Advertisement
E-Paper

পাহাড়ের ছায়া কি শিলিগুড়ি পুরবোর্ডেও, জল্পনা

মেয়রের যুক্তি মানলেও সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে দোষ না খুঁজে স্থায়ী সমাধানের উপরে জোর দেওয়ার কথা ভাবা উচিত বলে মনে করছেন শিলিগুড়ির একাধিক কাউন্সিলর ও বিদ্দজ্জনদের অনেকে।

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৭ ০৯:০০

শিলিগুড়িতে প্রায় হাতে হাত মিলিয়ে পুরবোর্ড চালাচ্ছে বাম-কংগ্রেস। কিন্তু, পাহাড়ে অশান্তির প্রশ্নে বিধানসভায় অশোক ভট্টাচার্য ও শঙ্কর মালাকার বিপরীত মেরুতে চলে গিয়েছেন। তাতেই শিলিগুড়ি পুরবোর্ডের ভবিষ্যৎ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলি তো বটেই, আমজনতার মধ্যেও নানা আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। সরাসরি না হলেও পাহাড়ে শান্তি ফেরাতে আপাতত কার দোষ, সেই ঠেলাঠেলিতে না গিয়ে একমত হয়ে সব দল না এগোলে আদতে কাজের কাজ কতটা হবে, তা নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে। শহরের সব মহল থেকেই দাবি উঠেছে, মতবিরোধ সরিয়ে শান্তি ফেরানোর জন্য সব দলকেই নমনীয় হতে হবে। এমনকী, বামেদের একাংশের পক্ষ থেকেও একান্তে বলা হচ্ছে, পাহাড় ও লাগোয়া সমতলের বাসিন্দাদের ভাবাবেগ এবং সমস্যার কথা মাথায় রেখে এগোলেই ভাল। তাঁদের আশঙ্কা, কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব উত্তরোত্তর বাড়লে পুরবোর্ডও অচল হতে পারে।

প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য অবশ্য দাবি করেন, বিধানসভায় জাতীয় প্রেক্ষাপটকে মাথায় রেখে নিজের মত জানিয়েছেন কংগ্রেসে শঙ্কর মালাকার। অশোকবাবু বলেন, ‘‘জাতীয় প্রেক্ষাপট এবং দেশের নিরাপত্তার কথা মাথায় রাখতে হয়েছে শঙ্করবাবুকে। এর সঙ্গে পুরসভার প্রসঙ্গ টেনে আনার কোনও মানে হয় না।’’ তিনি জানান, পাহাড়ের সমস্যা মেটাতে কেন্দ্র-রাজ্যের তরফে ঘাটতি থাকার বিষয়টিই তাঁরা তুলে ধরেছেন। সেই সঙ্গে রাজ্যের কিছু পদক্ষেপের জন্যই পাহাড়ের পরিস্থিতি যে আচমকা অস্থির হয়ে উঠেছে, সেটাই তাঁরা বোঝাতে চেয়েছেন। অশোকবাবু আরও জানান, আলাদা রাজ্য নয়, পাহাড়-সমতল দুই এলাকার ভাবাবেগের কথা মাথায় রেখেই স্থায়ী সমাধান হওয়া দরকার বলে তাঁরা মনে করেন। অতীতে আলাদা রাজ্যের দাবির বিরোধিতা করতে গিয়ে যে ২০০ জনের বেশি বাম সমর্থক প্রাণ দিয়েছেন, সেটাও মনে করিয়ে দেন অশোকবাবু।

মেয়রের যুক্তি মানলেও সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে দোষ না খুঁজে স্থায়ী সমাধানের উপরে জোর দেওয়ার কথা ভাবা উচিত বলে মনে করছেন শিলিগুড়ির একাধিক কাউন্সিলর ও বিদ্দজ্জনদের অনেকে। যেমন, কংগ্রেস কাউন্সিলর সুজয় ঘটক বলেছেন, ‘‘পাহাড়ের মানুষের আবেগের কথা যেমন মাথায় রাখতে হবে, তেমন সমতলের মানুষের মনে যেন আঘাত না লাগে, সেটাও অশোকবাবুদের মনে রাখতে হবে। এমন কিছু করা উচিত হবে না, যাতে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা উৎসাহিত হয়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘প্রেক্ষাপট আলাদা হলেও বিধানসভা আর পুরসভায় কী হচ্ছে, আমজনতা সে সব দিকেই খেয়াল রাখছেন। তাঁরা সবই বোঝেন।’’ তিনি জানান, কাজেই পাহাড় নিয়ে অযথা রাজনীতি তাঁরা করতে চান না।

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন রেজিস্ট্রার তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজ্যভাগ কখনওই কাম্য নয়। কিন্তু, স্থায়ী স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা তৈরি করা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য যে গড়িমসি করছে, সেটাও ভাল লাগছে না। একে অন্যকে না দুষে সব দলকে একজোট হয়ে সমাধানে আন্তরিক হতে হবে।’’ শিলিগুড়ি পুরসভা প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র হরিসাধন ঘোষ আপাতত সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত নন। তিনিও গোটা ঘটনায় বিস্মিত। তিনি বলেন, ‘‘বাংলা ভাগের দাবি কখনও সম্ভব নয়। কিন্তু, পাহাড়বাসীর ভাবাবেগকেও সম্মান দিতে হবে। ‘ইগো’ ছেড়ে সব দলকে একমত হয়ে সমস্যর সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।’’ তবে সিপিআইয়ের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক উজ্জ্বল চৌধুরী মনে করেন, রাজ্য সরকার যে ভুলক্রুটি করে চলেছে, সেটা উল্লেখ করাটা দায়িত্বশীলতার পরিচয়। তিনি বলেন, ‘‘ভুলকে ভুল বলতে হবে। এই নিয়ে বামেদের নিচুতলায় কোনও ক্ষোভ নেই।’’

Darjeeling Unrest Siliguri Municipal Corporation Ashok Bhattacharya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy