Advertisement
E-Paper

অবাধে দখল মাটিগাড়া হাটের জমি

অতীতের মাটিগাড়ায় হাটের জায়গা ছিল বিশাল। প্রায় ২০০ বিঘা। অনেক এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসত হাট। জেলা প্রশাসনের আওতায় ছিল ওই হাট। বহুবার পঞ্চায়েতের হাতে হাটের রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্ব তুলে দেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৪ ০২:১৫
শতাব্দী প্রাচীন মাটিগাড়া হাটের এলাকা ক্রমশই সঙ্কুচিত হচ্ছে। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

শতাব্দী প্রাচীন মাটিগাড়া হাটের এলাকা ক্রমশই সঙ্কুচিত হচ্ছে। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

অতীতের মাটিগাড়ায় হাটের জায়গা ছিল বিশাল। প্রায় ২০০ বিঘা। অনেক এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসত হাট। জেলা প্রশাসনের আওতায় ছিল ওই হাট। বহুবার পঞ্চায়েতের হাতে হাটের রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্ব তুলে দেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। চিঠি চালাচালি হয়েছে। কিন্তু, জেলা প্রশাসনের হাতেই রয়ে গিয়েছে হাটের যাবতীয় দায়িত্ব। তবে সরকারি তরফে অফিসার-কর্মীদের ঢিলেঢালা নজরদারির সুযোগে হাটের জমি দখল হয়েছে। এখনও জমি দখল চলছে বলে অভিযোগ। এলাকার জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই সে কথা মানছেন। গ্রাম পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দশেক আগে হিসেব করে দেখা গিয়েছে হাট বসছে মাত্র ১০ বিঘা এলাকায়। ইদানীং তা কমে তিন বিঘায় নেমেছে।

হাটের জমি তা হলে গেল কোথায়? জমি রয়েছে জমির জায়গাতেই। সেখানে যথেচ্ছ ঘরদোর তৈরি হয়েছে। অভিযোগ, কংগ্রেস আমলে কংগ্রেসের নেতাদের একাংশের মদতে জমি দখল হয়েছে। বাম আমলে সিপিএমের কয়েকজন নেতা এলাকায় ছড়ি ঘোরাতেন। ওই নেতাদের অনুগামীরা নানা এলাকায় জমি দখল করেছেন বলে অভিযোগ। তৃণমূল ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে জমি দখলের প্রবণতা কমে গিয়েছে?

এলাকার প্রবীণ বাসিন্দাদের অনেকেই জানান, তৃণমূল ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে বছরখানেকের মাথায় মাটিগাড়ায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ১০০ একর জমি দখল মুক্ত করে দার্জিলিং জেলা প্রশাসন। তত্‌কালীন জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন কড়া পদক্ষেপ করায় মাটিগাড়ায় জমির দালালদের দৌরাত্ম্য কমবে বলে আশা করেছিলেন অনেকেই। কিন্তু, গত দেড় বছরের জমি সংক্রান্ত মামলার হিসেব বলছে, বরং জমি দখলের প্রবণতা বেড়েছে। ইদানীং মাটিগাড়ায় জমিজমার কারবারের দিকে শিলিগুড়ির কয়েকজন প্রভাবশালী নেতারও নজর পড়েছে বলে অভিযোগ। মাটিগাড়ায় বসবাসকারী একাধিক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মীর আশঙ্কা, অবিলম্বে সরকারি তরফে জমি-মাফিয়াদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা না হলে আগামী দিনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

এ ধরনের আশঙ্কা যে অমূলক নয় তা মানছেন পুলিশ-প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলের জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই। কারণ, এলাকার ভূমিসংস্কার দফতর, বিডিও অফিস কিংবা থানায় গেলেই নানা জমি-জট, জমি-জালিয়াতির অভিযোগ শোনা যায়। যেমন, একজন খ্যাতনামা চিকিত্‌সক ওই এলাকায় প্রায় ১০ বিঘা জমি কিনেছিলেন। তাঁর ইচ্ছে ভবিষ্যতে নার্সিংহোম গড়বেন। তিনি চাকরির সুবাদে নানা জায়গায় ঘোরাঘুরিতে ব্যস্ত থাকায় জমির দিকে নজর দিতে পারেননি। একদিন গিয়ে ওই চিকিত্‌সক দেখেন, তাঁর জমিতে একটি দরমার ঘর বানিয়ে কেউ বসবাস করছেন।

ওই চিকিত্‌সক খোঁজ নিতে গেলে এলাকার কয়েকজন জমির কারবারী, নেতাদের একাংশ মিলে দখলদারের পাশে দাঁড়ান। ওই দখলদারকে ‘ক্ষতিপূরণ’ বাবদ মোটা টাকা না দিলে জমি ছাড়া হবে না বলে জানানো হয়। এমনকী, ওই দখলদারের তরফে জমির নথিও দেখানো হয়। তা নিয়ে ভূমিসংস্কার দফতরের দ্বারস্থ হন চিকিত্‌সক। সেখান থেকে জানানো হয়, উভয় পক্ষের দাবি নিয়ে শুনানি হবে। প্রায় ১০ মাস ধরে টালবাহানার পরে বিস্তর টাকাপয়সা খরচ করে জমির দখল পান চিকিত্‌সক। আবার একজন ব্যবসায়ী জমি কেনার পরে পাঁচিল দিতে গেলে তাঁর কাছ থেকে জবরদস্তি টাকা আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

এমন অভিযোগের বহর যে মাটিগাড়ায় ক্রমশ বাড়ছে তা মানছেন পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের অনেকেই। অতীতে কারলিয়াপ্পন জয়রামন যখন শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার ছিলেন, তখন জমি-সংক্রান্ত গোলমালের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে একটি পৃথক ‘সেল’ খুলেছিলেন। তাতে কাজও হচ্ছিল। এখন সেই ‘সেল’-এর কাজকর্ম কতটা হচ্ছে তা নিয়ে পুলিশের অন্দরেই সংশয় রয়েছে।

অবশ্য জমি-বিবাদ নয়, সরকারি তরফে নানা টালবাহানার ফলেই মাটিগাড়ায় নূন্যতম নাগরিক পরিষেবা কবে মিলবে তা নিয়েও সন্দিহান বাসিন্দারা। এলাকায় সুষ্ঠু নিকাশির ব্যবস্থা হয়নি। পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থাও সর্বত্র হয়নি। রাস্তাঘাটের অবস্থা এখনও বিস্তীর্ণ এলাকায় ভাঙাচোরা। অথচ মাটিগাড়ায় রয়েছে মেডিক্যাল কলেজ। দুটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজও। তবুও মাটিগাড়াকে এখনও পুরসভার আওতায় আনা হয়নি। পৃথক পুরসভা হিসেবে স্বীকৃতির দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়নি। মাটিগাড়ায় দীর্ঘদিন প্রধান ছিলেন যিনি সেই নান্টু বিশ্বাস দীর্ঘদিন বামেদের সঙ্গে ছিলেন। পরে কংগ্রেসে গিয়েছেন। হালে তৃণমূলের সঙ্গে রয়েছেন। ৩টি প্রধান দলের বড় মাপের নেতাদের অনেকেই নান্টুবাবুকে চেনে। সেই নান্টুবাবু বলছেন, “অনেক চেষ্টা করেছি। হাটের জমি দখল আটকাতে পারিনি। জমির কারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বহরও কমানো যায়নি। নিকাশি, পানীয় জল, রাস্তা সহ অনেক পরিষেবা নিয়েই বাসিন্দাদের হয়রানি বাড়ছে।”

রাস্তাঘাট-পানীয় জল-নিকাশির বেহাল দশা নিয়েই পাল্টাচ্ছে মাটিগাড়া। তাতে তেমন ক্ষোভ-বিক্ষোক্ষ নেই। কিন্তু, জঞ্জাল সাফাই ও দূষণের প্রশ্নে মাটিগাড়া যেন ক্ষোভে ফুঁসছে।

(চলবে)

matigara amar sohor kishore saha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy