এলাকার রাস্তা সারাইয়ের দাবিতে শুক্রবার অবরোধ-বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন মহিলারা। তাঁদের মধ্যে রাজ্য সরকারের ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের প্রাপকেরাও ছিলেন।মহিলারা ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার চাই না,রাস্তা চাই’ বলায় তাঁদের একশো জনের নাম কেটে সে টাকায় রাস্তা হবে—এমনই মন্তব্য করায় অভিযুক্ত জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ ব্লকের বিডিও প্রশান্ত বর্মণ। মহিলাদের সম্পর্কে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করার অভিযোগও উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। বিডিও বা জেলাশাসক শমাপারভীন সে প্রসঙ্গে মন্তব্য করেননি। তবে ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর।
রাজগঞ্জের নর্থ বেঙ্গল ফার্ম এলাকায় শিকারপুর পঞ্চায়েতের তিন কিলোমিটার মাটির রাস্তা মেরামতির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয় এ দিন। এলাকাবাসীর দাবি, বর্ষায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে এলাকার রাস্তা। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে কার্যত চষা খেতের চেহারা নিয়েছে। গাড়ি, অ্যাম্বুল্যান্স ঢুকতে পারবে না।অবরোধের খবর পেয়ে পুলিশ নিয়ে বিডিও পৌঁছন।
স্থানীয় সূত্রের দাবি, বিক্ষোভে মহিলাদের দেখে বিডিও বলেন, “লক্ষ্মীর ভান্ডার পাচ্ছ, সব পাচ্ছ। রাস্তাও পাবে। বাড়ি যাও, বাড়ি গিয়ে রান্না করো। লক্ষ্মীর ভান্ডার পাচ্ছ। বাড়িতে অনেক টাকা ঢুকছে।” আগুনে ঘি পড়ে। মহিলারা এক সঙ্গে চেঁচিয়ে ওঠেন, “লক্ষ্মীর ভান্ডার চাই না, রাস্তা চাই।’’ অভিযোগ,তখনই বিডিও বলেন, ‘‘লক্ষ্মীর ভান্ডার চাই না তো? আমি কেটে দিচ্ছি।১০০ জনের লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা দিয়ে রাস্তা হয়ে যাবে।” সে কথোপকথনের ভিডিয়ো পরে সমাজমাধ্যমে ছড়ায়।
বিক্ষোভে শামিল এলাকার বাসিন্দা সুমিত্রা রায়ের মতো একাধিক মহিলার ক্ষোভ, “রাস্তা দিয়ে আমরা যেতে-আসতে পারছি না, আর বিডিও এসে কী করে লক্ষ্মীর ভান্ডারের কথা বললেন? আমরা মেয়ে বলে বাড়ি গিয়ে রান্না করার পরামর্শ দেওয়ার অধিকার ওঁকে কে দিয়েছে?”
ব্লক প্রশাসন সূত্রের দাবি, যে রাস্তা নিয়ে বিক্ষোভ, তা মেরামতের খরচ পঞ্চায়েতের তরফে বহন করা সম্ভব নয়। জেলা পরিষদ বা সাংসদ-বিধায়ক উন্নয়ন তহবিলের বরাদ্দ প্রয়োজন। জনতাকে বিডিও সে কথা বার বার বোঝাতে চেষ্টা করেন। কাজ না হওয়ায় মেজাজ হারান। বিডিও শুধু বলেন, ‘‘এই রাস্তা সারাতে হলে জেলা পরিষদ থেকে বরাদ্দ করতে হবে। সে প্রক্রিয়া চলছে।” লক্ষ্মীর ভান্ডারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করতেই তিনি ফোন বন্ধ করে দেন।
এলাকার তৃণমূল বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান খগেশ্বর রায় বলেন, “বিডিওকে ফোন করছি। তবে তাঁর ফোন বন্ধ। কাজেই তিনি কী বলেছেন, সেটা যাচাই করতে পারছি না। তবে বিক্ষোভে বিজেপি নেতারাও ছিলেন। ব্যাপারটা বিজেপির ষড়যন্ত্র।” অভিযোগ উড়িয়ে বিক্ষোভে উপস্থিত বিজেপির কৃষক সংগঠনের জেলা সভাপতি নকুল দাস বলেন, “রাজ্য প্রশাসন যে মানুষকে ভিক্ষুক বলে মনে করে, মহিলাদেরই বা কতটা সম্মানের চোখে দেখে—সবই আজ প্রমাণ হল।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)