কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক অর্থ মঞ্জুর করেছিল ২০০৯ সালে। তখনই ঠিক হয়েছিল, বারাসতের সন্তোষপুর থেকে উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলা পর্যন্ত ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ৩৩৪ কিলোমিটার রাস্তা চার লেন করা হবে। এর ফলে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগে আরও গতি আসবে। কিন্তু কখনও জমি সমস্যা, কখনও ঠিকাদারের অর্থের সমস্যা, আবার কখনও রাস্তার পাশের জবরদখল না সরাতে পারা— সব মিলিয়ে দশ বছরে কাজ বিশেষ এগোয়নি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ফরাক্কা সেতুর সংস্কার ও ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে ইসলামপুরের উপরে বাইপাস তৈরি।
এই সব কাজ শেষ হলে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের এবং উত্তরবঙ্গেরও বিভিন্ন এলাকার মধ্যে যোগাযোগ ভাল হবে, মেনে নিচ্ছেন সকলে। কিন্তু কবে সব কাজ শেষ হবে, তা নিয়ে এখনও প্রশ্ন রয়েছে কয়েকটি মহলে। যদিও প্রশাসনের একটি অংশের পাল্টা দাবি, জট খুলে শীঘ্রই কাজ সম্পূর্ণ হবে।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এক কর্তা জানান, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে কলকাতা এবং দক্ষিণবঙ্গের সড়ক যোগাযোগ যানজট মুক্ত করতে। সেই লক্ষ্যেই ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ককে চার লেন করার কাজে হাত দেওয়া হয়। ফরাক্কায় গঙ্গার উপর নতুন সেতু তৈরির জন্য অর্থ মঞ্জুরও করা হয়েছে। সেই কাজ শুরু হয়েছে।
পাশাপাশি ফরাক্কা সেতু সংস্কারের কাজও চলছে। কর্তৃপক্ষের হিসেবমতো ৩১ মার্চে এই কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু বিভিন্ন মহলে অভিযোগ, ঢিলেঢালা ভাবে কাজ চলছে। তাই শেষ হতে আরও সময় লাগতে পারে। যদিও ফরাক্কা কর্তৃপক্ষের দাবি, সময় মতোই কাজ শেষ হবে।
এর পরেই রয়েছে ইংরেজবাজারের বাইপাসের কাজ। ১৩ বছর আগে শুরু হয়েছিল এই বাইপাস তৈরির কাজ। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের দাবি, বাধা অনেকটাই কেটেছে, আর ১০ শতাংশ কাজ বাকি। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে সব থেকে সঙ্কটময় এলাকা ডালখোলা। কখনও এখানকার যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় গাড়িকে। সাড়ে পাঁচ কিমি দীর্ঘ এই বাইপাসের কাজ আগামী জুলাইয়ের মধ্যে শেষ হবে বলে কর্তৃপক্ষের দাবি।
ডালখোলার পর থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের নাম বদলে হয়ে গিয়েছে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক। সেই পথে ইসলামপুর বাইপাস তৈরি হচ্ছে। স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, অন্য জায়গাগুলির মতো ইসলামপুরে এতটা জট হয় না। তবে ১০ কিমি বাইপাসটি তৈরি হয়ে গেলে গতি আরও বাড়বে।
ইসলামপুর
বাইপাসের দৈর্ঘ্য:
ইসলামপুরের অলিগঞ্জ থেকে আলুয়াবাড়ি (শ্রীকৃষ্ণপুর) পর্যন্ত ১০ কিমি ৩০০ মিটার এই বাইপাস।
কাজ কবে শুরু হয়েছে:
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হয়েছে। বেশ কিছু উড়ালপুল তৈরির কাজের পাশাপাশি প্রতিদিন চলছে মাটি ফেলার কাজও।
বাইপাস হলে কী সুবিধা:
ইসলামপুর শহর দিয়ে আর গাড়ি যাওয়ার প্রয়োজন হবে না।
ডালখোলা
বাইপাসের দৈর্ঘ্য:
৫.৫ কিলোমিটার বাইপাস হবে। ফ্লাওয়ার মিল ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে পূর্ণিয়া মোড় ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে যুক্ত হবে।
কাজ কবে শুরু হয়েছে:
২০১৮ সালে জানুয়ারি মাসে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।
কাজ শেষ হতে আর কত দিন?
৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের মালদহ ডিভিশনের ম্যানেজার রাজু কুমারের দাবি, আগামী জুলাই মাসের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।
ইংরেজবাজার
বাইপাসের দৈর্ঘ্য:
সুস্থানী মোড় থেকে নারায়ণপুর পর্যন্ত প্রায় দশ কিলোমিটার।
কেন বাইপাস:
রথবাড়ির উপর দিয়ে রয়েছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। যানজট কমাতে শহরের বাইরে দিয়ে বাইপাসে উদ্যোগ।
কাজ শেষ হতে আর কত দিন?
প্রায় ১৩ বছর আগে শুরু হয়েছিল কাজ। মহানন্দার উপরে সেতু তৈরি হয়েছে। অ্যাপ্রোচ রোডের কাজ চলছে। দশ শতাংশ কাজ বাকি।
তবে পুরো পথটি কত দিনে চার লেন হবে, তা নিয়ে এখনও বিভিন্ন মহলে সংশয় রয়েছে। বাইপাসগুলি বাদ দিলে বাকি অংশের মধ্যে কতটা কাজ হয়েছে, এই প্রশ্নের জবাবে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এক কর্তা জানান, ফরাক্কা থেকে রায়গঞ্জের দূরত্ব ১০০ কিমি। কাজ হয়েছে ৮৬ কিমি রাস্তায়। আবার রায়গঞ্জ থেকে ডালখোলার দূরত্ব ৫০ কিমি। এখানে চার লেনের কাজই শুরু হয়নি।
এই সব জট কাটিয়ে জটবিহীন চার লেনের রাস্তা কবে শিলিগুড়ি অবধি পথে গতি আনবে, তা কিন্তু এখনও স্পষ্ট নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy