Advertisement
E-Paper

বাড়ি ভেঙে জখম তরুণী

কংক্রিটের চাঙড়ে চাপা পড়ে জখম এক তরুণীকে ভর্তি করানো হয়েছে নার্সিংহোমে। বাড়িটি অন্তত ৮০ বছরের পুরনো বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন। গাছের শিকড় ঢুকে বাড়িটির দেওয়ালের বিভিন্ন অংশ ফাটিয়ে দিয়েছিল। বড় কোনও ক্ষয়ক্ষতি না হলেও ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৭ ০৩:১৩
বিপর্যয়: বাড়ি ভেঙে চাপা পড়েছেন তরুণী। নিজস্ব চিত্র

বিপর্যয়: বাড়ি ভেঙে চাপা পড়েছেন তরুণী। নিজস্ব চিত্র

ভোরবেলা সবে তখন ঘুম ভেঙেছে শহরের। সারারাত তুমুল বৃষ্টির পরে সবে থেমেছে। তখনই হঠাৎ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল একতলা একটি বাড়ি। শনিবার শিলিগুড়ির খালপাড়া এলাকার ঘটনা।

কংক্রিটের চাঙড়ে চাপা পড়ে জখম এক তরুণীকে ভর্তি করানো হয়েছে নার্সিংহোমে। বাড়িটি অন্তত ৮০ বছরের পুরনো বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন। গাছের শিকড় ঢুকে বাড়িটির দেওয়ালের বিভিন্ন অংশ ফাটিয়ে দিয়েছিল। বড় কোনও ক্ষয়ক্ষতি না হলেও ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র অশোক ভট্টাচার্য, পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব দু’জনেই আলাদা সময়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙা নিয়ে পুরসভার উদাসীনতার কারণেই এ দিনের ঘটনা ঘটেছে অভিযোগ করেছেন গৌতমবাবু। অশোকবাবুর পাল্টা দাবি শহর জুড়ে বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

এ দিন সকালে যখন বাড়িটি ভেঙে পড়ে সে সময়ে স্নান করছিলেন এক যুবতী। বিকট শব্দ পেয়ে আশেপাশের বাসিন্দারা ছুটে আসেন। কংক্রিটের চাঙড় সরিয়ে ওই তরুণীকে উদ্ধার করা হয়। সুইটি অগ্রবাল নামে ওই তরুণী একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকা। শনিবার দুপুরে তাঁকে দেখতে প্রধাননগরের নার্সিংহোমে গিয়েছিলেন মন্ত্রী গৌতম দেব।

ভেঙে পড়া বাড়িতে ব্যবসায়ী দুর্গাপ্রসাদ অগ্রবাল এবং তাঁর তিন ছেলে পরিবার নিয়ে থাকতেন। ভেঙে পড়া বাড়ির পাশে থাকা দোতলা বাড়িটিও জরাজীর্ণ। এ দিন পুরসভার তরফে পুরো বাড়িটিকে খালি করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুর্গাপ্রসাদের বড় ছেলে সত্যনারায়ণ অগ্রবাল বলেন, ‘‘আমাদের জন্মের আগে এই বাড়ি তৈরি। যতদূর জানি অন্তত আশি বছর আগে এই ভবন তৈরি হয়েছিল। একটি ভাড়া সংক্রান্ত বিবাদের জেরে পুরনো অংশ ভেঙে নতুন নির্মাণ করা যাচ্ছিল না।’’

পুরসভার বাস্তুকার-রা এ দিন বাড়িটি পরিদর্শন করেছেন। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে পুরনো বাড়িটি নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল। গাছের শিকড় ঢুকে দেওয়াল ফাটিয়ে দেওয়ায় দীর্ঘ দিন ধরে বৃষ্টির জল চুঁইয়ে ক্ষতি হয়েছিল। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে তা আরও নড়বড়ে হয়ে এ দিন ধসে পড়েছে। মেয়র অশোকবাবু বলেন, ‘‘বিপজ্জনক বাড়ির ভাঙার বিষয়ে বোর্ড মিটিং-এ সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে। সেই মতো প্রক্রিয়াও চলছে। নোটিশ বিলিও হয়েছে।’’ পুরসভা এখনই উদ্যোগী না হলে শহরে এরকম আরও বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন শহরবাসী।

মনে হল ভূমিকম্প হচ্ছে

সুইটি অগ্রবাল

বোমা পড়ল নাকি। বিকট শব্দ শুনে কানে তালা লেগে গিয়েছিল প্রায়। তারপর মনে হল ভূমিকম্প হচ্ছে। আমি তখন স্নানের ঘরে। একটি বেসরকারি স্কুলে কয়েকদিন হল চাকরিতে ঢুকেছি। সকাল সকাল বেরোতে হয়। ঘুম থেকে উঠেই স্নানে যাই।

হঠাৎ সিমেন্টের দেওয়াল যেন পিচবোর্ডের মতো নড়ছে। কয়েক মুহূর্ত এ ভাবে কাটল। বুঝতে পারলাম গোটা বাড়িটাই ভীষণ কাঁপছে। এবার বুঝি সবটাই ভেঙে পড়বে। তখনই ধসে পড়ল ছাদটা। চারদিকে হঠাৎ যেন অন্ধকার হয়ে গেল। মনে হল দেওয়ালটাও বোধ হয় টুকরো টুকরো হয়ে মাটিতে নেমে পড়ল। ভয়ে আতঙ্কে চিৎকারও করতে পারছিলাম না। তারপর আর কিছু মনে নেই।

এই ভাবে আমি কতক্ষণ ছিলাম জানি না। যখন চোখ খুললাম চারদিকে অন্ধকারে। শরীরের ওপর ভারী কিছু চেপে বসেছে। মাথায় অসহ্য যন্ত্রণাও হচ্ছে। খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কোনওমতে চেঁচাতে শুরু করি। অনেকক্ষণ কারো সাড়া পাইনি।

তারপর হঠাৎই যেন এক চিলতে আলো দেখতে পেলাম। বুঝতে পারলাম ধসে পড়া দেওয়াল, কংক্রিটের টুকরো সরানো হচ্ছে। কিছু পরেই অনেক অপরিচিত মুখ দেখলাম। আমাকে টেনে বের করেলেন তাঁরা। ভাল ভাবে হাঁটতে পারছি না, হাতে পায়েও খুব ব্যাথা হচ্ছে। দেখি বাবা ভয়ানক আতঙ্ক নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে, দু’চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে।

Earthquake Injured Siliguri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy