Advertisement
E-Paper

অভিভাবকহীন পুরসভায় বেহাল সাফাই পরিষেবা, নাকাল জীবন

বিবেকানন্দ রোডে শান্তি কমিটি মোড়। রাস্তার মধ্যেই আবর্জনার স্তূপ। অন্তত দশ ট্রাক আবর্জনা পড়ে রয়েছে। এক গাড়ি নষ্ট চকোলেট-ও ফেলে দিয়েছেন কোনও ব্যবসায়ী। সাত দিন ধরে পড়ে থাকা ওই নষ্ট চকলেটের লোভে ভিমরুল, মৌমাছির দল ঘুরে বেড়াচ্ছে। বর্ষার জল পেয়ে তা পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। যাতায়াত করতে পারছেন না বাসিন্দারা। মাংসের ব্যবসায়ীরা ছেঁটে ফেলা বর্জ্যও ফেলছেন এখানেই। তা পচে দুর্গন্ধে এলাকায় টেকাই দায়ছ।

সৌমিত্র কুণ্ডু

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৪ ০২:১৫
জঞ্জালের দুর্গন্ধে এভাবেই পথ চলতে হয়। শিলিগুড়ির বিবেকানন্দ রোডে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

জঞ্জালের দুর্গন্ধে এভাবেই পথ চলতে হয়। শিলিগুড়ির বিবেকানন্দ রোডে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

বিবেকানন্দ রোডে শান্তি কমিটি মোড়। রাস্তার মধ্যেই আবর্জনার স্তূপ। অন্তত দশ ট্রাক আবর্জনা পড়ে রয়েছে। এক গাড়ি নষ্ট চকোলেট-ও ফেলে দিয়েছেন কোনও ব্যবসায়ী। সাত দিন ধরে পড়ে থাকা ওই নষ্ট চকলেটের লোভে ভিমরুল, মৌমাছির দল ঘুরে বেড়াচ্ছে। বর্ষার জল পেয়ে তা পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। যাতায়াত করতে পারছেন না বাসিন্দারা। মাংসের ব্যবসায়ীরা ছেঁটে ফেলা বর্জ্যও ফেলছেন এখানেই। তা পচে দুর্গন্ধে এলাকায় টেকাই দায়ছ। অতুলপ্রসাদ সরণির লাগোয়া রাস্তায়, প্রণামি মন্দির রোডেও একই অবস্থা। শহরের প্রধান রাস্তা হিলকার্টরোডে ফুটপাথের উপর বাড়ি ভাঙার অংশ, কোথাও আবর্জনা একমাস ধরে পড়ে রয়েছে।

উপরের ছবিগুলি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। শিলিগুড়ি শহর জুড়েই ওয়ার্ডগুলির বিভিন্ন জায়গায় আবর্জনার স্তূপ জমে থাকছে। নিয়মিত তা সাফ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। কাউন্সিলরদের অনেকেই তা নিয়ে বিরক্ত। বারবার আবর্জনা তোলার কথা বললেও সঠিক সময়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আবর্জনা তোলা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। তার উপর শহুরে রোজগার যোজনায় বিভিন্ন ওয়ার্ডে যে সাফাই কর্মী দেওয়া হয়েছিল সপ্তাহ দু’য়েক ধরে তাঁদের তুলে নেওয়া হয়েছে। ওয়ার্ডগুলি থেকে ট্রাকে করে আবর্জনা তুলে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ফেলা অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। সব মিলিয়ে সাফাই পরিষেবা কার্যত ভেঙে পড়ার মুখে।

সোমবার তা নিয়ে পুরসভায় সাফাই বিভাগের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন পুর কমিশনার সোনম ওয়াংদি ভুটিয়া। তিনি বলেন, “সাফাইয়ের ক্ষেত্রে যাতে সমস্যা না হয় তা দেখা হচ্ছে। এ দিন সমস্যা মেটাতে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

বিবেকানন্দ রোডে শান্তি কমিটি মোড়ের বাসিন্দা আসরাফ আলি, সায়রা খাতুন, মেহেমুর নেশারা ক্ষোভ জানান, বাতাস দিলে দুর্গন্ধে বাড়িতে থাকা যায় না। পুর কর্তৃপক্ষকে বারবার বললেও কাজ হয়নি।

বস্তুত, সমস্যার শিকড় রয়েছে গভীরে। গত ২০ মে মেয়র এবং তাঁর পারিষদরা ইস্তফা দেওয়ার পর থেকেই অভিভাবকহীন হয়ে রয়েছে পুরসভা। পুর কমিশনার দেখভাল করলেও মেয়র পদে কেউ না বসায় বা প্রশাসক নিয়োগ না হওয়ায় কোনও সিদ্ধান্ত পুর কমিশনারের পক্ষেও নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সমস্যা নিয়ে সরব হয়েছেন দলমত নির্বিশেষে কাউন্সিলরদের অনেকেই। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মৈত্রেয়ী চক্রবর্তী বলেন, “শহুরে রোজগার যোজনায় ১০ জন সাফাই কর্মী পেতাম। তা সম্প্রতি তুলে নেওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। ডাম্পিং গ্রাউন্ডে আবর্জনা নিয়ে যেতে গাড়ি অনেক দিন আসছেনা। এলেও কোনও দিন আবর্জনা তুলতে এক ট্রিপ দিচ্ছে। কখনও বারবার বলার পর দুই ট্রিপ দিচ্ছে। তাতে সমস্ত বর্জ্য ওয়ার্ড থেকে সরছে না। অতুল প্রসাদ সরণি, ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণের অফিসের সামনে রাজারামমোহন রায় রোডে অনেক জায়গাতেই আবর্জনা জমে থাকছে।” অতুল প্রসাদ সরণির বাসিন্দা অপর্ণা দত্ত, দুধ মোড় এলাকার বাসিন্দা হিতেন সাহাদের অভিযোগ, আবর্জনা রাস্তার ধারে জমে থাকছে। চলাফেরা করতে যেমন অসুবিধা হচ্ছে। তেমনই তা থেকে ছড়াচ্ছে দূষণ।

৭ এবং ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাম কাউন্সিলর রমেশ প্রসাদ এবং শালিনী ডালমিয়া। রমেশবাবু বলেন, “রাতের আবর্জনা ফেলার গাড়ি ঠিক মতো বর্জ্য তুলছে না।” শালিনীদেবী জানান, বরো কমিটিকে বলায় সম্প্রতি তারা লোক পাঠিয়ে ওয়ার্ডের আবর্জনা অনেকটাই পরিষ্কার করেছে।তবে আবর্জনা ওয়ার্ড থেকে নিয়মিত ডাম্পিং গ্রাউন্ডে নেওয়া হচ্ছে না। কংগ্রেস কাউন্সিলর সঞ্জয় পাঠক জানান, শহরের বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াতের সময় আবর্জনা পড়ে থাকার বিষয়টি তাঁরও নজরে এসেছে।

ট্রাফিক পুলিশের অফিসের কাছে চার্চরোডে, সেবক রোডে ১০ নম্বর ওয়ার্ডে একটি মিষ্টির দোকানের কাছে, হিলকার্ট রোডের কয়েকটি জায়গায়, বিধান রোডে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম লাগোয়া রাস্তায় অধিকাংশ দিনই আবর্জনা স্তূপাকারে জমে থাকে। চতুর্থ মহানন্দা সেতুতে ওঠার মুখে, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে গভর্নমেন্ট সমিলের কাছে, শরৎ বসু রোডে এখনও স্তূপীকৃত হয়ে আবর্জনা জমে রয়েছে। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কমল অগ্রবাল বলেন, “একমাস ধরে ফুটপাতের একাংশে বাড়ি ভাঙা আবর্জনা জমে থাকার বিষয়টি নজরে রয়েছে। তা সরাতে পুর কর্তৃপক্ষকে বলেছি।”

কী হচ্ছে

• মেয়র ও মেয়র পারিষদেরা ইস্তফা দেওয়ায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার কেউ নেই।

• নিয়মিত সাফাই না হওয়ায় রাস্তায় পড়ে থাকছে জঞ্জাল।

• জঞ্জালের মধ্যে বৃ্ষ্টির জল জমে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে আশপাশের এলাকায়। n জঞ্জালের মধ্যে বৃ্ষ্টির জল জমে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে আশপাশের এলাকায়।

কেন হচ্ছে

• শহুরে রোজগার যোজনার সাফাই কর্মীদের তুলে নেওয়া হয়েছে।

• ওয়ার্ডগুলি থেকে ট্রাকে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ফেলা অনিয়মিত।

• মেয়র পদে কেউ না বসায় ও প্রশাসক নিয়োগ না হওয়ায় সিদ্ধান্ত নিয়ে পারছেন না পুর কমিশনার।

municipality cleaning service soumitra kundu siliguri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy