আত্রেয়ীর নদীখাত এখন যেন মরুভূমির চেহারা নিয়েছে। অমিত মোহান্তের তোলা ছবি।
আত্রেয়ী নদীর জল কেন শুকিয়ে যাচ্ছে তা খতিয়ে দেখতে প্রশাসনিক তদন্ত শুরু হল। মঙ্গলবার দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক তাপস চৌধুরী জেলা সেচ দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র সুনীল ঠাকুরকে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। জেলাশাসক বলেন, ‘‘কুমারগঞ্জের সমঝিয়া সীমান্তের ওপারের দিকে আত্রেয়ী বরাবর একটি কংক্রিটের সেচ বাঁধ দেওয়া হয়েছে বলে বিভিন্ন মহলে অভিযোগ উঠেছে। সেচ দফতরের নিবার্হী বাস্তুকারকে এলাকায় গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার সত্যতা যাচাই করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।’’
এবছর গরমের শুরুতেই আত্রেয়ী শুকিয়ে যাওয়ায় বালুরঘাট জুড়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। আত্রেয়ীকে বাঁচাতে শহরবাসী আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অভিযোগ উঠেছে, সীমান্তের ওপারে নদী বরাবর আড়াআড়ি বাঁধ দেওয়া হয়েছে। তার জেরেই এপারে আত্রেয়ী নদীতে জলের খরা শুরু হয়েছে। সমজিয়া এলাকার চাষিদের কাছ থেকে ওই খবর পেয়ে দিশারী সংকল্প নামে একটি পরিবেশ সংস্থা উপগ্রহ চিত্র মাধ্যমে আত্রেয়ীর ছবি দেখে। তারপরেই ওই সন্দেহ আরও জোরালো হয়েছে।
তুহিনশুভ্র মণ্ডলের সন্দেহ, ‘‘ওই সেচ বাঁধ কয়েক বছর আগে থেকে তৈরি হচ্ছিল। সম্ভবত গত বছর কাজ শেষ করে এ বছর থেকে কংক্রিটের ওই সেচ বাঁধ ব্যবহার শুরু করা হতেই দক্ষিণ দিনাজপুরের দিকে আত্রেয়ী সহসা শুকিয়ে গিয়েছে।’’
বিএসএফের বিরুদ্ধেও উদাসীনতার অভিযোগ উঠেছে। বিএসএফের তরফে অবশ্য ওপারে বাঁধ দেওয়ার কোনও খবর তাদের জানা নেই বলে প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। সমজিয়া এলাকার চাষিদের অভিযোগ, কয়েক বছর থেকে আত্রেয়ী ক্রমশ শীর্ণ হয়ে পড়ছিল। এবারের পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ধূ ধূ বালির চর। কিছু জায়গায় ডোবার আকৃতি নিয়ে আত্রেয়ীর হাঁটু সমান জল। কংক্রিটের ওই সেচ বাঁধে লকগেটও রয়েছে বলে চাষিদের অভিযোগ।
ফলে ইচ্ছেমতো নদীর জল ছেড়ে দেওয়ার ফলে মাঝে মাঝে হড়কা বানের মত এপারে জল ঢুকে আত্রেয়ীর শুকনো চড়ে লাগানো তরমুজ ও শশার খেত ভাসিয়ে দিচ্ছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের উত্তরে বাংলাদেশের দিক থেকে কুমারগঞ্জ ব্লকের সমজিয়া এলাকা দিয়ে পতিরাম ও বালুরঘাট শহরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ডাঙ্গি সীমান্ত হয়ে ফের বাংলাদেশে গিয়ে পড়েছে আত্রেয়ী নদী। ফলে, এই নদীর ভরসায় বালুরঘাট পুরসভা শহরের বাড়ি বাড়ি যে পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়ে ছিল তার ভবিষ্যত নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। এদিন পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান রাজেন শীল বলেন, ‘‘আত্রেয়ী নদীর জলের উপর ভরসা করেই প্রকল্পটি তৈরি হয়। জল শুকিয়ে যাওয়ায় ওই প্রকল্পটি রূপায়ণ নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। নদীর ভূগর্ভস্থ জল তুলে প্রকল্পটি রূপায়ণ সম্ভব কি না তা খতিয়ে দেখতে এমইডির চিফ ইঞ্জিনিয়রকে জানানো হয়েছে। আমরা পুরো বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়ে হস্তক্ষেপ চেয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy