Advertisement
০২ মে ২০২৪

বিষে কি কমছে তিস্তার বোরোলি

বোরোলির টানে গজলডোবায় আসেন অনেক পর্যটক। লাগোয়া শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি শহরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারাও ছুটে যান রুপোলি মাছের টানেই।

অনির্বাণ রায়
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৫৭
Share: Save:

জালে আর তেমন মাছ ওঠে না। তাই নদী বাঁধা হয় রাতে। নদীর বুকে বড় আয়তাকার জায়গা বেছে নিয়ে চার দিক জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়। ঘেরা জলে ঢেলে দেওয়া হয় বিষ। মরা মাছ জালে আটকে থাকে পরদিন সকালে। তার মধ্যে বেশিরভাগই বোরোলি। অভিযোগ, এ ভাবেই ঝাঁকে ঝাঁকে বোরোলি মারা হচ্ছে গজলডোবার তিস্তা ব্যারাজ, নদীতে।

বোরোলির টানে গজলডোবায় আসেন অনেক পর্যটক। লাগোয়া শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি শহরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারাও ছুটে যান রুপোলি মাছের টানেই। সেই বোরোলির শরীরের ভিতরে বিষ ঢুকে রয়েছে কি না তা জানার উপায় নেই কারও। গজলডোবা ব্যারাজের পাশের মাঠে তিন দিকে সারি দিয়ে বেড়া দেওয়া হোটেল, রেস্তরাঁ। সব জায়গাতেই মূল আকর্ষণ বোরোলি ভাজা থেকে নানা পদ। পর্যটকদের ভিড়ে গমগম করছে এলাকা। বিনয় সাহার কথায়, ‘‘৩৫ বছর ধরে এখানে দোকান করছি। দিনে দিনে মাছের পরিমাণ কমেই যাচ্ছে। এখন যে সব ভাবে মাছ মারা হয় তাতে নদীর জল বিষিয়ে যাচ্ছে। ক’দিন পরে মাছ পাব কি না সেটাই এখন ভাবনা।’’ দেড় দশক ধরে বোরোলি ধরছেন পুলিন রায়। বললেন, ‘‘একসময়ে ছিপ দিয়ে মাছ ধরে দোকানে বিক্রি করতাম তাতেই কুলিয়ে যেত। এখন জালে যে কটা মাছ ওঠে তা দিয়ে সব দোকানের চাহিদা মেটাতে পারি না। দিনে তিন-চার কেজির বেশি মাছ পাই না।’’

মৎস্যজীবীরা মনে করছেন, চাহিদা বেড়ে যাওয়াই জন্ম দিয়েছে অপরাধের। বেশি টাকা উপায়ের জন্য নদীতে বিষ ঢেলে একসঙ্গে প্রচুর মাছ ধরা সম্ভব। কেউ কেউ বিদ্যুতের তার বিছিয়েও মাছ ধরে। এই প্রবণতাই ক্রমশ বোরোলির বংশলুপ্তি ঘটাচ্ছে বলে মৎস্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। সঙ্গে বাড়ছে মানবদেহে সংক্রমণের আশঙ্কাও। একসময়ে জাল ফেললেই ১৫ থেকে ২০ কেজি মাছ মিলত, এখন দিনভর জাল বিছিয়ে ৫ কেজির বেশি মাছ পান না এক একজন জেলেরা। বিষের দাপটে এখন তিস্তায় বোরোলি বাড়ন্ত।

বিষ দিয়ে মাছ মারার কথা জানে মৎস্য দফতরও। তা রুখতে গজলডোবায় সচেতনতা শিবির আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দফতর। তবে দফতরের এক কর্তার দাবি, শুধু মাত্র একটি দফতরের পক্ষে এই প্রবণতা বন্ধ করা সম্ভব নয়। রাতের বেলায় নজরদারি করার পরিকাঠামো মৎস্য দফতরের নেই। পুলিশ, জেলা প্রশাসন, সেচ দফতর সকলের সহযোগিতা ছাড়া নদীতে বিষ ঢালা বন্ধ অসম্ভব বলে মনে করছেন তাঁরা। মৎস্য দফতরের যুগ্ম অধিকর্তা আর এস লেপচা বলেন, ‘‘অভিযোগ আমাদের কাছেও আসে। সচেতনতা প্রসারের কাজ চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Boroli fish Cooch Behar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE