিল্পসম্মত হলে নাটককে সমৃদ্ধ করবে। ‘‘রবীন্দ্রনাথ ও স্বাদেশিকতা’’ নিয়ে আলোচনা করেন রতন বিশ্বাস। উত্তরবঙ্গের কবিদের স্বরচিত কবিতাপাঠের আসরও ছিল।

অণু-নিজস্বী

আবীরা সেনগুপ্তর অণুগল্প সংকলন ‘অবর্ণা’ আদতে এক জীবনের নিজস্বী। সেই নিজস্বীতে ধরা পড়েছে নারীর দহনকথা, সম্পর্কের টানাপড়েন, শূন্য থেকে শুরুর বার্তা, নস্টালজিয়া এবং অনুভূতির উপলব্ধি। প্রতিদিনের বাস্তবের পটভূমিতে তৈরি লেখকের চরিত্ররা, অতিপরিচিত মুখ। ঝরঝরে গদ্যের সঙ্গে নিপুণ দক্ষতায় বেশ কিছু গল্পে ব্যবহৃত হয়েছে কবিতা। প্রচ্ছদও আকর্ষণীয়।

সৌধ কথা

শুধুই কি অফিস, মন্দির, মসজিদ, গির্জা, ঘরবাড়ি ঐতিহ্যের তালিকায় যুক্ত? রয়েছে সমাধিসৌধও। সম্প্রতি দ্য ন্যাশনাল ট্রাস্ট ফর আর্ট অ্যান্ড কালচারাল হেরিটেজ, দার্জিলিং শাখা ঐতিহ্যপূর্ণ এই নিদর্শনগুলি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে আয়োজন করেছিল সচেতনামূলক কর্মসূচির। নির্বাচিত স্থানটি ছিল দার্জিলিঙের ওল্ড সিমেট্রি। দার্জিলিঙের বার্চ হিলের নীচে রয়েছে সমাধিক্ষেত্রটি। ছয়কোনাবিশিষ্ট সমাধিসৌধ। স্মারকটি চোমা ডি কোরাসের। গড়েছে এশিয়াটিক সোসাইটি। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে প্রখ্যাত হাঙ্গেরিয়ান ভাষাতত্ত্ববিদের নিবিড় যোগ ছিল। ইনি তিব্বতি ভাষায় একটি অভিধান লিখেছিলেন। লাসা যাওয়ার পথে দার্জিলিঙেই তিনি মারা যান। সৌধটি নির্মিত হয় ১৮৫৬-র ১১ অগস্ট। অনতিদূরেই রয়েছে স্তম্ভসদৃশ একটি স্মৃতিসৌধ। দার্জিলিঙের ‘আবিষ্কর্তা’ জেনারেল লয়েডের স্মরণে নির্মিত। ১৮৬৫ সালে তিনি দার্জিলিঙে প্রয়াত হন। এলাকার বিভিন্ন স্কুলের ৬০ জন ছাত্রছাত্রী গোটা সমাধিক্ষেত্র সাফসুতরো করল। স্কুলে বসেই পেনসিল, রং-তুলি নিয়ে আঁকল সৌধের ছবি। লিখল প্রবন্ধ। অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক কবীন্দ্রকুমার তামাঙ্গের কাছ থেকে ছাত্রছাত্রীরা শুনল চোমা ডি কোরাসের জীবনকথা। ইনটাক-এর সদস্য হরেন অ্যালে ওদের বোঝালেন ঐতিহ্যের গুরুত্ব, সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা, দার্জিলিং গড়ে ওঠার কাহিনি এবং জেনারেল লয়েডের ভূমিকা।

পুতুল নাচের ইতিকথা

প্রথম জন ব্যাঙ্কের অস্থায়ী কর্মী। অন্যজন শ্রমিক। কাজ করেন রংমিস্ত্রির সঙ্গে। মালদহ-মানিকপুরের হিমাংশু মণ্ডল এবং সদানন্দপুরের সুরজিৎ মাঝির আসল পরিচয় এসব নয়। আসল পরিচয়, বছরদশেক ধরে তাঁরা মানবপুতুল সেজে পশ্চিমবঙ্গ, এমনকী দিল্লিরও বহু মানুষের মন জয় করেছেন। ছোটবেলায় যাত্রাগান দেখে হিমাংশুবাবু ভাবতেন অভিনয় করার কথা। ভাবনা থেকে নেশা। নেশা থেকেই মানবপুতুল সাজা। অর্থাৎ পুতুলনাচে কাঠের পুতুলের জায়গায় মানবপুতুল। ‘অন্বেষা সাংস্কৃতিক মঞ্চ’-র ৭ সদস্যের দলে গান লেখেন অমর মণ্ডল। তাঁর উৎসাহেই প্রথমবার পুরুষ চরিত্রে মানবপুতুল সেজেছিলেন হিমাংশুবাবু। সুরজিৎবাবুকে আবিষ্কার করেন দলের অর্গানবাদক দীপঙ্কর কর্মকার। মেকআপ নেওয়ার পর সুরজিৎবাবুকে দেখে বোঝার উপায় থাকে না যে তিনি আসলে মেয়ে নন, পুরুষ। মূলত শীতকালেই হয় অভিনয়। ‘‘কাজটা প্রচণ্ড পরিশ্রমের। গরমের সময় কষ্ট হয়।’’ অভিনয়ে শুধু কৌতুক কেন? ওরা বলেন, ‘‘অভিনয়ের মাধ্যমে যদি কিছু সময় মানুষকে দুঃখকষ্ট ভুলিয়ে রাখতে পারি। সেটাই অনেক পাওয়া।’’ সরকারি ভাতা মেলে মাসে মাত্র ১হাজার টাকা। কিন্তু দর্শকদের হাততালির শব্দে চাপা পড়ে যায় তাঁদের জীবনযন্ত্রণার কথা। যন্ত্রণাকে উপেক্ষা করে শিল্পের চরম উৎকর্ষতায় পৌঁছানোর স্বপ্ন দেখেন সুরজিৎবাবু।

আসর

একমাত্র কবিই পারেন যাবতীয় জাগতিক প্রতিকূলতা ছাড়িয়ে অনাবিল ও গভীর আনন্দবোধে অন্তরকে জাগাতে। এ কথা উচ্চারিত হল ‘কবিতা ও কবিতাবিষয়ক’ সান্ধ্য আসরে। কবি-অধ্যাপক অলোক সাহার উদ্যোগে আয়োজিত সন্ধ্যার সহযোগী ছিলেন ‘উত্তর ভূমিকা’ পত্রিকা গোষ্ঠী। ৩৭ জন কবি স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন। উপস্থিত ছিলেন তুফানগঞ্জ, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারের কবি ও শিল্পীরা। কবিতাপাঠের পর শ্রোতারা তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। কোচবিহারের কবিতা চর্চা নিয়ে মনোজ্ঞ আলোচনা করেন কবি-সম্পাদক গৌরাঙ্গ সিনহা। দুটি কবিতা আবৃত্তি করেন সুপ্রভা সিংহ। কবি রামেশ্বর রায় রাজবংশী ভাষার কবিতা পাঠ করেন। গান করেন মঞ্জুশ্রী ভাদুড়ি। কিশোর চক্রবর্তী এবং সন্তোষকুমার মজুমদারের গান অন্য আবহ রচনা করে।

ছবিঘর

শিলিগুড়ি কলেজে উদ্বোধন হল ক্যান্টিনের। নতুন ক্যান্টিনের সামনে দাঁড়িয়ে নিজস্বী পড়ুয়াদের।—বিশ্বরূপ বসাক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

uttarer karcha book release human doll
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE