Advertisement
E-Paper

অন্ধকারেও স্বপ্ন দেখে তাপসেরা

দৃষ্টি নেই ওদের কারও। তা বলে স্বপ্ন দেখার ইচ্ছেটা কিন্তু কেউই হারায়নি। মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়ে সেটাই যেন প্রমাণ করল কমলা রায়, ভানু বিশ্বাস, তাপস প্রসাদরা।

সৌমিত্র কুণ্ডু

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৪ ০২:২৪

দৃষ্টি নেই ওদের কারও। তা বলে স্বপ্ন দেখার ইচ্ছেটা কিন্তু কেউই হারায়নি। মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়ে সেটাই যেন প্রমাণ করল কমলা রায়, ভানু বিশ্বাস, তাপস প্রসাদরা।

যেমন কমলা। স্কুলে আসার সময় কেউ তাকে অটোতে তুলে দিত। স্কুলের কাছে মোড়ে অটো দাঁড় করিয়ে নেমে পড়ত কমলা। হাতে ধরা ‘স্টিক’ চালিয়েই স্কুলে পৌঁছতে পা বাড়াত। সহপাঠী বা শিক্ষিকারা কখনও তাকে পথে দেখে সঙ্গে করে নিয়ে আসতেন স্কুলে। ক্লাসে শিক্ষিকা পড়া বোঝানোর সময় কিছু লিখে রাখার প্রয়োজন হলে অনেক সময়ই তাড়াহুড়ো করে লেখা সম্ভব হত না দৃষ্টিহীন কমলার পক্ষে। জ্যোতি দত্তর মতো সহপাঠীরা পরে নোটগুলি তাকে লিখে নিতে সাহায্য করত। বৃহস্পতিবার মাধ্যমিকের ফল পেয়ে হাসিতে ভরে উঠল কমলা। শিলিগুড়ি সারদামণি বিদ্যাপীঠের ওই ছাত্রী ৪৮৯ নম্বর পেয়ে পাশ করেছে। কমলার মতো কৃতিত্বের সঙ্গে এ বার মাধ্যমিক পাশ করেছেন তারই মতো দৃষ্টিহীন শিলিগুড়ির নীলনলিনী বিদ্যামন্দিরের আরও দুই ছাত্র। ভানু বিশ্বাস এবং তাপস প্রসাদ। ভানু পেয়েছে ৪৮০ এবং তাপস ৪৩০।

পরীক্ষা বসার জন্য আলাদা করে প্রস্তুতিও নিতে হয়েছে। কেন না পরীক্ষা হলে ওরা উত্তর বলে গিয়েছে। শ্রুতি লিখনে সাহায্য করেছে অন্য কেউ। নানা বাধা টপকে ওদের এই সাফল্যে খুশি শিক্ষক, শিক্ষিকারাও। সারদামণি বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষিকা শাশ্বতী মল্লিক বলেন, “কমলা সাধারণ মেয়েদের সঙ্গে পড়াশোনা করে যে ফল করেছে তা খুবই ভাল। ওকে দেখে অন্যরাও উৎসাহী হতে পারবে। পরেও ও আমাদের স্কুলে পড়াশোনা করতে চায়। ওকে সব রকম ভাবেই সাহায্য করতে চাই আমরা।”

উত্তরবঙ্গের প্রত্যন্ত এলাকা ময়নাগুড়িতে বাড়ি কমলা এবং ভানুর। ভানুর বাড়ি শালবাড়িতে। কমলারা থাকে দিয়ারবাড়িতে। গ্রামে ওদের মতো ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার সুযোগ কম বলে পরিবারের লোকেরা তাদের পাঠান শিলিগুড়ির প্রতিবন্ধীদের স্কুল প্রেরণায়। সপ্তম শ্রেণিতে রামকৃষ্ণ সারদামণি বিদ্যাপীঠে ভর্তি হন কমলা। এ দিন মেয়ের ফল প্রকাশ পাবে বলে মেয়েকে নিয়ে স্কুলে এসেছিলেন মা সরবালা দেবী। কমলার বাবা গেরগেরু দিনমজুর। সরবালা বলেন, “মেয়ে পড়াশোনা শিখলে কিছু করে বাঁচতে পারবে। তাই কষ্ট করে হলেও ওকে পড়াশোনা করাব বলেই ঠিক করি। প্রেরণায় পাঠাই। শালুগাড়ায় প্রেরণার আবাসিক হস্টেলে থেকে ও সারদামণি বিদ্যাপীঠে পড়ছে।” কমলার কথায়, “ইংরেজি নিয়ে পড়ে শিক্ষিকা হতে চাই। শিক্ষাকারা যে ভাবে সাহায্য করেন সেটা সাফল্যের বড় কারণ।”

ভানুও চায় ভবিষ্যতে অধ্যাপনা করতে। তারও প্রিয় বিষয় ইংরেজি। উচ্চ মাধ্যমিকের পর ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে পড়ার ইচ্ছে রয়েছে। ভানু ইংরেজিতে পেয়েছে ৮৬, কমলা ৮৫। প্রেরণায় স্মিতা গুপ্তর কাছেই ইংরেজি শিখে ওই বিষয়ে তাদের ঝোঁক বেড়েছে বলে জানায় দু’ জনেই। ভানুর বাবা রামপদবাবু পেশায় কৃষক। মা সন্ধ্যারানি দেবী গৃহবধূ। ছেলে মাধ্যমিকে ভাল করেছে শুনে তাঁরাও খুশি। তাপসের বাড়ি শিলিগুড়ির ইস্কন মন্দির রোডে। তবে ভানুর সঙ্গে সেও প্রেরণাতেই থাকত। বাবা শ্রবণ প্রসাদ রাজমিস্ত্রি। ছোট বয়সে মাকে হারায় তাপস। ঠাকুমা ভাগীরথী দেবী কোলেপিঠে তাকে মানুষ করেছে। ইতিহাস প্রিয় বিষয়। তাপসও চায় ভবিষ্যতে শিক্ষক হতে। তবে প্রেরণার শালুগাড়ার আবাসিক হস্টেলে মাধ্যমিকের পর ছাত্রছাত্রীদের থাকার সুযোগ নেই সেটাই এ বার পড়াশোনা চালানোর ক্ষেত্রে কমলা, ভানুদের কাছে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

madhyamik result soumitra kundu
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy