Advertisement
E-Paper

পুলিশকে হাতেনাতে ধরলেন যুবক

পাসপোর্ট করাতে গিয়ে পুলিশের ঘুষের ছবি তুলে নতুন এক স্টিং-এর পথ দেখালেন শৈলেশ প্রধান। এ নিয়ে দু’টি প্রতিবেদন কিশোর সাহা-র।পাসপোর্ট করাতে গিয়ে পুলিশের ঘুষের ছবি তুলে নতুন এক স্টিং-এর পথ দেখালেন শৈলেশ প্রধান। এ নিয়ে দু’টি প্রতিবেদন কিশোর সাহা-র।

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৬ ০৩:৩৭
স্টিং অপারেশনের নায়ক শৈলেশ।

স্টিং অপারেশনের নায়ক শৈলেশ।

কলকাতার পরে ‘স্টিং-কাণ্ড’ শিলিগুড়িতেও!

আবার সেই পুলিশের বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ। তা প্রমাণ করতে লেনদেনের দৃশ্য গোপনে ক্যামেরাবন্দি করেছেন শিলিগুড়ির উপকণ্ঠের সুকনার মেথিবাড়ির এক ‘টেক স্যাভি’ বেকার যুবক শৈলেশ প্রধান।

ম্যাথু স্যামুয়েলের মতো দুঁদে সাংবাদিক নন শৈলেশ। তাতে কী! নিজের স্মার্ট ফোনের ভিডিও ক্যামেরায় ‘পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন’ বাবদ পুলিশকে দু’হাজার টাকা দেওয়ার দৃশ্যের ফুটেজ প্রকাশ্যে এনে হইচই ফেলে দিয়েছেন।

যা দেখার পরে বেজায় চটে গিয়েছেন শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা। শুক্রবার রাতে শৈলেশের অভিযোগের ভিত্তিতে শিলিগুড়ির স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) এসএসআই অমিয় আচার্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। শিলিগুড়ি থানার পুলিশ ওই এএসআইয়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইনে মামলা রুজু করেছে। অভিযোগকারীর ভিডিও ফুটেজ ও মোবাইল পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নিয়ে ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠাচ্ছে। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘‘অভিযোগ গুরুতর। তা নিয়ে মামলা দায়ের হয়েছে। অভিযুক্ত অফিসারকে আপাতত দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে।’’ অভিযুক্ত অফিসার অমিয়বাবু বিশদে মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর মন্তব্য, ‘‘তদন্ত হোক। এটা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই।’’

ঘটনার শুরু এপ্রিলের মাঝামাঝি। আইটিআই পাশ করে চাকরির খোঁজ করছিলেন শৈলেশ। কিন্তু রাজ্যের কোথাও চাকরির সুযোগ মিলছে না দেখে সৌদি আরবে কাজ করতে যাবেন বলে যোগাযোগ করেন। সেই মতো মাস তিনেক আগে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। আবেদনের পরে পাসপোর্টের আবেদনপত্র নিয়ম মতো আবেদনকারী যে এলাকায় থাকেন, সেখানকার পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কাছে যাচাই করার জন্য পাঠানো হয়। এ ক্ষেত্রে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের এসবি-র কাছে যায়। আবেদনপত্রটি পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেওয়ার দায়িত্ব পান এএসআই অমিয়বাবু। তিনি শৈলেশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

শৈলেশের অভিযোগ, তখনই ওই অফিসার তাঁর কাছে ২ হাজার টাকা চান। কেন টাকা দিতে হবে জানতে চাইলে, শৈলেশকে ডেকে অফিসে ডাঁই হয়ে পড়ে থাকা ফাইল দেখানো হয় হয়। ওই যুবকের অভিযোগ, ‘‘আমাকে বলা হয়, টাকা না দিলে আমার আবেদনপত্র ওই ফাইলের পাহাড়ে চলে যাবে। কত দিন পরে তা পাঠানো হবে, তার ঠিকঠিকানা থাকবে না।’’

গোড়ায় শৈলেশ হতাশ হয়ে পড়েন। এর পরে সম্প্রতি ‘নারদ-স্টিং’ নিয়ে যে হইচই চলছে, তা মাথায় রেখে গোটা প্রক্রিয়া ‘রেকর্ড’ করার সিদ্ধান্ত নেন। এর পরে শৈলেশ ওই অফিসারের সঙ্গে তাঁর কথোপকথন ‘রেকর্ড’ করতে শুরু করেন। কয়েক দিন কথাবার্তা ‘রেকর্ড’ করার পরে শৈলেশ এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে শিলিগুড়ির কোর্ট মোড়ের এসবি অফিসে যান। সেখানে গিয়ে টাকা দেওয়ার দৃশ্য মোবাইলে রেকর্ড করেন। তার পরে একটি সোস্যাল সাইটে তা আপলোড করেন। এর পরেই বিষয়টি পুলিশ কমিশনারের নজরে পড়ে। শুক্রবার শৈলেশ পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। তাতে লেখেন, তিনি দুর্নীতি চক্রের স্বরূপ উদ্ঘাটনের জন্য টাকা দিতে রাজি হয়েছেন।

ভবিষ্যতে যাতে পাসপোর্টের জন্য কাউকে পুলিশকে টাকা দিতে না হয়, তা নিশ্চিত করার একটা চেষ্টা হিসেবেই যেন এটাকে দেখা হয়। তিনি ব্যক্তিগত ভাবে ঘুষ দিয়ে কাজ করানোর পক্ষপাতী নন বলেও অভিযোগপত্রে জানিয়ে দেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, অভিযোগ পাওয়ার পরে রাতেই কমিশনার শিলিগুড়ি থানায় যান। সেখানে অফিসারদের ডেকে সতর্ক করে দেন। এসবি-র অফিসারদের ডেকেও ফের সতর্ক করে দেন পুলিশ কমিশনার। কারণ, নানা মহল থেকে পুলিশ কর্তৃপক্ষের কাছে অতীতেও পাসপোর্টের পরীক্ষা করানোর সময়ে টাকা চাওয়ার অভিযোগ পৌঁছেছে। কিন্তু, এমন ভিডিও ফুটেজ অতীতে কেউ সামনে আনার সাহস দেখাননি। তাই পুলিশের পক্ষ থেকে শৈলেশকে জানিয়ে দেওয়া হয়, ফুটেজ সত্যি হলে যথাসম্ভব কড়া পদক্ষেপ করা হবে ওই অফিসারের বিরুদ্ধে।

এই ঘটনায় শহরেও হইচই পড়ে গিয়েছে। অনেকে শৈলেশকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। অনেকে আবার শৈলেশকে সাবধান করে জানিয়েছেন, পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার পরে ফুটেজ প্রকাশ করলেই ভাল হতো। শৈলেশ বলেছেন, ‘‘অত ভয় পেলে চলবে না। কবে, কে কী করবে, সে জন্য বসে না থেকে নিজেকেও প্রতিবাদে সরব হতে হবে। তাতে যা হওয়ার হবে। আমি পাসপোর্ট পাওয়ার পরে ফুটেজ প্রকাশ করলে অনেকে আমাকে স্বার্থপর বলতেন। সব দিক ভেবেই যা করার করেছি। স্টিং-অপারেশন করলে বিপদ হতে পারে বলে অনেকে সাবধান করেছেন। আমি অত ভয় নিয়ে মাথা নিচু করার বাঁচার পক্ষপাতী নই।’’

Shailesh Pradhan sting operation bribe police corruption polic
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy