Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

অটিজমকে হারিয়ে পরীক্ষায় সফল অতনু

প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে জীবন যুদ্ধের প্রথম ধাপে উত্তীর্ণ হল আলিপুরদুয়ারের অতনু পাল। নজরকাড়া রেজাল্ট না হলেও ‘অটিজম’ রোগে আক্রান্ত ওই কিশোর মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করায় আনন্দিত সকলে।

বাবা-মায়ের সঙ্গে অতনু। ছবি তুলেছেন নারায়ণ দে।

বাবা-মায়ের সঙ্গে অতনু। ছবি তুলেছেন নারায়ণ দে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৪ ০১:৩৪
Share: Save:

প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে জীবন যুদ্ধের প্রথম ধাপে উত্তীর্ণ হল আলিপুরদুয়ারের অতনু পাল। নজরকাড়া রেজাল্ট না হলেও ‘অটিজম’ রোগে আক্রান্ত ওই কিশোর মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করায় আনন্দিত সকলে।

অতনুর বাবা উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার কর্মী রিন্টু পাল বলেন, “প্রথমে কোচবিহারের চিকিৎসকদের দেখিয়েছিলাম। তাঁরা বলেছিলেন, আমার ছেলে কোনও দিন সুস্থ হবে না। জেদ চেপে গিয়েছিল মনে। ছোট থেকে বেঙ্গালুরুতে চিকিৎসক দেখাচ্ছি। ছেলেকে সেখানকার পরামর্শে সাঁতার, গান, তবলা শিখিয়ে ওকে ওর জগৎ থেকে বাইরের জগতে আনার চেষ্টা চলছে।” তিনি জানান, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ‘অটিজম’-এ আক্রান্ত অতনু এক কথায় মানসিক প্রতিবন্ধী। এ বার মাধ্যমিকে ৫৪ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করেছে সে। বাংলায় ৪১, ইংরেজিতে ৩৫, অঙ্কতে ৪৮, পদার্থবিদ্যায় ৬৪, জীবন বিজ্ঞানে ৮৩, ইতিহাসে ৪৬, ভূগোলে ৬১। মোট নম্বর ৩৭৮। ছেলের পাশে থাকার জন্য চাকরি থেকে স্বেচ্ছা অবসরের আবেদন করেছেন রিন্টুবাবু।

এ দিন বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল প্রতিবেদককে দেখে ওই কিশোর দু’হাত মুঠো করে থুতনির সামনে নিয়ে অনবরত মাথা নাড়ছে। অতনুর মা কাবেরীদেবী বলেন, “ও নিজের জগতে থাকতে ভালবাসে। কিছু পছন্দ না হলে ওভাবে রাগ প্রকাশ করে। ৬-৭ বছর বয়েস পর্যন্ত খুব সুন্দর ছবি আঁকত। কিন্তু কোনও দিন আঁকা শেখেনি। আর কিছুতে মন ছিল না। চিকিৎসক পরামর্শ দিলেন, ছবি আঁকা বন্ধ করতে। না হলে বাইরের জগতের সঙ্গে ও মিশবে না। সেই মতো গান, তবলা সাঁতার শেখানো হয়। সব কিছুতেই আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে অনেক এগিয়ে যায়। মূলত ওর বাবা উৎসাহ জুগিয়ে গিয়েছেন। স্কুলের শিক্ষক, মামা ও গৃহশিক্ষকরা অনেক সহায়তা করেছে। এখনও ও বাড়ির বাইরে যায় না। কোনও বন্ধু নেই। রাস্তায় কোনও দিন যেতে দিই না। নিজের মতো চিন্তা করে। চলা ফেরা করে কোনও দুর্ঘটনা ঘটে, সেই ভয়ে পরীক্ষা হলের পাশে আমি দাঁড়িয়ে থেকেছি। মাঝে মধ্যে রেগে যেত। দূর থেকে ইশারায় শান্ত করেছি। ও রাইটারের সাহায্য নেয়নি। অন্য অভিভাবকদের বলব প্রতিবন্ধী সন্তানদের দিকে দৃষ্টি দিতে। ওরাও সাফল্য পাবে।” আলিপুরদুয়ার কলেজিয়েট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “আমাদের স্কুল থেকে অতনু মাধ্যমিক দিয়েছিল। ও পাশ করায় আমরা খুব খুশি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

madhyamik result autism atanu alipurduar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE